কলকাতা: ইতিহাসের পাতায় ওঁরা কেউ নোবেলজয়ী সাহিত্য়িক(Nobel Laureate Novelist), কেউ বা আবার বিশিষ্ট রাজনীতিবিদ (Politcal Figure)। কারও পরিচয় মনোজগতের অন্ধকার, অবচেতন অংশের কাজ-কারবার সামনে নিয়ে আসার পুরোধা হিসেবে (Psychoanalyst)। কিন্তু এই পেশাগত খ্য়াতির (ক্ষেত্রবিশেষে কুখ্যাতির) বাইরেও ওঁদের গোটা পারিবারিক জীবন ছিল। ছেলেমেয়ে মানুষ করার দায়িত্ব পালন করতে হত সেখানে। বাবা হিসেবে ( Fathers Day 2023) কেমন ভাবে সেই দায়িত্ব পালন করতেন ওঁরা?
চিঠি প্রিয়দর্শিনীকে...
দশ বছরের ছোট্ট মেয়েটি তখন মুসৌরির স্কুলে লেখাপড়া করছে। বাবা রয়েছেন এলাহাবাদে। তুমুল ব্যস্ততা তাঁর। কিন্তু পৃথিবী, জীবজগৎ ও সভ্য়তার গোড়ার ইতিহাস নিজের মতো করে মেয়ের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন বাবা। সালটা ১৯২৮। তাই ছোট্ট ইন্দিরাকে চিঠি লিখতে শুরু করলেন। একটা, দুটো নয়, পর পর ৩০টি চিঠিতে মেয়ের সামনে পৃথিবীর বিবর্তন, জীবজগৎ ও মানুষের আবির্ভাব, মানবসভ্যতার ইতিহাস, বিশ্বের সামাজিক ব্যবস্থার গোড়ার কথা বর্ণনা করলেন বাবা। গোটা দেশ তখন পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে একডাকে চেনে। কিন্তু ইন্দিরা প্রিয়দর্শিনী নেহরুর কাছে তিনি শুধুই বাবা, যাঁর কলম দিয়ে দশ বছরের বালিকা চিনছেন আশপাশের দুনিয়াকে। পরে সেই চিঠির সংকলন বেরোয় 'Letters from a Father to his Daughter' শিরোনামে। দেশ-বিদেশের কত খুদে যে সেই চিঠির শব্দের মধ্যে দিয়ে দুনিয়ার প্রাথমিক পঠনপাঠন নিয়েছে, তা বোধহয় হিসেবের বাইরে।
কন্য়া যখন শিষ্যা...
ছয় ছেলেমেয়ের মধ্যে ছোট থেকেই অ্যানাকে অন্যরকম লাগত বাবার। মেয়ের যখন বছর চারেক বয়স, তখনই বন্ধুকে চিঠিতে বাবা লিখছেন,'দুষ্টুমিতে দারুণ পটীয়সী হয়ে উঠেছে অ্যানা।' ধীরে ধীরে সেই দুষ্টু মেয়েটি কবে যে বাবার আলোড়ন ফেলা তত্ত্বের অনুসরণকারী হয়ে উঠেছিলেন, সেটা সম্ভবত আলাদা করে খেয়াল করেননি ফ্রয়েড পরিবারের কেউই। অ্যানা ফ্রয়েড বহু পরে জানান, বাবার কথা শুনতে শুনতেই অনেক কিছু শেখার চেষ্টা করতেন তিনি। সাইকোঅ্যানালিসিসের প্রাণপুরুষ, সিগমুন্ড ফ্রয়েডের বাড়িতে অতিথিও কম আসতেন না। তাঁদের সঙ্গে কী আলোচনা চলত বাবার, সেদিকেও খেয়াল ছিল অ্যানালিটিক চাইল্ড সাইকোলজির প্রতিষ্ঠাত্রী অ্যানার।
টোয়েন-কন্যা...
Tom Sawyer বা Adventures of Huckleberry Flinn-স্রষ্টা, মার্ক টোয়েনের কথা এই তালিকা থেকে বাদ দিলে চলে না। শোনা যায়, তিন কন্যার পিতা টোয়েন নাকি একটি অদ্ভুত ডায়েরির ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁর মেয়েরা,একেবারে ছোটবেলায়, যখন বাক্যগঠন করতে গিয়ে মজার ভুল করত, সেই ভুলগুলি ওই ডায়রিতে লিখে রাখতেন টোয়েন। মেয়েরাও বাবাকে কম আমল দিত না। তিন কন্যার এক জন, সুজান, মাত্র ১৩ বছর বয়সে বাবার একটা আস্ত বায়োগ্রাফি লিখে ফেলে। অদ্ভুতভাবে এই সুজানই পৃথিবী ছেড়ে চলে যান মাত্র ২৪ বছর বয়সে। টোয়েন লিখলেন মেয়ের স্মৃতিগাঁথা, In Memory of Olivia Susan Clemens।
হেমিংওয়ে-পুত্ররা...
ছেলেরা তখনও জন্মায়নি। কিন্তু তাতে কী? কল্পলোকে পিতৃত্বকে অনেকটাই বুঝে ফেলেছিলেন বিশিষ্ট নোবেলজয়ী সাহিত্যিক আর্নেস্ট হেমিংওয়ে। ১৯৩২ থেকে ১৯৩৪ সালে তাঁর লেখা বেশ কিছু চিঠিতে সেই উপলব্ধি ধরা পড়ে। পরে, বাস্তবজীবনে, তিনটি পুত্রসন্তানের জন্ম দেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক। কী অদ্ভুত! ছেলেদের লেখাপড়ার দিকে তাঁর যত না নজর, তার থেকে বেশি নজর ছিল ছেলেরা মাছ ধরা, বন্দুক চালানো শিখছে কিনা। আরও সহজ করে বললে, বাবা-ই তাঁদের এইসব শেখান।
'সেও পিতা, আমিও পিতা'...
'কাবুলিওয়ালা, ও কাবুলিওয়ালা, তোমার ও ঝুলির ভিতর কী', নিত্য প্রশ্ন ছিল খুদে মিনির। জবাবটাও প্রায় ধ্রুবক, 'হাতিঈঈঈ'। এর পরের কাহিনি হয়তো আমাদের অনেকের জানা। দুই অসময়বয়সির সহজ বাৎসল্যের কথা। তবে এখানেই শেষ নয়। এ আসলে এমন এক মায়ার কাহন যা'কাবুলি মেওয়াওয়ালা'-র সঙ্গে আর এক 'বাঙ্গালী সম্ভ্রান্তবংশীয়'-র আপাত ফারাক মিটিয়ে দেয়।
শুধু থেকে যায় একটাই পরিচয় 'সেও পিতা, আমিও পিতা'।
আরও পড়ুন:ডায়াবেটিস ও প্রি-ডায়াবেটিসের মধ্যে পার্থক্য কী ? প্রতিরোধের উপায় কী ?