কলকাতা: উৎসবের জাঁকজমক, আলোর রোশনাই, রকমারি খাওয়া-দাওয়া, আড্ডা মজায় পুজোর চারটে দিন যেন চোখের পলকে কেটে যায়। দশমীর পর পড়ে থাকা ফাঁকা মণ্ডপে তখন মনখারাপি সুর। আবার সেই একঘেয়ে রোজনামচায় ফেরা। ছাতিমের গন্ধ আর উত্তুরে হাওয়ায় মন যেন আরও ভারী হয়ে আসে এই সময়টায়। কমবেশি সকলেই এই সমস্যা হয়ে থাকে।
তবে ডিপ্রেশন বা অ্যানজাইটির মতো সমস্যা আগেই রয়েছে যাঁদের তাঁদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে ওঠে এই উৎসব পরবর্তী সময়টায়। যার পোশাকি নাম পোস্ট ফেস্টিবল ডিপ্রেশন (Post Festival Depression)। কিছুক্ষেত্রে চিকিৎসকরে পরামর্শ প্রয়োজন হয়ে থাকে অনেকের। তবে অনেক ক্ষেত্রে কয়েকটি পদ্ধতি অনুসরণ করে এই সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব।
আমাদের মস্তিষ্ক সেরোটোনিন (Serotonin) নামে যেই হরমোন নিঃসরণ করে তার ওপরেই নির্ভর করে উত্তেজনা, খিদে, ঘুম নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাতে। উৎসবের আনন্দে আমাদের মস্তিষ্ক এই হরমোনের নিঃসরণ বাড়িয়ে তোলে। তবে উৎসব ফুরিয়ে গেলে সেরোটোনিনের ক্ষরণ ড্রপ করতে পারে। ফলে মন খারাপ, ক্লান্তি বোধ করতে পারেন অনেকেই। উৎসবের জাঁকজমকে কম ঘুম এবং বিশ্রামের অভাবেও ডিপ্রেশন বাড়তে পারে। এ ছাড়াও অতিরিক্ত পার্টি, মদ্যপানের ফলে আমাদের মস্তিষ্কে ক্ষরণ হওয়া হরমোনের তারতম্য ঘটে এই ডিপ্রেশনের মাত্রা বৃদ্ধি করতে পারে।
নিজেকে একা করবেন না: উৎসব শেষ হওয়া মাত্রই বন্ধু -বান্ধবদের সঙ্গে সব যোগাযোগ বন্ধ করে নিজেকে ঘরকুনো করে ফেলবেন না। কথা বলুন। উইকেন্ডে কোথায় লাঞ্চ বা ডিনারের জন্যও যেতে পারেন। এই সময়টায় একা না থাকাই ভাল, বরং নিজের মনের কথা শেয়ার করুন বন্ধুদের সঙ্গে, সময় কাটান। এই সময়ে কথা বলাটা খুব জরুরি।
শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দেখভাল: উৎসবের দিনগুলো অনিয়ম শরীর এবং মন দুই-এর ওপরেই প্রভাব ফেলে। তাই এই সময়ে নিজের যত্ন নিন। স্কিন কেয়ার, হেয়ার কেয়ারের পাশাপাশি শরীরের যত্ন নিন।
খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ন্ত্রণ: মন ভাল রাখতে খাওয়া-দাওয়ায় নিয়ন্ত্রণও জরুরি। তাই উৎসব শেষে বাড়ির স্বাস্থ্যকর খাবারে মন দিন। বেশি ভাজাভুজি, তেল-মশলা না খাওয়াই ভাল। অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে জল খান। মরশুমি ফল রাখুন ডায়েটে। মিষ্টি, চকলেট জাতীয় খাবার মন ভাল করতে সাহায্য করে, সামান্য় পরিমাণে এই খাবার খেতে পারে, তবে মাত্রাতিরিক্ত খেলে উল্টে ওজন বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পাতে ড্রাই ফ্রুটস রাখতে পারেন।
অবসরে ভাল অভ্যাস: গান শুনুন, সেলফ হেল্প বই পড়ুন। আপনি যেই কাজটি ভালবাসেন, যেমন আঁকা, গান করা, ক্রাফটিং ইত্যাদি কাজগুলো করুন অবসরে। এতে মন অন্যদিকে থাকবে। উৎসব শেষের মন খারাপও কমবে।
ঘুরে আসুন: পুজোর দীর্ঘ ছুটির পর আবারও ছুটি পাওয়া সম্ভব নয়। তবে হাতে দু-একদিনের ছুটি থাকলে কাছাকাছি কোথাও ঘুরেও আসতে পারেন প্রিয়জনের সঙ্গে।
প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। কোনও ওষুধ খাওয়ার আগেও চিকিৎসকের সঙ্গে অবশ্যই কথা বলে নিন।