কলকাতা : ৩০-৩৫ বছর বয়সের পর থেকে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা চোখে পড়ার মতো বেড়েছে। আর এই প্রবণতা বেশি বেড়ে গিয়েছে কোভিড কালে। স্ট্রোক মানে মস্তিষ্কের কোনও অংশে হঠাৎ রক্ত সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যাওয়া। এর ফলে সেই অংশে আর অক্সিজেন পৌঁছোয় না। অক্সিজেনের অভাবে মস্তিষ্কের সেই অংশের কোষগুলির মৃত্যু হয়। আমাদের মস্তিষ্কের বিভিন্ন অংশ কোনও না কোনও কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে। কোনও অংশের কোষের মৃত্যু হলে, সেই অংশের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত কাজ করার ক্ষমতা চলে যায়। কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর কমবয়সীদের মধ্যেও Blood Vessel Occlusion Stroke বা Venous Occlusion Stroke বেশি দেখা যাচ্ছে। এটা কিছুটা কোভিডের ফলে হওয়া ভ্যাসকুলোপ্যাথির (vasculopathy) জন্যই হচ্ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। কোভিড থেকে সেরে ওঠার পর অনেকেই বাড়ি থেকে কাজ করছেন। হাঁটাচলা কমে গিয়েছে। শারীরীক পরিশ্রম হচ্ছে না। যার ফলে ওজনও বাড়ছে, চিকিৎসকের মতো যা স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়িয়ে দিচ্ছে। কোন কোন বিষয়ে সতর্ক থাকলে স্ট্রোক হওয়া থেকে কিছুটা বাঁচানো যাবে নিজেকে, আলোচনা করলেন ডা. শুভমিত্র চৌধুরী (Assistant Professor, Neurosurgery, IPGME&R Kolkata and Bangur Institute of Neurosciences)।
ডা. শুভমিত্র যদিও মনে করেন, আগের থেকে এই অসুখ নিয়ে কিছুটা সচেতনতা বেড়েছে। আগের থেকে পরীক্ষা বেশি হচ্ছে। সিটি স্ক্যান, এমআরআই সেন্টারও যেমন বেড়েছে, তেমনই খরচও কমেছে পরীক্ষার। তাই আগে অনেকক্ষেত্রেই স্ট্রোক হলেও, ধরা পড়ত না, সেই ধরনের ঘটনা কমেছে। তাই সংখ্যার দিক থেকে স্ট্রোক আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। ঠিক কোন কোন কারণে বাড়ছে স্ট্রোকের প্রবণতা ? জানালেন, ডা. শুভমিত্র চৌধুরী।
- হাইপার টেনশন বা হাই ব্লাড প্রেসারের প্রবণতা স্ট্রোকের অন্যতম কারণ
- ধূমপান বা অতিরিক্ত মদ্যপান উচ্চ রক্তচাপের প্রবণতা বাড়ায়
- ক্যাফাইন জাতীয় পানীয় বেশি খাওয়াও রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়, যা স্ট্রোকের অনুঘটক।
- ব্লাড প্রেসার কিন্তু মাসে একবার নয়, দিনে ২-৩ বার বাড়িতেই মাপতে হবে। খাতায় নোট রাখতে হবে। ডাক্তারবাবুকে BP-র তালিকা জানাতে হবে।
- কোলেস্টেরল আর লিপিড প্রোফাইল মাপতে হবে বছরে বার দুয়েক তো বটেই।
- মাদক সেবনে স্ট্রোকের প্রবণতা বাড়ে।
- অতিরুক্ত মেদ জমতে দেওয়া যাবে না শরীরে। জাঙ্ক ফুড খাওয়া কমাতে হবে।
- রোজ আধঘণ্টা হাঁটাচলা করতেই হবে
আপনার পরিবারে কি স্ট্রোকের ইতিহাস আছে ? তাহলে সাবধান ! - পূর্বপুরুষদের স্ট্রোক হয়ে থাকলে কম বয়স থেকেই সতর্ক হতে হবে।
- জানতে হবে, পরিবারের অন্যদের স্ট্রোক হয়েছিল কেন। সেই কারণটি জানা থাকলে আগে থেকে চিকিৎসা করা যেতে পারে ।
- কোনও উপসর্গকেই অবহেলা করা যাবে না। মাইল্ড স্ট্রোক হলেও তার চিকিৎসা করতেই হবে।
- হাইপারটেনশন থাকলে বাড়তি সতর্কতা নিতে হবে কম বয়স থেকেই।
- ব্লাড সুগার ধরা পড়লে সতর্কতা বাড়তে হবে ।
- উচ্চ রক্তচাপের রোগী না হলে যে স্ট্রোক হতে পারে না, এমন ভেবে নেওয়ার কারণ নেই। পরিবারে স্ট্রোকের ইতিহাস থাকলে সতর্ক থাকতেই হবে ।
পরিবারে স্ট্রোকের ইতিহাস থাকলে, কিছু কিছু আগেভাগে পরীক্ষা করিয়ে নিলে অনেকটাই নিশ্চিন্ত থাকা যায়। সময় থাকতে চিকিৎসা করিয়ে খানিকটা নিরাপদ থাকা যায়। ডা. শুভমিত্র চৌধুরী জানাচ্ছেন, - ব্লাড প্রেসার
- লিপিড প্রোফাইল
- সিআরপি
- ইসিজি
এই পরীক্ষাগুলি ৩৫ বছরের বেশি বয়সীদের নিয়ম করে বছরে ১-২ বার করানো প্রয়োজন। তাহলে বংশগত ভাবেও স্ট্রোকের সম্ভাবনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব।
ডা. শুভমিত্র চৌধুরী