অল্প কয়েক মিনিট বা কয়েক ঘণ্টার জন্য হাত বা পা অবশ বোধ হল?  কথা জড়িয়ে গেল? চোখে ঝাপসা দেখছেন? হতে পারে মিনি স্ট্রোক !  ডাক্তারি পরিভাষায় যাকে বলে, ট্রানসিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক ( Transient ischaemic attack ) বা মিনি স্ট্রোক ( Ministroke ) । ABP Live এর সঙ্গে আলোচনা করলেন ডা. অম্লান কুসুম দত্ত । (  MD DM DrNB, Consultant Neurologist, Techno India Dama Hospital)। 


এক্ষেত্রে ব্রেন স্ট্রোকের মতো দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব না দেখা গেলেও ট্রান্সিয়েন্ট ইসকেমিক অ্যাটাক বা টিআইএ-এর ক্ষেত্রে অল্প সময়ের জন্য এই লক্ষণগুলি চোখে পড়ে। তবে সঙ্গে সঙ্গে না ব্যবস্থা নিলে ভবিষ্যতে বড় বিপদ হতে পারে। হয়ত কয়েক মাসের মধ্যেই বড় স্ট্রোক হতে পারে।  মস্তিষ্কের কোনও একটি রক্তনালীর মধ্যে সামান্য কিছু সময়ের জন্য রক্ত আটকে গেলে মস্তিষ্কের একটি অংশে রক্ত পৌঁছতে পারে না। ফলে মস্তিষ্কের সেই অংশ কাজ করা বন্ধ করে দেয়। তবে নিজে থেকেই তা ঠিক হয়ে যায় বলে শরীর কম সময়েই ঠিক হয়ে যায়। তবে এটিকে অবজ্ঞা করতে পরে বড় পক্ষাঘাত আসতেই পারে। 


যেমন -



  • কথা জড়িয়ে আসা

  • কোনও একটি দিক জোর না পাওয়া

  • একদিকের হাত-পা  অবশ হয়ে যাওয়া 

  • মুখের একদিক বেঁকে যাওয়া

  • চোখে হঠাৎ একটা জিনিস দুটো দেখা 

  • একটা চোখে না দেখতে পাওয়া 

  • হঠাৎ করে প্রচন্ড মাথা যন্ত্রণা করা 

  • হঠাৎ করে হাঁটতে অসুবিধে বোধ করা 

  • কথা বলার সময় বা বোঝানোর সময় ক্ষমতা হারিয়ে ফেলা 

  • হঠাৎ করে অস্বাভাবিক আচরণ করা লোকজন চিনতে না পারা 

    স্ট্রোক কী
    মাথার কোনও রক্তনালীতে স্থায়ীভাবে রক্তজমাট বাঁধলে সেই অংশে রক্তচলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তার ফলে স্ট্রোকের মতো ধাক্কা আসতে পারে।  ধমনীতে কোনও কারণে রক্ত আটকে গেলে  মস্তিষ্কের কোনও একটি অংশে রক্ত পৌঁছাতে পারে না । তখনই ঘটে মস্তিষ্কে সেই অংশ অকেজো হয়ে যায় ।  মস্তিষ্ক যেহেতু আমাদের সারা শরীরের বিভিন্ন কাজকর্ম পরিচালনা করে তাই। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে কাজকর্ম  বন্ধ করে দিতে পারে। 

    স্ট্রোক,  টিআইএ -র ঝুঁকি কাদের বেশি

  • উচ্চ রক্তচাপ থাকলে

  • ডায়াবিটিস, কোলেস্ট্রলের মতো অসুখ থাকলে

  • ওজন বেশি হলে

  • বংশে স্ট্রোকের ইতিহাস থাকলে 

    স্ট্রোকের পর প্রথম সাড়ে ৪ ঘণ্টা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ 

  • লক্ষণ দেখা দিলে সময় নষ্ট না করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া উচিত।  কারণ এটি একটি মেডিকেল ইমার্জেন্সি।  লক্ষণ শুরু হওয়ার সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে এর চিকিৎসা করলে এর চূড়ান্ত খারাপ প্রভাব আটকানো যেতে পারে। 

  • ধমনী আটকে গিয়ে রক্ত চলাচল কমে যাওয়ার জন্য যদি স্ট্রোক হয় তবে প্রথম সাড়ে চার ঘন্টার মধ্যে ওষুধের মাধ্যমে সেই ব্লক খুলে দেওয়া যেতে পারে।  অথবা কুঁচকির কাছে ফুটো করে মস্তিষ্কের ধমনীতে তার নিয়ে গিয়ে সেই ধমনী থেকে রক্তপিণ্ড বা ক্লট বার করা ও সম্ভব যাকে Mechanical Thrombectomy বলা হয়।

  • এই সময়ের মধ্যে এই চিকিৎসা না করালে এই কাজ আর করা যায় না । এই সময়-সুযোগ পেরিয়ে গেলে সাধারণত মস্তিষ্কের সেই জায়গাটি বাঁচানো যায় না এবং রোগীর অক্ষমতা চিরস্থায়ী হয়ে যায়। তখন ওষুধের ভূমিকা হল, পরবর্তী  স্ট্রোক আটকাতে সাহায্য করা। যাকে সেকেন্ডেরি প্রিভেনশন বলা যায় ।

  • মিনি স্ট্রোক বা টিআইএ হলেও সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে আসা উচিত । তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করলে ভবিষ্যতে বড় রকম দুর্ঘটনা এড়ানো যেতে পারে।