চিকিৎসকরা বলছেন, স্থবির জীবনযাত্রাই নাকি স্বাস্থ্যের শত্রু। কারণ, বসে-বসে কাজই ওজন বাড়ানোর অনুঘটক। আর স্থূলতাই তো যত নষ্টের গোড়া। এটা শুনে অনেকেই রাতারাতি হয়ে উঠছেন ফিটনেস ফ্রিক। যিনি বসে-বসেই দিন কাটিয়ে দিতেন তিনিই হঠাৎ দৌড়তে শুরু করছেন, গা ঘামাচ্ছেন জিমে। আর তাতেই হঠাৎ ঘটছে বিপদ। ইদানিং কালে শরীরচর্চা করতে করতে বা মর্নিং ওয়াক করতে করতে হঠাৎ মৃত্যুর ঘটনা শোনা যাচ্ছে আকছার। কম বয়সে সাডেন কার্ডিয়াক ডেথ যেন বেড়ে গিয়েছে হঠাৎ করেই। কিন্তু সত্যিই কি হঠাৎ , নাকি এর শিকড় অনেক গভীরে? এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন, চিকিৎসক সঞ্জয় সেনগুপ্ত, (Consultant, Cardio Thoracic Vascular Surgery, Fortis Hospital, Anandapur) 

Continues below advertisement

এ ধরনের ৯০% মৃত্যুই হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কিত

ব্যায়াম করতে করতে হঠাৎ মৃত্যু নিঃসন্দেহে একটি ভয়াবহ ঘটনা। চিকিৎসক বলছেন,   এই ধরনের মৃত্যুগুলির প্রায় ৯০% ঘটনাই হৃদরোগের সঙ্গে সম্পর্কিত। আর কয়েকটি ক্ষেত্রে সমস্যার শিকড় brain aneurysm rupture, স্ট্রোক বা খিঁচুনি। ৪০ বছরের কম বয়স যাঁদের, তাঁদের ক্ষেত্রে এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনার পিছনে আসল শত্রু হল হার্টে সায়লেন্ট ইলেকট্রিক্যাল ডিসটার্বেন্স।  অনেক ক্ষেত্রে আবার hypertrophic cardiomyopathy র মতো সমস্যাও এর কারণ । এই সমস্যাগুলো বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মানুষের অজানাই থেকে যায়। হয়ত কোনও খেলাধুলো বা শারীরিক কসরতের সময় একজনের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়ে হঠাৎ মৃত্যু ঘটল,তখনই বিষয়টি সামনে আসে। আর ৪০ এর বেশি যাঁদের বয়স, তাঁদের ক্ষেত্রে সাধারণ কারণ হল করোনারি আর্টারি ডিসিজ। অনেকে নিজেকে স্বাস্থ্যবান মনে করলেও, তলে তলে তাঁর হার্টের কোনও ধমনীতে ব্লকেজ থেকে থাকতে পারে। খুব কায়িক পরিশ্রম, খেলাধুলো বা জিমে কসরত করার সময় তা ফেটে গিয়ে ভয়ঙ্কর হার্ট অ্যাটাক ঘটায়, যা মৃত্যুও ঘটাতে পারে। 

Continues below advertisement

কীভাবে আটকাবেন  কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট

চিকিৎসকরা বলছেন, সময়মতো স্ক্রিনিং করলে এই মৃত্যুগুলো আটকানো যেতে পারে।   ইসিজি এবং ইকোকার্ডিওগ্রাফির মতো সহজ, প্রচলিত পরীক্ষাগুলো কিন্তু হৃদপিণ্ডের স্বাস্থ্য সম্পর্কে যথেষ্ট ইঙ্গিত দেয়। এছাড়া নিয়মিত রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড ফাংশন পরীক্ষা করতে হবে। এছাড়া কোলেস্টেরলের পরীক্ষাও করতে হবে নিয়ম মতো। 

কী কী লক্ষণ দেখলে সতর্ক হতে হবে

এছাড়া কারও যদি কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পারিবারিক ইতিহাস থাকে, তাহলে তাদের আরও বেশি করে সতর্ক থাকতে হবে। সেই সঙ্গে অল্প বয়সে হঠাৎ টাক পড়া বা চুল পেকে যাওয়ার মতো সমস্যাও উপেক্ষা করা চলবে বা। এর সঙ্গে যদি কেউ স্থূলকায় হন বা উচ্চ রক্তচাপের রোগী হন, তাহলে সতর্ক থাকুন ও নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করান। 

জীবনযাত্রা কেমন হওয়া দরকার

হালকা ব্যায়াম, হাঁটা , অবশ্যই প্রয়োজন , তবে কেউ যদি ৩০ বা ৪০ বছর বয়সে ব্যায়াম করা শুরু করেন হঠাৎ করে, বা জিম-জয়েন করার সাধ হয়, তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিন। বিজ্ঞাপন দেখে বা বন্ধুদের সার্টিফিকেট শুনে  ঝাঁপিয়ে পড়বেন না। ডাক্তারের পরামর্শ নিন। স্ক্রিনিং করান। ধীরে ধীরে শুরু করুন।  তাড়াহুড়ো করে শারীরিক কসরত শুরু করার পরিবর্তে ধাপে ধাপে শুরু করুন।  নইলে হঠাৎ বড় বিপদ হতে পারে। 

কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট আর স্ট্রোক এক নয়

অন্যদকে , স্ট্রোক মূলত ঘটে মস্তিষ্কে। মস্তিষ্কের কোনও রক্তনালী ব্লক হলে বা ফেটে গেলে স্ট্রোক ঘটে। কারণ তখন মস্তিষ্কের নির্দিষ্ট জায়গায় অক্সিজেন ও রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে। এর ফলে মস্তিষ্কের ক্ষতি হয়। পক্ষাঘাত হতে পারে। মস্তিষ্কের কোন অংশ আক্রান্ত হয়েছে , তার উপর নির্ভর করে স্ট্রোকের উপসর্গ। এর মধ্যে রয়েছে, একদিকের হাত বা  পায়ে হঠাৎ দুর্বলতা বা পক্ষাঘাত, কথা জড়িয়ে যাওয়া,চোখ ঝাপসা হয়ে যাওয়া,অসাড়তা বা ভারসাম্য হারানো ইত্যাদি। এক্ষেত্রে সময়টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্ট্রোকের চিকিৎসা শুধুমাত্র প্রথম কয়েক ঘন্টার মধ্যেই সবচেয়ে কার্যকর। 24 ঘন্টার বেশি অপেক্ষা করার অর্থ সমস্যা অনেকটাই হাতের বাইরে বেরিয়ে যাওয়া । এমআরআই বা সিটি স্ক্যানের মতো উন্নত ইমেজিংয়ের মাধ্যমে প্রথম ঘন্টার মধ্যেই স্ট্রোক নিশ্চিত করা যায় এবং জরুরি চিকিৎসা শুরু করা যায়। তাতে বড় ক্ষতি প্রতিরোধ করা যায়। 

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, রক্তচাপ, ডায়াবেটিস এবং কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ, ধূমপান এড়ানো এবং একটি স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে অনেক সাহায্য করে। যাদের ইতিমধ্যেই ইস্কেমিক স্ট্রোক হয়েছে তাদের রক্ত ​​পাতলা করার ওষুধ খাওয়া আবশ্যক। তবে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে। 

এবং কিছু ক্ষেত্রে, কার্ডিওলজি মূল্যায়ন পুনরাবৃত্তি প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে। মনে রাখবেন: স্ট্রোক একটি জরুরি অবস্থা, কিন্তু সময়মতো রোগ শনাক্তকরণ, দ্রুত হাসপাতালে চিকিৎসা এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের মাধ্যমে, অনেক জীবন বাঁচানো এবং অক্ষমতা হ্রাস করা সম্ভব।