লিভার আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি আমাদের শরীরে ৫০০ টিরও বেশি কাজ করে। হজম থেকে শুরু করে ডিটক্সিফিকেশন পর্যন্ত, যেখানে এটি শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ অপসারণ, পিত্ত উৎপাদন এবং রক্ত পরিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তবে আধুনিক জীবনযাত্রা, খারাপ খাদ্যাভ্যাস এবং অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে ফ্যাটি লিভার, হেপাটাইটিস এবং সিরোসিসের মতো রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসুন জেনে নেওয়া যাক লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগে কী কী লক্ষণ দেখা দেয় ?

লিভারের ক্ষতির প্রাথমিক লক্ষণ-

লিভারের রোগকে প্রায়শই নীরব ঘাতক বলা হয়। কারণ এর প্রাথমিক লক্ষণগুলি খুবই হালকা এবং মানুষ প্রায়শই এগুলি উপেক্ষা করে। এবিপি নিউজের প্রতিবেদন অনুসারে, গ্যাস্ট্রো-এন্টেরোলজিস্ট ডাঃ প্রবীণ গুপ্ত জানিয়েছেন, লিভার রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলি শনাক্ত করা কঠিন হতে পারে, কারণ এগুলি সাধারণ ক্লান্তি বা পেট খারাপের মতো দেখায়। যদি এই সমস্যাগুলি অব্যাহত থাকে, তাহলে অবিলম্বে একজন ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।

ক্লান্তি ও দুর্বলতা-

লিভারের ক্ষতির প্রাথমিক লক্ষণ হল ক্রমাগত ক্লান্তি এবং দুর্বলতা, যা খুবই সাধারণ। যখন লিভার সঠিকভাবে কাজ করে না, তখন শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমা হতে শুরু করে। এর ফলে কোনও কারণ ছাড়াই অতিরিক্ত ক্লান্তি দেখা দেয়।

জন্ডিস-

ত্বক এবং চোখ হলুদ হয়ে যাওয়াকে জন্ডিস বলা হয়। এটি লিভারের ক্ষতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ। আসলে, যখন লিভার বিলিরুবিন (এক ধরনের হলুদ পদার্থ) সঠিকভাবে প্রক্রিয়া করতে অক্ষম হয়, তখন এটি রক্তে জমা হয়। জন্ডিস প্রায়শই হেপাটাইটিস বা সিরোসিসের লক্ষণ হতে পারে।

পেট ব্যথা ও ভারী লাগা-

পেটের উপরের ডান অংশে ব্যথা বা ভারী বোধ লিভারের সমস্যার সংকেত হতে পারে। এই ব্যথা লিভারে প্রদাহ বা চর্বি জমার কারণে হতে পারে। ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ ডায়াবেটিস অ্যান্ড ডাইজেস্টিভ অ্যান্ড কিডনি ডিজিজেস (NIDDK) অনুসারে, ফ্যাটি লিভার বা হেপাটাইটিসের প্রাথমিক পর্যায়ে এই লক্ষণ দেখা দিতে পারে।

ত্বকে চুলকানি-

লিভারে পিত্ত লবণের মাত্রা বেড়ে গেলে ত্বকে চুলকানি হতে পারে। এই চুলকানি রাতে বেশি হয়, যা অবস্ট্রাকটিভ জন্ডিস, পিত্তনালীতে বাধার লক্ষণ হতে পারে।

বমি বমি ভাব-

যখন লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ সম্পূর্ণরূপে অপসারণ হয় না, যার কারণে ঘন ঘন বমি বমি ভাব এবং বমি হতে পারে। এই লক্ষণটি বিশেষ করে রাতে আরও স্পষ্ট হতে পারে। যদি আপনার রাতে ঘন ঘন বমি বমি ভাব হয়, তাহলে এটি লিভারের ক্ষতির লক্ষণ হতে পারে।

প্রস্রাব এবং মলের রঙের পরিবর্তন-

যখন লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন প্রস্রাব গাঢ় হলুদ বা বাদামি হতে পারে এবং মলের রং ঘোলাটে বা হালকা হতে পারে। এটি বিলিরুবিনের অস্বাভাবিক মাত্রার কারণে হয়। একই সঙ্গে, কোনও কারণ ছাড়াই খিদে এবং ওজন কমে যাওয়াও লিভারের ব্যাধির লক্ষণ। এছাড়াও, লিভারের ব্যাধির কারণে শরীরে তরল জমা হতে পারে, যার ফলে পা এবং গোড়ালিতে ফোলাভাব (এডিমা) দেখা দিতে পারে।

ডিসক্লেমার: লেখায় উল্লেখিত দাবি বা পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। এটি মেনে চলার আগে অবশ্যই সরাসরি বিশেষজ্ঞ/চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।