কলকাতা: শীত পড়তেই বিভিন্ন রোগের প্রকোপ বাড়তে শুরু করে। এর মধ্যে অন্যতম হল মাইগ্রেন। কেউ কেউ মাইগ্রেনের ব্যথায় নিয়মিত ভোগেন। শীতকালে মরসুম বদলের কারণে এই ব্যথা তুঙ্গে ওঠে। ঠিক কী কারণে এই ব্যথা চাগাড় দিয়ে ওঠে? কাদের মাইগ্রেন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে? কীভাবেই বা এই সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়? এই বিষয়েই এবিপি লাইভের সঙ্গে বিশদে আলোচনা করলেন ফর্টিস হাসপাতালের স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সিঞ্জন ঘোষ


তাপমান কমতেই কেন মাইগ্রেন হয় (Migraine attack during winter)?



  • মাইগ্রেন একধরনের ভাসকুলার পেইন। আমাদের মাথার ভিতর প্রচুর শিরা উপশিরা রয়েছে। এগুলির পরিধি বেড়ে যায়। ভিতরের ফাঁপা পথটা আরও চওড়া হয়ে যায়। আরেক অর্থে বলা যায়, ফুলে যায় এই শিরা ধমনিগুলি। এই ফোলাভাব সরাসরি স্নায়ুগুলির উপর প্রভাব ফেলে। এর ফলে ব্যথার অনুভূতি হয়। এটিই মাইগ্রেন।

  • আমাদের মস্তিষ্কের ভিতর বেশ কিছু নিউরোকেমিক্যাল থাকে। যাদের নিউরোট্রান্সমিটারও বলা হয়। এর মধ্যে অন্যতম একটি হল সেরোটোনিন। এই সেরোটোনিনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায় শীতকালে। এর ফলে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দেয়। যাদের আগে থেকে মাইগ্রেন রয়েছে, তাদের এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়।


কাদের মাইগ্রেন হতে পারে (who are prone to migraine)?


 



  • স্ট্রেস: সারাদিনের কাজের ফলে অতিরিক্ত স্ট্রেস বা চাপ তৈরি হতে পারে। এই চাপ থেকে মাইগ্রেন হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। 



  • দেরি করে ঘুম বা কম ঘুম: অনেকেই রাতে দেরি করে শুতে যান। এমনকি রাতে খুব কম সময় ঘুমোন। তাদের মাইগ্রেনের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।

  • ক্রনিক রোগ: ক্রনিক রোগ যেমন রক্তচাপ বেশি থাকলে মাইগ্রেনের ব্যথা হতে পারে। তবে রক্তচাপ থাকলে এই ব্যথা হবেই, এমন কোনও কথা নেই।



  • খালি পেটে থাকা: দীর্ঘক্ষণ খালি পেটে থাকলে মাইগ্রেনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।


মাইগ্রেনের উপসর্গ কী কী (Migraine symptoms)?



  • মাথার একদিকে ব্যথা: মাইগ্রেনে মাথার যে কোনও একদিকে ব্যথা হতে থাকে। যে কারণে একে সাধারণ বাংলায় আধকপালি ব্যথাও বলে থাকেন অনেকে।

  • দপ দপ করে ব্যথা: মাইগ্রেনের ব্যথা সাধারণত দপদপ করে হয়। ব্যথার এই চরিত্র দেখে একে অন্য ব্যথার থেকে আলাদা করা হয়।

  • বমিভাব: মাইগ্রেনের ব্যথা অনেক সময় নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। সেক্ষেত্রে বমির মতো লক্ষণও দেখা দিতে পারে।

  • আলো সহ্য হয় না: মাইগ্রেনের এই ব্যথা যখন হয়, তখন আলো সহ্য করতে পারেন না আক্রান্ত ব্যক্তি। এই লক্ষণকে ফোটোফোবিয়া বলা হয়।

  • আওয়াজ সহ্য হয় না: মাইগ্রেনের ব্যথা হলে খুব জোরে শব্দ বা আওয়াজ সহ্য করা মুশকিল হয়ে যায়। এটি বিরক্তি বাড়িয়ে দেয়। যাকে বিজ্ঞানের পোশাকি ভাষায় ফোনোফোবিয়া বলা হয়।


কী করলে মাইগ্রেনের ব্যথা নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়?


 



  • স্ট্রেস লেভেল কমাতে হবে: বেশি স্ট্রেস নেওয়া কমাতে হবে। স্ট্রেসের পরিমাণ কমাতে পারলেই এই সমস্যা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে রাখা যাবে।



  • যথাযথ শীতের পোশাক: শীতকালে যথাযথ পোশাক পরে বাইরে বেরোতে হবে। বেরোনোর আগে মাথা ভাল করে ঢেকে নিতে হবে। মাথায় ঠান্ডা লাগতে দিলে চলবে না।

  • গরম খাবার খাওয়া: শীতকালে গরম পানীয়ের উপর ভরসা রাখতে পারেন। এই ধরনের খাবার শরীর গরম রাখে। ফলে মাইগ্রেনের ব্যথাও নিয়ন্ত্রণে থাকে।



  • পর্যাপ্ত ঘুম: ঘুমের সমস্যা থেকে অনেকেই মাইগ্রেনে ভোগেন। তাই রোজ পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমের দরকার রয়েছে। ঘুম ঠিকমতো হলে এই ব্যথা অনেকটাই সামাল দেওয়া যায়।


আরও পড়ুন: Gallbladder stone signs:পিত্তথলিতে পাথর জমলে বুঝবেন কীভাবে ?