কলকাতা : ৬০-৬৫ পেরনোর সঙ্গে সঙ্গেই শরীরে বেশ কিছু লক্ষণীয় পরিবর্তন আসে। সেই সঙ্গে দেখাশোনা করার লোক কমে যায়। তাই খাওয়া-দাওয়ায় অবহেলা করে ফেলেন অনেক বয়স্ক মানুষ। এর সঙ্গে আবার অসুস্থ হয়ে পড়ার ভয় মাথায় ঢুকে যায়। একাকীত্বও কোথাও না কোথাও খাওয়ার প্রতি অনীহা ডেকে আনে। কিন্তু এই বয়সে পুষ্টিতে ঘাটতি বা ভুল-ভাল খাওয়া-দাওয়ায় শরীরে বড়সড় সমস্যা হতে পারে। তাই দরকার নির্দিষ্ট ডায়েট। বিশেষত শরীরের রোগ-বালাই, ঘাটতি বুঝে পার্সোনালাইজড ডায়েট প্ল্যান। বিস্তারিত বলছেন, ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ড. অনন্যা ভৌমিক মিত্র । তিনি জানাচ্ছেন,
- এই বয়স থেকে পেশীর ঘনত্ব কমতে থাকে। যাকে বলে সাইকোপেনিয়া। এতে করে কাজ করার ক্ষমতা কমে যেতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সমস্যাটা বাড়ে।
- পেশীর কর্মক্ষমতা কমে যায়।
- দাঁতের সমস্যা ও দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে অনেক বৃদ্ধই সঠিক নিউট্রিশন পান না। কারণ দাঁতের কষ্ট হবে বলে, খাদ্য়তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন তাঁরা অনেককিছুই।
- হাড়ের সমস্যা বাড়ে।
- হজম ক্ষমতা কমে যায়।
- কনস্টিপেশনের সমস্যাও বয়স বাড়লে বেশ কমন ।
এই সমস্যাগুলির কথা মাথায় রেখেই প্ল্যান করতে হবে বয়স্ক কারও ডায়েট চার্ট। সেই সঙ্গে দেখে নিতে হবে তাঁর শরীরে আর কিছু সমস্যা আছে কি না। যেমন, প্রেসার, সুগার ইত্যাদি। ডায়েট চার্ট তৈরিকরার সময় মাথায় রাখতে হবে জীবনশৈলির বিষয়টিও। - যেহেতু একটা বয়সের পর থেকে হজম ক্ষমতা কমে যেতে শুরু করে, তাই সারাদিনের খাবারকে ছোট ছোট মিলে ভাগ করতে হবে ।
- সহজপাচ্য খাবার খেতে হবে ।
- তেল-ঝাল-মশলা কম এমন খাবারই খাওয়া প্রয়োজন।
- মাশরুম, বাদামের গুঁড়ো ও নানারকমের ডাল রাখতে হবে ডায়েটে। চিবোনোর ক্ষমতা চলে গেলে বাদাম গুঁড়ো করে মুড়ি, চিঁড়ে বা অন্য খাবার মেশানো যেতে পারে।
- দুধজাতীয় খাবার খেতে অনেকের বারণ থাকে। তাঁরা ছাড়া দুধ বা দুধজাত খাবার পরিমান মতো খাওয়া যেতে পারে।
- রান্না করার জন্য সয়াবিন তেল ব্যবহার করা যায়।
- চিকিৎসকের বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ অনুযায়ী , গাওয়া ঘি চলতে পারে।
- সয়া থেকে তৈরি নানা প্রোডাক্ট খুবই উপকারী।
- শুধু মাছ-মাংস খেলেই প্রোটিন ডিমান্ড মিটবে এমন কিন্তু নয়।
- দাঁতের সমস্যার জন্য এমনভাবে রান্না করতে হবে যা সহজেই নরম হয়ে যায়।
- চিকেন চিবোতে হয় বেশি, তাই তার বদলে চলতে পারে মাছ।
- ডিম কতটা খাবেন, জেনে নিয়ে খেতে পারেন চিকেনের পরিবর্তে।
- কনস্টিপেশনের সমস্যা দূর করতে কিছু ফাইবার জাতীয় খাবার খেতে হবে। যেমন ময়দার বদলে আটা চলতে পারে। ফ্রুট জুসের বদলে খান গোটা ফল। ফল চিবোতে না পারলে গ্রাইন্ড করে পুরোটাই খেতে হবে না ছেঁকে। তবে কী কী ফল একজন বয়স্ক মানুষ খেতে পারবেন, তা জেনে নিতে হবে আগেভাগেই।
- খাবার যেন রংবেরং-এর হয়। যেমন নানা রঙের সবজি ও ফল। এটা শুধু পুষ্টির চাহিদা মেটানোর জন্য নয়। মনও ভাল থাকে। খাবার সময় মনেও তৃপ্তি আসে।
ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট ড. অনন্যা ভৌমিক মিত্র