নয়াদিল্লি: ৪.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান রাফালের অন্তর্ভুক্তির ফলে ভারতীয় বায়ুসেনার শক্তি অনেকটাই বৃদ্ধি যে পয়েছে, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। বিশেষজ্ঞরা একমত, পাকিস্তান তো দূর অস্ত, রাফালের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও অস্ত্রসম্ভারের বৈচিত্র্য ও ব্যাপ্তির কাছে এখন ফিকে চিনের বহুল-প্রচারিত জে-২০ ফাইটার জেটও।


যদিও, স্বাভাবিকভাবেই বেজিং তা মানতে নারাজ। চিনা সংবাদসংস্থা গ্লোবাল টাইমস-এ প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রাফালের তুলনায় বেশি শক্তিশালী চেংডু জে-২০ বিমান, যার পোশাকী নাম 'মাইটি ড্রাগন'। ইতিমধ্যেই, রাফালের 'খুঁত' ধরার কাজে কার্যত আদাজল খেয়ে নেমে পড়েছেন চিনা বিশেষজ্ঞরা।


প্রতিবেদনে রাফালকে তৃতীয় বা ৩.৫ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। চিনা বিশেষজ্ঞরা সেখানে দাবি করেছেন, চতু্র্থ প্রজন্মর জে-২০ জেটের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে না রাফাল। মজার এবং একইসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রাফালকে খাটো করতে গিয়ে আদতে নিজেদের জে-২০ বিমানের সত্যতা ফাঁস করে ফেলেছে চিন।


গ্লোবাল টাইমসে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে, জে-২০ আদতে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। অথচ, কিছুদিন আগেই, পিপলস লিবারেশন আর্মি এয়ার ফোর্স (পিএলএএএফ) বা চিনা বায়ুসেনা দাবি করেছিল, চেংডু জে-২০ হল পঞ্চম প্রজন্মের বিমান। এখন সেদেশের সংবাদমাধ্যম তাকে চতুর্থ প্রজন্ম হিসেবে উল্লেখ করছে।


বুধবার, অম্বালা এয়ারবেসে রাফাল নামা ইস্তক চিনা বিশেষজ্ঞরা প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দেন, আদৌ ফরাসি রাফাল তাদের যুদ্ধবিমানের সঙ্গে পাল্লা দিতে পারবে কি না। বারংবার, তাঁরা দাবি করতে থাকেন, জে-২০ স্টেল্থ বিমান, রাফাল কিন্তু নয়। তাঁদের দাবি, প্রযুক্তির দিক দিয়ে রাফালের তুলনায় জে-২০ অনেক উন্নতমানের।


চিনের সামরিক বিশেষজ্ঞরা দাবি করেন, আয়েসা রেডারের উপস্থিতি, অত্যাধুনিক অস্ত্রবহনে সক্ষমতা ও সামান্য স্টেল্থ প্রযুক্তির দৌলতে ভারতীয় বায়ুসেনার প্রধান স্তম্ভ সুখোই-৩০ এমকেআই যুদ্ধবিমানের থেকে না কি মাত্র এক-চতুর্থাংশ প্রজন্ম এগিয়ে রাফাল। তাই রাফাল আসলেও, ভারতের শক্তির কোনও হেরফের হবে না। সেখানে, জে-২০ হল স্টেল্থ প্রযুক্তি থাকা চতুর্থ প্রজন্মের বিমান।


গ্লোবাল টাইমসের এই রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই চিনের মিথ্যে দাবিকে ফাঁস করেছেন ভারতের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। তাঁরা বলেছেন, চতুর্থ প্রজন্মের বিমানে স্টেল্থ প্রযুক্তি থাকে না। অর্থাৎ, জে-২০ চতুর্থ প্রজন্মের হলে তাতে স্টেল্থ টেকনোলজি নেই। সেখানে রাফাল হল ৪.৫ প্রজন্মের। এর মধ্যে এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, যাতে বিমানের রেডার ক্রস-সেকশন (আরসিএস) ও ইনফ্রারেড সিগনেচার অত্যন্ত কমে যায়। এর ফলে, শত্রুর রেডারে রাফাল ধরা পড়ে না।


এদেশের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা জানান, সুখোই-৩০ এমকেআই হল প্রকৃত অর্থে চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান। সবচেয়ে বড় কথা, তা বিপুলভাবে পরীক্ষিত ও ব্যবহৃত। চিন এখন যখন স্বীকার করে নিয়েছে যে, জে-২০ চতুর্থ প্রজন্মের জেট, তাহলে তার সঙ্গে ভারতের সুখোই-৩০ বিমানের তুলনা হতে পারে। রাফালের সঙ্গে কথনই নয়। কারণ, রাফাল অনেক অনেক এগিয়ে।


এটা শুধু যে কথার কথা নয়, তার তথ্যপ্রমাণও পেশ করেছেন কয়েকজন প্রাক্তন সামরিক কর্তা। তাঁরা জানান, ২০১৮ সালের মে মাসে, উত্তর-পূর্ব ভারতে নিয়মমাফিক মহড়ায় উড়ছিল সুখোই-৩০ এমকেআই। সেই সময় বিমানের রেডারে ধরা পড়ে যায়, তিব্বতের ওপর দিয়ে উড়ছে তিনটে জে-২০। সুখোই সেগুলিকে ট্র্যাকও করে ফেলেছিল।


প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তথ্যই প্রমাণ করছে, জে-২০ আদৌ স্টেল্থ নয়। না হলে, ভারতের সুখোইয়ের রেডারে তা ধরা পড়ত না। তাঁদের দ্বিতীয় যুক্তি, প্রকৃত পঞ্চম প্রজন্মের কোনও ফাইটার জেটেই 'ক্যানার্ড' (মূল ডানার আগে ছোট ডানা) থাকে না। উদাহরণ, মার্কিন এফ-৩৫ বা রাশিয়ার সুখোই এসইউ-৫৭। কিন্তু, জে-২০ জেটে ক্যানার্ড রয়েছে।


প্রাক্তন বায়ুসেনা প্রধান বি এস ধানোয়াও একবাক্যে স্বীকার করেন, রাফাল হল গেমচেঞ্জার। জে-২০ তার ধারে কাছেই আসে না। প্রসঙ্গত, ফ্রান্সের থেকে ৩৬টি রাফাল কিনেছে ভারত। প্রথম ব্যাচে পাঁচটি বিমান এসে পৌঁছেছে। রাফালগুলি রাখা হবে অম্বালা ও হাসিমারা এয়ারবেসে।