কলকাতা: কখনও ভেবে দেখেছেন একদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে যদি দেখেন আমাদের সূর্যটা আর নেই! মারা গিয়েছে বা ধ্বংস হয়ে গিয়েছে! কী হবে তাহলে? আমি আপনি যাই ভাবি, বিজ্ঞানীরা সাম্প্রতিককালে আবিস্কার করেছেন, প্রায় বৃহস্পতির মতোই বড় একটি শ্বেত গ্রহ আকাশগঙ্গায় (মিল্কি ওয়ে) নিজের কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এই ঘটনা থেকে সৌরবিজ্ঞানীরা বোঝার চেষ্টা করছেন যে, আমাদের সূর্য যদি কোনওদিন ধ্বংস হয়ে যায়, তাহলে কী হতে পারে? এই গবেষণা করার জন্য বিজ্ঞানীরা LAMOST (Large Sky Area Multi-Object Fiber Spectroscopic Telescope) ব্যবহার করেছেন। গবেষণাটি যৌথভাবে করছে কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এবং ডাচ ন্যাশনাল অফ অবজারভেটরি-এর গবেষকরা। এই টেলিস্কোপটি বসানো রয়েছে নেদারল্যান্ডে। সম্প্রতি উক্ত টেলিস্কোপ দিয়ে ইতিউতি ঘুরে বেড়ানো গামা রশ্মি তাঁদের নজরে এসেছে। তাঁদের মতে, এগুলো মৃত তারাদের থেকেই নির্গত হয়েছে।


গবেষকদের এই গবেষণাপত্র সম্প্রতি প্রকাশিত হয়েছে নেচার অ্যাস্ট্রোনমি জার্নালে। এই গবেষক দলের অন্যতম লেখক এবং বিজ্ঞানী ড. বেঞ্জামিন পোপ বলেছেন, 'চারখানা ফিকে লালচে তারা আকাশগঙ্গায় গামা রশ্মি নির্গত করছে। এই যুক্তিতে ওদের গ্রহদেরও অস্তিত্ব থাকার কথা। যারা ওই তারাগুলোকে প্রদক্ষিণ করছে। ঠিক আমাদের সৌরজগতের মতোই সবকটা গ্রহ থেকেই কিছু রেডিও তরঙ্গ নির্গত হয়। যা একে অপরকে চুম্বক শক্তির দ্বারা বেঁধে রাখে।' এই গবেষক দলের প্রধান লেখক এবং বিজ্ঞানী ড. জোসেফ ক্যালিংহাম বলেছেন, 'ওই মৃত তারাগুলো এবং তাদেরকে প্রদক্ষিণ করতে থাকা গ্রহদের এখনও দেখতে না পাওয়া গেলেও অস্তিত্ব অনুভব করা যাচ্ছে। এটা যেন অনেকটা সৌর জগতের বৃহস্পতি এবং তার উপগ্রহর সম্পর্কের মতো।'


গবেষকদের একটি দল হাওয়াই দ্বীপ থেকে নজর রাখছিল আকাশগঙ্গার ঠিক মাঝামাঝির দিকে অবস্থিত একটি সাদা বামন তারার দিকে। ওই বামন তারাটি যদিও মৃত। কিন্তু সেটিকে কেন্দ্র করে প্রায় বৃহস্পতির আকারের একটি গ্রহ তাকে প্রদক্ষিণ করে যাচ্ছে। এই গবেষণাপত্রের মূখ্য লেখক এবং বিজ্ঞানী জোসুয়া ব্ল্যাকম্যান বলেছেন, 'যদি কোনও তারা ধ্বংস হয় বা মৃত হয়, তাহলে তার গ্রহদের পাঁচ-ছয় বিলিয়ন বছর পরও অস্তিত্ব থাকা সম্ভব। কিন্তু সেই গ্রহগুলোকে অবশ্যই নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।' তিনি বোঝাতে গিয়েছে জানাচ্ছেন, ধরা যাক, আমাদের সূর্য কোনওদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। তাহলে সবার আগে সূর্য তার গোটা শরীরে ছড়িয়ে থাকা সমস্ত জ্বালানি একত্রিত হয়ে বিস্ফোরণ ঘটাবে। এবং বিস্ফোরণ ঘটিয়ে একটি লাল শক্তিধর দৈত্যতে পরিণত হবে। যদি তাই হয়, সেক্ষেত্রে বৃহস্পতি এবং শনি দুটো গ্রহই সেসময়ে বেঁচে থাকতে পারে। কিন্তু পৃথিবীর বেঁচে থাকার কোনও সুযোগ নেই বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তাঁরা।