টরন্টো: করোনা পরিস্থিতিতে সারা বিশ্বের মানুষই উদ্বিগ্ন। সবাইকেই সাবধানতা অবলম্বন করার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। পরিসংখ্যান বলছে, করোনার সঙ্গে অন্য কোনও রোগ থাকলে বিপদ বেশি। সেই কারণে এই সময় সুস্থ জীবনযাপন এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করা উচিত সবারই। বিশেষ করে যে মহিলাদের হৃদযন্ত্রের সমস্যা আছে, তাঁদের শারীরিকভাবে সুস্থ থাকার জন্য জীবনযাত্রায় কিছু বদল আনা উচিত। এমনই মনে করছেন গবেষকরা।


কানাডার ওটায়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক জেনিফার রিড জানিয়েছেন, ‘মহিলাদের অন্য সবকিছুর চেয়ে নিজেদের সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। আধুনিক জীবনে মহিলাদের একাধিক পরিবার, সমাজ, সামাজিক ও পেশাগত চাহিদা পূরণ করতে হয়। এর ফলে অনেকেই নিজেদের যত্ন নেওয়ার সময় পান না। কিন্তু মহিলাদের হৃদযন্ত্রের সমস্যা যাতে না হয়, সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতেই হবে। বিশ্বজুড়ে মহিলাদের মৃত্যুর একটি বড় কারণ হল হৃদরোগ। ২০১৫ সালে যত মহিলার মৃত্যু হয়েছিল, তাঁদের এক-তৃতীয়াংশেরই মৃত্যুর কারণ ছিল হৃদরোগ। সুস্থ থাকার জন্য মহিলাদের ব্যায়াম, যোগাসন করা উচিত। এছাড়া তাঁদের ধূমপান করা উচিত নয়, সুস্থ জীবনযাপনের বিষয়ে শিক্ষা নেওয়া উচিত এবং মানসিকভাবে তরতাজা থাকার চেষ্টা করা উচিত।’

ইউরোপের একটি পত্রিকায় ওটায়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। এই গবেষণায় মহিলাদের শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, জীবনযাত্রার মান বাড়ানো, মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি, লড়াই করার ক্ষমতা বাড়ানো এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর কথা বলা হয়েছে। গবেষকরা জানিয়েছেন, পুরুষদের তুলনায় ১০ থেকে ২০ শতাংশ কম মহিলা হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর জন্য উপযুক্ত ব্যায়াম করেন। পুরুষদের ব্যায়াম ছেড়ে দেওয়ার হার যেখানে ২৯ শতাংশ, সেখানে মহিলাদের ক্ষেত্রে হার ৩৫ শতাংশ। অথচ মহিলারা অন্তত ৭০ শতাংশ ব্যায়ামের ক্লাসে যান। গত এক দশকে মহিলাদের উপর গবেষণা অনুযায়ী, অনেকরকম মানসিক ও সামাজিক বাধার কারণেই মহিলারা ব্যায়ামের ক্লাসে যান না বা হঠাৎ যাওয়া বন্ধ করে দেন। অনেক মহিলাই মনে করেন, ব্যায়াম একান্তভাবে পুরুষদের বিষয়। আবার অনেকে মনে করেন, তাঁদের দৈনন্দিন সময় অনুযায়ী ব্যায়ামের ক্লাস হয় না, যে ধরনের ব্যায়াম করানো হয়, সেটা তাঁদের প্রয়োজনীয় বিষয় নয়। কোনও কোনও মহিলা মনে করেন, এই ধরনের ব্যায়াম তাঁদের পক্ষে কঠিন। কেউ কেউ আবার মনে করেন, তাঁদের আরও কঠিন ব্যায়াম দরকার। মহিলারা সাধারণত সামাজিকভাবে সমর্থন পান না এবং তাঁরা মনে করেন, পরিবারকে অবহেলা করে ব্যায়ামের ক্লাসে যাওয়া উচিত নয়।

গবেষকদের মতে, মহিলাদের কাছে ব্যায়ামের বিষয়টি আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য জুম্বা, ফুটবল, একসঙ্গে হাঁটা, তাই চি, কিগং, প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে ব্যালান্সিং এক্সারসাইজ ও নাচের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বয়স্ক মহিলারা বাড়িতে রোজকার কাজের মাধ্যমেও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকতে পারেন। তাই মহিলাদের অবশ্যই নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত।