কলকাতা : আঙ্কেল পজারের কথা মনে আছে ? সাহিত্যিক জেরম ক্লাপকা জেরমের সৃষ্টি সেই বিখ্যাত চরিত্র। যিনি নিজের পরিধানের কোট খুলে রাখার পর ভুলে যেতেন। তারপর গোটা ঘরকে মাথায় তুলতেন। শেষমেশ নিজেই 'আবিষ্কার' করতেন যে, কোটটির ওপর তিনি বসেছিলেন। শুরুটা অনেকটা এরকমই হয় অ্যালজাইমার রোগের ক্ষেত্রেও। কিছু আগেই হয়ত কোনও বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বা কোনও জিনিস বাড়ির কোথাও নামিয়ে রেখেছেন, পর ক্ষণেই সে সম্পর্কে পুরো ভুলে যান এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি। সময়ের সাথে সাথে স্মৃতিভ্রংশ বাড়ে। নিজের পরিবারের সদস্য, বন্ধুবান্ধবদের পর্যন্ত ভুলে যেতে পারেন। অনেক বেশি ঘুম, কারও সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের ক্ষমতা হারিয়ে ফেলার মতো সমস্যাও দেখা দেয়।


অ্যালজাইমারের নামকরণের ইতিহাস


চিকিৎসক অ্যালোস অ্যালজাইমারের নাম অনুসারে অ্যালজাইমার রোগের নামকরণ করা হয়েছে। ১৯০৬ সালে অ্যালজাইমার এক মহিলার মস্তিষ্কের টিস্যুতে পরিবর্তন লক্ষ্য করেছিলেন( যিনি অস্বাভাবিক মানসিক রোগে মারা গিয়েছিলেন)। তাঁর লক্ষণগুলি ছিল- স্মৃতিশক্তি হ্রাস, ভাষার সমস্যা এবং অদ্ভুত আচরণ। ওই মহিলার মৃত্যুর পর, চিকিৎসক অ্যালজাইমার তাঁর মস্তিষ্ক পরীক্ষা করেন এবং একাধিক অস্বাভাবিক বিষয় দেখেন যাকে চিকিৎসার পরিভাষায় অ্যামাইলয়েড প্লেক এবং নিউরোফাইব্রিলারি বলা হয়।


অ্যালজাইমারের কারণ


স্মৃতিশক্তি হ্রাস পাওয়া হচ্ছে অ্যালজাইমারের প্রাথমিক লক্ষণ। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে ডিমেনশিয়া বা স্মৃতিভ্রংশের মূল কারণ অ্যালজাইমার। এটি এক ধরনের মস্তিষ্কের রোগ। যা ধীরে ধীরে স্মৃতিশক্তি বা চিন্তাভাবনার শক্তিকে ধ্বংস করে দেয়। অবশেষে সহজ কাজগুলি করার ক্ষমতাও চলে যায়। 


আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেল্থ-এর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন এজিং এর তথ্য অনুসারে, অ্যালজাইমারের সম্ভাব্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে- মস্তিষ্কের বয়সজনিত পরিবর্তন; এর পাশাপাশি রয়েছে- জেনেটিক, পরিবেশগত এবং জীবনশৈলীর মতো কারণগুলি। বার্ধক্য- এই রোগের অন্যতম ঝুঁকির কারণ। এনআইএ রিপোর্ট বলছে, ৬৫ বছরের বেশি বয়স্কদের ক্ষেত্রে প্রতি ৫ বছর অন্তর অ্যালজাইমার আক্রান্তের সংখ্যা দ্বিগুণ হচ্ছে। ৮৫ বছর বা তার বেশি বয়সের প্রায় এক তৃতীয়াংশ মানুষের অ্যালজাইমার রোগ হতে পারে।


অ্যালজাইমারে আক্রান্তের লক্ষণ


অ্যালজাইমারে আক্রান্ত বা তাঁর পরিবার ধীরে ধীরে বুঝতে পারেন যে, কিছু একটা অস্বাভাবিক পরিবর্তন হচ্ছে। এর লক্ষণগুলি হল-


স্মৃতিশক্তি হ্রাস - অ্যালজাইমারের অন্যতম লক্ষণ। বিশেষ করে এই রোগের প্রাথমিক অবস্থায়। কিছু আগে হওয়া কোনও জিনিস ভুলে যেতে পারেন। কারও নাম ভুলে যাওয়া, গুরুত্বপূর্ণ কাজ ভুলে যাওয়া বা তারিখ, একই প্রশ্ন বারবার করার মতো সমস্যা দেখা দেয়। যার ফলে পরিবারের সদস্যদের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ে। 


স্থান-কাল নিয়ে বিভ্রান্তি - এই রোগে আক্রান্তের সময়, তারিখ, মরশুম-প্রভৃতি ভুলে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এমনকী কোথায় আছেন বা কীভাবে সেখানে গেলেন-তা নিয়েও বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন।


কথা বলা বা লেখায় সমস্যা - কোনও বিষয় বুঝতে বা আলোচনায় যোগ দিতে সমস্যা দেখা দিতে পারে। কোনও আলোচনার মাঝেই থেমে যাওয়া বা একই কথা বারবার আওড়ে যাওয়ার মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। 


মেজাজের পরিবর্তন - অ্য়ালজাইমারে আক্রান্ত বিভ্রান্ত, সন্দেহ করা, হতাশ, ভীত বা চিন্তিত হয়ে পড়েন। 


রোজের কাজ শেষ করার সমস্যা - রোজের কাজ শেষ করতে সমস্যা হয়। এমনকী পরিচিত জায়গায় যাওয়া, মুদির জিনিস গুছিয়ে আনা বা টিভি চালানোর মতো সাধারণ কাজ করতেও বেগ পেতে হয়।


অ্যালজাইমার রোগ-প্রতিরোধে কী খাবেন ?


এই রোগের চিকিৎসা কঠিন। তবে, কিছু পুষ্টিকর খাবার এই রোগের মোকাবিলায় সহায়ক হয়ে উঠতে পারে। 



  • বেরি, ব্রোক্কলি এবং ফুলকপি খাওয়া মস্তিষ্কের জন্য ভাল। এগুলি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন বাড়িয়ে তুলবে। 

  • প্রচুর পরিমাণে ওমেগা -৩ ফ্যাট ব্রেনের স্বাস্থ্য ভাল রাখে। স্যালমন, টুনা, ম্যাকরেল, সার্ডিন মাছ - এই ফ্যাটে সমৃদ্ধ। মাছের তেলও এক্ষেত্রে উপকারী।

  • বাদাম ও বেরি : বাদাম ও বেরি মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের পক্ষে ভাল। মস্তিষ্ক ভালভাবে কাজ করার জন্য ব্লুবেরি ও স্ট্রবেরির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।