কলকাতা: রঙে মাখামাখি গোটা শরীর। বহুবর্ণ। মাথার চুল থেকে শুরু করে পায়ের নখ, সর্বত্র রং। এমনকী, হাসলেও দেখা যাচ্ছে রঙিন দাঁত। মায় মাড়ি পর্যন্ত রঙে মাখা! দেখে চেনাই দায় বাড়ির লোকেদের! এ ছেলে কাদের, কোন বাড়ির!
গল্প নয়, একেবারে সত্যি ঘটনা। সেদিনের সেই রঙে চুপচুপে কিশোরের নাম, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।
‘ছোটবেলায় এমন সভ্যভদ্র ভাবে দোল খেলতাম না আমরা। এক্কেবারে ছোটলোকের মত দোল খেলা হত। সবসময় রঙ কেনার টাকা থাকত না। মবিল থেকে শুরু করে তেল, কাদা, পাঁক, যা হাতের কাছে পাওয়া যেত, তাই মাখানো হত,’ হাসতে হাসতে বললেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। ৮৫ বছরের লেখকের কথায় উঠে এল ছেলেবেলার স্মৃতি।
দোল বলতেই একরাশ উন্মাদনা, উচ্ছাস আর রঙিন দিন। তবে ছোটবেলার দোলের খুব একটা সুখস্মৃতি নেই শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের। বলছেন, ‘শৈশবে দোলের সেই পাগলামি মন্দ লাগত না। দাঁতে রঙ ঘষে দেওয়া হত। মাথার চুল থেকে শুরু করে কোথায় বাঁদুরে রঙ মাখাতে বাকি রাখা হত না। ৭ দিন পর্যন্ত রঙ থাকত। পরবর্তীকালে দোলটা আমার কাছে একটা ভয়ের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এখন অবশ্য আইন মেনে দোল খেলা হয়। দুপুর ১২টার মধ্যে রঙ খেলা শেষ করে ফেলে সবাই।‘
পড়াশোনার জন্যই প্রথম কলকাতায় পা রাখেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। প্রথমদিকে একটি মেসে থাকতেন। কেমন ছিল তাঁর ছাত্রজীবনের দোল? লেখক বলছেন, ‘কলকাতার দোল তখন ছিল অন্যরকম। এখানে এসে দেখলাম, দোলের দিন মেয়েদের রঙ মাখানোর উৎসাহ বেশি। মেয়েদের হস্টেলে ঢুকে অনেকে দোল খেলত। আমি কোনওদিন যাইনি। আমার সংস্কৃতি, শিক্ষায় মনে হত এই কাজটা অনুচিত।‘
বসন্ত প্রেমের ঋতু। রঙের দিনে প্রেমের স্মৃতি রয়েছে লেখকের? ‘ভালো লোককে এই কথা জিজ্ঞাসা করেছেন!’ হেসে বললেন শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়। তারপর যোগ করলেন, ‘আমার জীবনে একটাই মেয়ে আমায় ভালোবেসেছে। আমি তাকেই বিয়ে করেছি আর তার সঙ্গেই বুড়ো হয়েছি। তবে হ্যাঁ, আমি একতরফা প্রেমে পড়েছি অনেকবার। তবে আমার প্রেমে কেউই পড়েনি।‘
নির্বাচনের আগে গোটা রাজ্যে সাজো সাজো রব। রঙের ঋতুতে রাজনৈতিক রঙের খেলাও চলেছে। শীর্ষেন্দু বলছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমার কোনও মাথাব্যাথা নেই। আমাদের রাজ্য অভাগা। ক্ষমতায় যে রংই আসুক না কেন, আমাদের বিশেষ কিছুই বদলাবে না।‘