কলকাতা : চায়ের আড্ডা আর বাঙালি, একেবারে একে অপরের পরিপূরক বললে অত্যুক্তি হয় না। পাড়ার রোয়াক থেকে বৈঠকখানা, চা ছাড়া নির্ভেজাল আড্ডা আর কোথায়ই বা জমে ! যে চায়ে নানা নস্ট্যালজিয়া জড়িয়ে, সেই চা খালি পেটে খাওয়া খারাপ না ভাল, হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন ? কারণ, বিশেষজ্ঞদের একাংশের কিছু মতামত। যে মত অনুযায়ী, চা খাওয়া ভাল। নানা উপকারও আছে তাতে। তবে ঘুম থেকে উঠে এক্কেবারে  খালি পেটে চায়ের কাপে তৃপ্তির চুমুক দেন যাঁরা, তাঁদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন। মোটেও স্বাস্থ্যকর নয় তা।  


চা না হলে সকালটা আর সকাল থাকে নাকি !


মনে এমনটা হলেও খালি পেটে চা-টা এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শই দিচ্ছেন এক বিশেষজ্ঞ। ডায়েটিশিয়ান বিধি চাওলা আইএএনএস লাইফকে জানিয়েছেন, দিনের শুরুতে একদম খালি পেটে চা খেলে অ্যাসিডিটি বেড়ে গিয়ে গোটা দিনই একদম মাটি হয়ে যেতে পারে। গড়বড় করতে পারে পেট।  ব্যাঘাত ঘটতে পারে হজমে। চায়ে স্থিত ক্যাফেইনের কারণে পাকস্থলীতে অ্যাসিডের পরিমাণ বেড়ে গিয়ে অস্বস্তি বাড়তে পারে। প্রভাব পড়তে পারে শরীরের স্বাভাবিক কর্টিসোল হরমোন নির্গমনে। 


বিধি চাওলার মতে, কর্টিসোল হরমোন শরীরের স্লিপ সাইকেলকে নিয়ন্ত্রণ করে সারাদিনের চলার পথে প্রয়োজনীয় শক্তি জোগায়। সকালে খালিপেটে ক্যাফেইন, কর্টিসোল হরমোন নির্গমন ক্ষমতার উপর প্রভাব ফেলে। যাতে করে ক্লান্তি ঘিরে ধরে শরীরকে। ভাল লাগে না কিছুই।   
 
সকালে খালি পেটে চায়ে চুমুকের অন্য কয়েকটি ক্ষতিকর প্রভাবের উল্লেখও রয়েছে বিধি চাওলার সাক্ষাৎকারে ।


পাকস্থলীর সমস্যা : স্টোম্যাক লাইনিংয়ে সমস্যা দেখা দেয় ঘুম থেকে উঠেই খালি পেটে চা খেলে। ফল - সারাদিন অবাঞ্ছিত ঢেকুর, পেট ফাঁপা, গা বমি ভাব। 


ডিহাইড্রেশন : চায়ে প্রস্রাবের পরিমাণ বাড়ে। ফলে শরীর থেকে অতিরিক্ত জল বেরিয়ে যাওয়ার প্রবণতা থাকে। বিশেষ করে, সকালে যখন এমনিতেই শরীর প্রায় জলশূন্য অবস্থায় থাকে, খালি পেটে চা বিপদ আরও বাড়িয়ে দিতে পারে। জলশূন্যতা থেকে নানা সমস্যা তৈরি হয়ে যেতে পারে দ্রুত। 


পুষ্টি শোষণে বিপত্তি : চায়ে থাকে ট্যানিন। যা আয়রন, ক্যালসিয়ামের মত মিনারেলকে শরীরে স্বাভাবিক শোষণ থেকে ব্যাহত করে।   


দাঁতের সমস্যা : চা-স্থিত প্রাকৃতিক অ্যাসিড টুথ এনামেলকে ক্ষতিগ্রস্ত করে, বিশেষ করে দীর্ঘদিন ধরে বেশি বেশি চা গ্রহণে এনামেলের ক্ষতির চূড়ান্ত সম্ভাবনা থাকে। 


টি টাইমের হাই টাইম


তাহলে  ? চা কি ব্রাত্য হবে ? তা কেন । পুষ্টিবিদ পূজা মাখিজার মতে, এক্কেবারে সকালে না হলেও ব্রেকফাস্টের পরে চা দিব্যি খাওয়া যেতে পারে। হজম প্রক্রিয়া পুরোদমে শুরু হচ্ছে যখন, তখন চা চলতেই পারে। দুর্দান্ত একটা সকালকে দুর্দান্ত দিনে রূপ দিতে তাঁর আরও পরামর্শ, সকালে বাটারমিল্ক বা হিমালয়ান পিঙ্ক সল্ট সহযোগে হালকা গরমজল শরীরকে চনমনে করে দেবে। দীর্ঘক্ষণ ঘুমের পর দিনটা লেবুজল বা মেথি-জল দিয়ে শুরু করা যেতে পারে। অথবা তালিকায় থাকতে পারে অ্যালোভেরা জ্যুস বা ডাবের জল। খাওয়া যেতে পারে মধু। জলে কয়েক ফোঁটা অ্যাপল সিডার ভিনিগার বা কোকোনাট ভিনিগারের সেবনও দিনটাকে ভাল করে তুলবে। অতএব, চা থাকুক সকালে তবে চা দিয়ে দিনের শুরুটা না হলেই ভাল। 


ডিসক্লেইমার : কপিতে উল্লেখিত দাবি, পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপদ্ধতি/ডায়েট ফলো করার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ / চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ও সেইমতো নিয়ম মেনে চলুন।


আরও পড়ুন : কেন দেখা দেয় স্ট্রেচ মার্ক? কীভাবে দূর করবেন এই দাগ?