কলকাতা: শ্রাবণী আবহাওয়া। বৃষ্টির দাপটে কমতি নেই। সেই সঙ্গে রয়েছে ভ্যাপসা গরমও। গরম অথচ ভেজা আবহাওয়ায় এই সময় চামড়ায় নানারকম সমস্যা দেখা যায়। সেই সঙ্গে বা়ড়ে চুল ওঠার সমস্যাও। তার জন্য অনেকটাই দায়ী এই  স্যাঁতস্যাঁতে আবহাওয়া। বর্ষাকালে চামড়ায় কী কী সমস্যা প্রকট হয়, জানালেন  চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. অভিষেক দে। বর্ষাকালে নানা কারণে ভোগায় বিভিন্নরকম ফাঙ্গাল ইনফেকশন। তার মধ্যে কোনটির কী উপসর্গ, চিকিত্সাই বা কী, জানালেন তিনি। 



সেবরিক ডার্মাটাইটিস (Seborrheic Dermatitis) : বর্যায় মাথার ত্বকে চটচটে খুশকির মতো সমস্যা হয়। সেই সঙ্গে চুলকানিও। যা থেকে রক্ত বের হওয়ার অভিজ্ঞতাও আছে অনেকের। এটি কিন্তু আদতে একপ্রকার স্কিন এগজিমা। যা বর্ষায় বাড়ে। এই সমস্যা কোনওভাবেই অবহেলা করার নয়। সাধারণ খুশকি ভেবে বাজার চলতি অ্যান্টি ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে সারানোর বিষয়ও নয়। অবশ্যই স্কিনে লাগানোর মলমের সঙ্গে প্রয়োজন ওরাল মেডিসিনও। সেই সঙ্গে ত্বকে তৈলাক্ত কিচ্ছু লাগানো যাবে না, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। খার-যুক্ত সাবান , শ্যাম্পু ব্যবহার নৈব নৈব চ। বিজ্ঞাপনী চমকে বিউটি প্রোডাক্ট না কিনে সরাসরি ডাক্তারের কাছেই যেতে হবে বাড়াবাড়ি হওয়ার আগে। 

ক্রনিক সুপারফিসিয়াল ফলিকুলাইটিস অফ স্ক্যাল্প : ( Chronic Superficial Folliculitis of Scalp) বাচ্চাদের এই রোগ থেকে সমস্যা বেশি হয়। ছোট ছোট ফোঁড়ার মতো হয় মাথায়, তাতে পুঁজও থাকে। যা খুবই যন্ত্রণাদায়ক। ওষুধ, অ্যান্টিইনফ্লামেটরি অ্যান্টিফাঙ্গাল সলিউশন ও ওষুধ খেয়ে সমস্যার উপশম হয়। কিন্তু দোকান থেকে আন্দাজে ওষুধ কিনে খেয়ে সারানোর চেষ্টা না করাই মঙ্গল। 

টিনিয়া ক্যাপিটিস (tinea capitis) : মাথার মধ্যে ছোট ছোট প্যাচ। যেখান থেকে চুল উঠে যায়। সেই সঙ্গে অসম্ভব মাথা চুলকায়। এটিও এক ধরনের ফাঙ্গাল ইনফেকশন। যা কিনা বাচ্চাদের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে চিকিত্সকরা দায়ী করলেন মাথায় নানারকম তেল মাখাকে। নারকেল তেল বা সরষের তেল, মাথার ত্বকে না মেখে চুলে লাগালে ক্ষতি নেই। তবে তেল দেওয়ার অভ্যেস ফাঙ্গাল ইনফেকশন বাড়তেই পারে। 

পিম্পল বা অ্যাকনে (Acne): এখন ১২-১৩ বছর বয়স থেকেই শুরু হয় অ্যাকনের সমস্যা। চলে অনেক বেশ বয়স অবধি। শুধু মুখে হয়। পিঠ, গলা, হাত সব জায়গায় দেখা যায়। অ্যাকনের প্রবণতা কম হলে কিছু লাইফস্টাইল পরিবর্তনের মাধ্যমেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে। যেমন, ওজন ঝরানো, মিষ্টি জাতীয় খাবার কম খাওয়া, আইসক্রিম, কোল্ড ড্রিঙ্ক খাওয়া নিয়ন্ত্রণ, দুধজাতীয় খাবার কমাতে হবে। এছাড়া যাঁরা আগুনের তাপে রান্নাবান্না করেন, তাঁদেরও অ্যাকনের সমস্যা বাড়ে। অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ওষুধ, লোশনের সঙ্গে কিছু খাওয়ার ওষুধও দেন ডাক্তাররা, যা শরীরেই তৈল ক্ষরণ কমাতে সাহায্য করে। ইদানীং পিঠেও গুড়ি গুড়ি অ্যাকনেও দেখা যায়। 

পেরিপোরাইটিস (Periporitis) : বর্ষায় বাচ্চাদের মুখ ও শরীরে ছোট ছোট যন্ত্রণা দায়ক ফোঁড়া হয়। এগুলিকে অনেকেই মনে করেন আম খাওয়ার কারণে হয়। তবে সেটা এক্কেবারে ভুল ধারণা। কারণ আম খাওয়া শরীরের জন্য ভীষণই ভাল। বারবার এই সিম্পটম হলে অবশ্যই ওষুধ খেতে হবে। অ্যান্টি বায়োটিক ট্যাবলেট ও ক্রিম দিতে হবে। 

ছুলি: শরীরের বুক,পিঠ,গলা,হাত ও অন্যান্য উন্মুক্ত অংশে বেশি দেখা যায়।তবে কোন কোন সময় বিশেষ করে শিশুদের ক্ষেত্রে মুখেও দেখা দিতে পারে। এটাও ফাঙ্এগা ইনফেকশন। তেলের কারণে সমস্যা বাড়ে। তাই তেল মেখে স্নান করা এড়িয়ে চলা ভাল। শরীরের যেসব স্থানে ঘাম বেশি হয়,সেসব স্থান বারবার ধুয়ে পরিষ্কার ও শুকনো রাখা, গরমের দিনে রোজ একাধিক বার স্নান করা দরকার। এছাড়া ওষুধ তো খেতেই হবে। ঘামে ভেজা পোশাক বেশিক্ষণ পরে থাকা যাবে না। এছাড়াও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ঘামাচির মতো সমস্যা এই আবহাওয়ায় খুবই কমন। এই সব সমস্যা এড়াতে হালকা জামাকাপড় পরা, ঠাণ্ডা জাতীয় খাবার খাওয়া, ক্যালামিন লোশন লাগানো, ইত্যাদি ঘরোয়া টোটকাতেও উপকার হতে পারে। 

এছাড়াও বেশ কতগুলি গুলি সমস্যা সারা বর্ষাকাল খুবই কষ্ট দেয়। আলোচনা করা হবে সেগুলি নিয়েও পরবর্তী পর্বে।