কলকাতা : স্ট্যান্ড আপ কমেডিয়ান ভারতী সিং থেকে অভিনেত্রী-সাংসদ স্মৃতি ইরানি। সম্প্রতি নজর কেড়ে নিয়েছে এঁদের হঠাৎ করে তন্বী হয়ে ওঠা। খুব কম সময়েই অনেকটা ওজন ঝরিয়ে (weight loss) এক্কেবারে চমকে দেওয়া চেহারায় সকলের সামনে হাজির হয়েছেন তাঁরা। এই সুন্দর চেহারায় রহস্য কী? এই নিয়ে ইন্টারনেটে সার্চ হচ্ছে বিস্তর। একাংশের দাবি এঁদের ঝটপট ওজন কমানোর রহস্য হল ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। স্বাভাবিকভাবেই এই ডায়েটিং-ফান্ডা জানতে সকলেই আগ্রহী।
- ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং ( Intermittent Fasting) কী ?
ওজন কমানোর ক্ষেত্রে এখন অন্যতম জনপ্রিয় ইন্টারমিটেন্ট ফাস্টিং। এই পদ্ধতিতে প্রতিদিন লম্বা সময় উপোস করে ওজন কমানোই হল এই ধরনের ডায়েটিংয়ের মূল কথা। এতে খাদ্যাভাসে বড় বদল আনতে হয়। বিশ্বজুড়ে বহু ব্যক্তি এই পদ্ধতি ব্যবহার করে ওজন কমিয়েছেন বলে দাবি। পশ্চিমি দুনিয়ায় এটি বেশ জনপ্রিয় পদ্ধতি। সারাদিনে ১৬ ঘণ্টার মতো কিচ্ছুটি না খেয়ে কাটিয়ে দিতে হবে। আর বাকি সময় খাওয়া যেতে পারে চাহিদা মতো। এটাই এই ডায়েটিং-এর বৈশিষ্ট্য।
কিন্তু হঠাৎ করে খাওয়া-দাওয়ার স্বাভাবিক হিসেব উল্টে দিয়ে ১৬ ঘণ্টা উপোস করে থাকা আদৌ কতটা স্বাস্থ্যকর ? শরীরের কতটা ক্ষতি বা লাভ হতে পারে এতে ? আলোচনায় নিউট্রিশনিস্টরা। ফর্টিস হাসপাতালের Clinical Nutrition & Dietetics- এর প্রধান মিতা শুক্লা জানালেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে এই উপোস করে রোগা হওয়ার পদ্ধতি কাউকে প্রেসক্রাইব করেন না। তার মূল কারণ হল -
- এই ধরনের ডায়েটিং আদৌ কতটা কার্যকরী, এই নিয়ে কোনও নির্দিষ্ট সার্ভে রিপোর্ট এই দেশের মানুষের উপর করা হয়নি।
- পশ্চিমি দেশে পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে দিনের শেষ খাওয়াটা বিকেল সাড়ে ৫ টার মধ্যেই শেষ করা হয়।
- কিন্তু আমাদের দেশের পরিপ্রেক্ষিতে এই লাইফস্টাইলগ্রহণ সম্ভব নয় ।
- অনেকে রাত অবধি কাজ করছেন। তাদের ক্ষেত্রে না-খেয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাজ করাটা কঠিন।
- আমাদের দেশের খাদ্যাভ্যাস অনেকটাই আলাদা।
- হয়ত এতটা উপোসের পর কিছুটা ব্লাড সুগার কমে, ওজনও ঝরে, কিন্তু তা আদৌ স্বাস্থ্যকর কিনা তা নিয়ে আমাদের দেশের নিরিখে কোনও তথ্য নেই।
- কারও হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ইতিহাস থাকলে ক্ষতির আশঙ্কা বাড়ে। এমনকী মানুষের জীবন নিয়ে টানাটানিও হতে পারে ।
- উপোসের বাইরে একজন কী কী খাবে, সেটার প্রভাব কী শরীরের উপর সেটা কতটা খাওয়া যেতে পারে, কী খেতে পারে, তার কোনও মাপকাঠি নেই। এতে ক্ষতি হচ্ছে কিনা আমাদের সঠিক জানা নেই।
- কেউ হয়ত ওজন ঝরিয়েও ফেলল এভাবে, কিন্তু এরপর এই ডায়েটের বাইরে এলে শরীর কীভাবে প্রতিক্রিয়া করবে, তাই নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।
আরও পড়ুন :
ডায়েট কন্ট্রোল করতে গিয়ে মেজাজ তিরিক্ষে? আসছে ডিপ্রেশন? রইল সলিউশন
এই বিষয়ে নিউট্রিশনিস্ট মালবিকা দত্ত (Dept head of B.M.Birla Heart Research Centre) জানালেন, তিনিও এই ডায়েট কাউকে প্রেসক্রাইব করার সম্পূর্ণ বিরুদ্ধে। কারণ, - এই ডায়েটে ওজন তাড়াতাড়ি ঝরে গেলেও লিভারে ফ্যাট জমতে পারে
- এর ফলে ফ্যাটি লিভার থেকে শুরু করে সিরোসিস অফ লিভার পর্যন্ত হতে পারে
- হজমের সমস্যা থেকে লিভারের কার্যকারীতাহানি করতে পারে।
- ভারতীয় জীবনযাত্রা অনুসারে এই পদ্ধতি একেবারেই অস্বাস্থ্যকর
- যাঁরা খুব কম সময়ে এই পদ্ধতিতে ওজন কমে ঠিকই, কিন্তু এর ফল মারাত্মক
- ইন্টারনেট দেখে যে কোনও রকম ডায়েটি্ং শুরু করাই মারাত্মক ক্ষতি করে ।
- পরবর্তীকালে এই ডায়েট থেকে হঠাৎ করে সরে এলেও শরীর খারাপ ভাবে রিঅ্যাক্ট করতে পারে।
অনেক পেশার ক্ষেত্রেই খুব কম সময়ে ওজন ঝরানোর লক্ষ্যমাত্রা দিয়ে দেওয়া হয়। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যের উপর প্রভাব কিন্তু মোটেই ইতিবাচক নয়। কেউ এইভাবে ওজন কমিয়ে ফেলল বলেই, সেটা যে অন্য একজনও চোখ বুজে ভরসা করতে পারে এমনটা কোনও মতেই নয়। কারণ, একেকজনের শরীরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্যারামিটারগুলি আলাদা আলাদা।
নিউট্রিশনিস্ট মিতা শুক্লা
নিউট্রিশনিস্ট মালবিকা দত্ত