কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, উজ্জ্বল মুখোপাধ্যায় ও সন্দীপ সরকার, কলকাতা : পুজোয় লাগামছাড়া ভিড়...হু হু করে বাড়ছে করোনা! এই চরম দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের জন্যই কি স্কুল খোলার সম্ভাবনা ধাক্কা খেতে পারে?
এটাই এখন সবচেয়ে বড় প্রশ্ন!


পাঁচ বছরের ছোট্ট অনহিতা দেড় বছর আগে সাউথ পয়েন্টে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু, এই দেড় বছরে একদিনও সে স্কুলে যেতে পারেনি। করোনার কোপে বহু শিশুরই এখন এই অবস্থা। 
প্রায় ঊনিশ মাস ধরে বাড়িতে বন্দি পড়ুয়ারা। ক্লাস হচ্ছে অনলাইনে। কিন্তু, অনলাইন শিক্ষা কখওনই স্কুলের বিকল্প হতে পারে? 


ঢাকুরিয়ার বাসিন্দা অভিরূপ সেন যখন ক্লাস ওয়ানে পড়ে, তখন স্কুল বন্ধ হয়েছিল। তারপর থেকে স্কুলে না গিয়ে, এখন সে ক্লাস থ্রি-তে। কিন্তু, এভাবে আর কতদিন?
 পড়ুয়ারাই বলছে, করোনার জন্য বাড়িতে আটকে পড়ে আর ভাল লাগছে না। স্কুলে গিয়ে যা আনন্দ, কোথাও নেই। অনলাইনে মজাই হয় না। 


উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার্থী সমৃদ্ধি গুহঠাকুরতা ভেবেছিল, পুজোর পর স্কুল খুলতে পারে। কিন্তু, পুজোয় জনপথে জনসমুদ্রের পর যেভাবে করোনা বাড়ছে, তাতে আশা বদলে গেছে আশঙ্কায়। দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া সমৃদ্ধি গুহঠাকুরতা বলেন, পুজোয় যা ভিড়, আমি তো বেরোইনি। এই আশায় বেরোইনি, যদি স্কুলে যেতে পারি। উচ্চমাধ্যমিকের তারিখটা জানতে পারছি না। কেস বাড়ছে। কষ্ট হচ্ছে। আর হয়তো স্কুলেই যেতে পারব না। 


স্কুল খোলা পিছিয়ে যাওয়ার এই আশঙ্কার জন্য সাধারণ মানুষের অসচেতনতাকেই দায়ী করছেন চিকিৎসকরা। শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অনিরুদ্ধ ঘোষের দাবি, পুজোয় যা দেখলাম, তাতে বুঝতে পারছি না, অভিভাবকরা শিশুদের ভাল চান, না খারাপ চান !! এক শিশু আইসিইউতে ছিল। ষষ্ঠীতে ছুটি পেয়ে দশমীতে আবার হাসপাতালে এসেছে। 


শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জয়দেব রায়ের মতে আবশ্য সব যখন হচ্ছে, স্কুল খোলা উচিত। ICSE, ISC’র ২০২১-২২ সালের প্রথম সিমেস্টারের পরীক্ষা ইতিমধ্যে স্থগিত করে দেওয়া হয়েছে। CBSE ঘোষণা করেছে, ১৭ নভেম্বর থেকে অফলাইনে মাইনর বিষয়গুলোর পরীক্ষা নেওয়া হবে। 

কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে স্কুল কর্তৃপক্ষ উদ্বিগ্ন। মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, পুজোর পর করোনা-পরিস্থিতি দেখে স্কুল খোলার ভাবনা রয়েছে।  কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে কি আদৌ পুজোর ছুটির পর স্কুল খুলবে? স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে নবান্ন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু এনিয়ে মন্তব্য করতে চাননি।