প্লেটলেট (platelet count )। ডেঙ্গির বাড়বাড়ন্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই এই প্লেটলেটের বিষয়টি সকলের মাথায় বেশি করে ঘোরাফেরা করে। ডেঙ্গির সবথেকে ভয়াবহ বিষয়টিই হল দ্রুত গতিতে প্লেটলেট কমে যাওয়া। আর এই প্লেটলেট বা অনুচক্রিকা কমে যাওয়া মানেই শরীরে বাইরে ও ভিতরে রক্তক্ষরণের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া।  অনুচক্রিকার স্বাভাবিক মাত্রা দেড় লাখ থেকে সাড়ে চার লাখ। তবে যদি কখনও কাউন্ট ২০ হাজারের নিচে নেমে যায়; তখন ইন্টারনাল ব্লিডিংয়ের সম্ভাবনা থাকে। প্লেটলেট যদি ৫ হাজারের কম হয়; তখন ব্রেন, কিডনি, হার্টের মধ্য রক্তক্ষরণের ভয় থাকে। 


প্লেটলেট যে শুধুমাত্র ডেঙ্গি হলেই কমে এমনটা নয়। অন্যান্য অনেক রোগ-বালাইতেও প্লেটলেট কমে উল্লেখযোগ্য হারে। চিকিৎসকরা বলছেন, শুধু ডেঙ্গি নয়, যে কোনও ভাইরাল ইনফেকশনেই প্লেটলেটের কাউন্ট পড়ে যেতে পারে। এই বিষয়ে বিস্তারিত জানালেন হেমাটোলজিস্ট ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী (Dr. Prantar Chakrabarti , Haematology Specialist) 


ও ডা.অতনু কুণ্ডু (MBBS, MD Medicine )।


ডা. কুণ্ডু জানালেন  রক্তে প্লেটলেট কমতে পারে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে। যেমন - 



  • অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় মহিলাদের প্লেটলেট কমতে দেখা যায়

  • শরীরে ভিটামিনের ঘাটতি হলেও ঘটতে পারে এমন ঘটনা 

  • রক্তে আয়রনের ঘাটতি থেকেও হতে পারে প্লেটলেটে ঘাটতি হয়।

  • এছাড়াও ব্লাড ক্যান্সার, বোন ম্যারো সংক্রান্ত অসুখ, লিভারের বড়সড় সমস্যা, হলেও প্লেটলেট কমে যেতে পারে।

  • এইআইভি হলেও প্লেটলেট কমতে পারে। 

  • অ্যালকোহল সেবনে প্লেটলেট কমতে পারে। 

  • বেশ কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় প্লেটলেট কমে। 

    প্লেটলেট কী করে জানালেন হেমাটোলজিস্ট প্রান্তর চক্রবর্তী

  • রক্তের মধ্যে শ্বেতকণিকা, লোহিত কণিকার সঙ্গে থাকে অনুচক্রিকা। যা,  রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। প্লেটলেট কমে গেলে রক্ত জমাট বাঁধতে অতিরিক্ত সময় নেয়

  •  শরীরের ভিতরে বা বাইরে কোথাও রক্তবাহিকা ক্ষতিগ্রস্ত হলে রক্তপাত শুরু হয়। সেখানে ছুটে আসে অনুচক্রিকা। রক্ত জমাতে সাহায্য করে। 

  • ধীরে ধীরে শরীর থেকে রক্ত বেরিয়ে গেলে শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা, রক্তের অক্সিজেন বহনক্ষমতা কমতে থাকে।

    Platelet সম্পর্কে কিছু অত্যন্ত গুরুত্ব তথ্য সম্পর্কে জানালেন হেমাটোলজিস্ট ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী


  • প্লেটলেটের মাপ শ্বেত কণিকা বা লোহিত কণিকার থেকে অপেক্ষাকৃত কম। অনেক ক্ষেত্রেই অপেক্ষাকৃত ছোট মাপের কণিকা গুলি দেখেই প্লেটলেট ধরে নিয়ে কাউন্ট করা হয়। তাই গড়মিল হয়। হেমাটোলজিস্টরা তাই পরামর্শ দেন, কোনও কারণে, রিপোর্ট নিয়ে সংশয় থাকলে তা বিকল্প পদ্ধতিতে একবার দেখে নিতে হবে। 

  • রক্ত নেওয়ার সময় বেশি খোঁচাখুচি হলে, অনুচক্রিকা সেই জায়গার ক্ষত নিরাময় করতে করতে ছুটে আসে। তখন রক্ত টানলে অনুচক্রিকার পরিমাণ কম দেখাতে পারে। 

  • দেখা গিয়েছে, বাংলা, ঝাড়খণ্ডের মতো কয়েকটি এলাকার মানুষদের অনুচক্রিকার মাপ বড় । platelet র মাপ বড় হলে automated cell counter ভুল করে তাকে লোহিত কণিকা বলে চিহ্নিত করতে পারে ।

  • এ রাজ্যে দেখা গিয়েছে, অনেকের প্লেটলেটের ব্যাস বেশি। তাঁরা ১ লক্ষ ২০ হাজারেরও কম প্লেটলেট নিয়ে দিব্য ঘুরে ফিরে বেড়াচ্ছেন, কোনও অসুবিধে হচ্ছ না। তাই এখানে হেমাটোলজিস্টরা প্লেটলেট কাউন্ট ১ লক্ষের নিচে নেমে গেলে তবেই চিন্তা ভাবনা করেন। 

  • কোনও কোনও ক্ষেত্রে দেখা যায়, কোনও ভাইরাসে আক্রান্ত হলে শরীরের প্রতিরোধ সিস্টেম বা ইমিউনিটি সিস্টেমই , তা নিধন করতে ব্যস্ত হয়। এরপর যখন শরীর ভাইরাস মুক্তও হয়, তখন প্লেটলেটকে ভাইরাস ভেবে নাশ করতে শুরু করে ইমিউনিটি সিস্টেম। যাকে চিকিৎসা শাস্ত্রের ভাষায় বলে Immune Thrombocytopenia.  এর যথাযথ চিকৎসা লাগে। করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পরে এরকম ঘটনা অনেকেরই ঘটেছে। করোনা ভাইরাস ভেবে প্লেটলেট ধ্বংস করেছে শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম। এর ফলে প্লেটলেট কাউন্ট কমে যায়। রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটে।

  • ডেঙ্গির ক্ষেত্রে ভাইরাস প্লেটলেট তৈরি হতে বাধা সৃষ্টি করে , আবার ইমিউনিটি সিস্টেম ভুল করে প্লেটলেট নষ্ট করে দিতে পারে। তখনই সঙ্কটটা বড় হয়ে দেখা দেয়।


    হেমাটোলজিস্ট ডা. প্রান্তর চক্রবর্তী


    ডা.অতনু কুণ্ডু