ঝিলম করঞ্জাই ও সন্দীপ সরকার, কলকাতা : করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে ভারতে। এখনও পর্যন্ত দেশে, সংক্রমিতর সংখ্যা ৩ কোটি ছাড়িয়ে গিয়েছে। মৃত্যু হয়েছে প্রায় সোয়া চার লক্ষ মানুষের এই অবস্থায় কত জনের শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে অর্থাৎ, কত জন সংক্রমিত হয়েছিলেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান পেতে চতুর্থ দফায় সেরো সার্ভে করে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ বা ICMR।
সাধারণ মানুষ ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে জুন-জুলাইয়ে এই সার্ভে করা হয়। তাতে বাংলার পাঁচটি জেলার রিপোর্ট সামনে এসেছে। আলিপুরদুয়ার, দক্ষিণ ২৪ পরগনা, বাঁকুড়া, পূর্ব মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার যে সমীক্ষা রিপোর্ট এসেছে, তাতে দেখা যাচ্ছে অর্ধেকের বেশি মানুষ সংক্রমিত হয়েছিলেন।
অন্যদিকে, রাজ্যে সংক্রমণের হার কত তা জানতে এই মাসে সেন্টিনাল সার্ভেইল্যান্স করে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর। ১১ হাজার ২০০ জনের নমুনা নিয়ে করা পরীক্ষায় দেখা যায় সংক্রমণের হার ১.০৫ শতাংশ।
করোনার তৃতীয় ঢেউয়ে বাচ্চারা বেশি আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। এই প্রেক্ষাপটেই দেশজুড়ে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে ভারত বায়োটেক এবং জাইডাস ক্যাডিলা, দুই ভারতীয় সংস্থার তৈরি করোনা ভ্যাকসিনের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে জোরকদমে। এরমধ্যে পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে চলা জাইডাস ক্যাডিলার করোনা ভ্যাকসিন জাইকোভ ডি-র ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে তাৎপর্যপূর্ণ তথ্য উঠে এসেছে। ICH-এর বক্তব্য, তাদের এখানে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের মধ্যে যে ট্রায়াল হয়েছে, তার মধ্যে ৫৩ শতাংশের শরীরেই মিলেছে করোনার অ্যান্টিবডি!
দেশে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী, প্রায় দেড় হাজার জনের ওপর জাইডাস ক্যাডিলার তৈরি জাইকভ ডি-র তৃতীয় পর্যায়ের ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। এ রাজ্যে সেই ট্রায়াল চলছে পার্ক সার্কাসের ইনস্টিটিউট অফ চাইল্ড হেলথে। প্রথমে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী ৮৫ জন এই ট্রায়ালে অংশ নেওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে। সংস্থার তরফে শর্ত ছিল, পরিবারের কোনও সদস্য আগে করোনা আক্রান্ত হলে বা ট্রায়ালে ইচ্ছুক করোনা আক্রান্ত হলে বা শরীরে করোনার অ্যান্টিবডি থাকলে ট্রায়ালে অংশ নেওয়া যাবে না। সেইমতো ৮৫ জনেরই RTPCR এবং অ্যান্টিবডি টেস্ট করানো হয়। আর সেখানেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। চিকিত্সকদের দাবি, ৮৫ জনের মধ্যে ৪৫ জনের শরীরেই করোনার অ্যান্টিবডি মিলেছে।
অর্থাত্ ট্রায়ালে অংশ নিতে ইচ্ছুক ৫৩ শতাংশ আগেই নিজেদের অজান্তে করোনা আক্রান্ত হয়েছিলেন।
ভবিষ্যত পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে শিশু চিকিৎসায় পরিকাঠামো বৃদ্ধির সঙ্গে চিকিত্সার সময় তাদের ডায়েটের ওপরও জোর দিচ্ছে স্বাস্থ্য দফতর। এ বিষয়ে একটি নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। তাতে ১ থেকে ৫ বছর এবং ৫ থেকে ১২ বছর বয়সীদের জন্য দু’ধরনের ডায়েট দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। বাচ্চাদের খাওয়া-দাওয়ায় নজর দিতে ডায়েট চার্টে পরিবর্তনের সঙ্গে বরাদ্দও বাড়ানো হয়েছে।