কলকাতা: মাঝে মাঝেই ঋতুস্রাব সময় মতো হয় না। পরের মাসে যে তারিখে ঋতুস্রাব হওয়ার কথা, তার থেকে কিছু দিন পরে হয়। আবার কখনও কখনও অনেকটা আগে হয়ে যায়। অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যায় অনেকেই ভোগেন। এর জন্য কেউ কেউ আবার ওষুধও খান। অনেক সময় দেখা যায়, পিসিওস-এ (পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম) ভুগছেন বলেই হয়তো হচ্ছে এমনটা। কিন্তু সম্প্রতি আরেকটি কারণের খোঁজ দিলেন স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। 


অনিয়মিত ঋতুস্রাবের জন্য থাইরয়েডের সমস্যাও দায়ী হতে পারে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা। শুধু ঋতুস্রাব নয়, এই সমস্যার কারণে গর্ভধারণেও জটিলতা আসতে পারে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। চলতি মাসটি থাইরয়েড সচেতনতা মাস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। সেই প্রসঙ্গেই ঋতুস্রাব ও গর্ভধারণের এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় যোগ দিলেন চিকিৎসক।


থাইরয়েডের কী কাজ?


থাইরয়েড আমাদের গলায় থাকা একটি গ্রন্থি। এখানে ট্রায়োডুথাইরোনিন (টিথ্রি) ও থাইরক্সিন (টিফোর) হরমোন তৈরি হয়। এই দুটি উপাদান আমাদের শরীরের মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করে। পাশাপাশি এটি দেহে শক্তি উৎপাদন করে ও বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। 


থাইরয়েড কীভাবে প্রভাব ফেলে ঋতুস্রাবে?


আইএএনএস-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জাইনোভা শ্যালবি হাসপাতালের চিকিৎসক শ্বেতা লালগুডি বলেন, থাইরয়েডের সমস্যার কারণে শরীরে হরমোনের ভারসাম্য বিঘ্নিত হয়। এর ফলে অনিয়মিত ঋতুস্রাবের সমস্যা শুরু হয়। থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হলে হাইপোথাইরয়েডিজম ও হাইপারথাইরয়েডিজমের সমস্যা দেখা দিতে পারে। হাইপোথাইরয়েডিজম বলতে থাইরয়েড হরমোনের কম ক্ষরণকে বোঝানো হয়। অন্যদিকে হাইপারথাইরয়েডিজম বলতে থাইরয়েড হরমোনের বেশি ক্ষরণকে বোঝানো হয়। হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণে দেরিতে পিরিয়ড হয়। পাশাপাশি পিরিয়ডের সময় বেশি রক্তপাত হয়। অন্যদিকে হাইপারথাইরয়েডিজমের কারণে সময়ের আগে পিরিয়ড হয়। একই সঙ্গে পিরিয়ডের সময় অল্প রক্তপাত হয়।


থাইরয়েড প্রভাব ফেলে গর্ভধারণেও!


থাইরয়েডের কারণে গর্ভধারণেও জটিলতা দেখা দেয়। কী কারণে এই জটিলতা তৈরি হয়? চিকিৎসক শ্বেতা আইএএনএস-কে এই ব্যাপারে বিশদে জানান। তাঁর কথায়, এই থাইরয়েডের ভারসাম্য নষ্ট হলে অ্যানোভিউলেশন নামের একটি ঘটনা ঘটে। এতে ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হয় না। ফলে শুক্রাণু জরায়ুতে প্রবেশ করলেও ডিম্বাণু নিষিক্ত হয় না। যার ফলে গর্ভধারণের প্রাথমিক শর্ত পূরণ হয় না।


থাইরয়েড টেস্ট জরুরি


থাইরয়েড হরমোনের ভারসাম্য ঠিক রয়েছে কি না বুঝতে নিয়মিত থাইরয়েড পরীক্ষা করা জরুরি। এই পরীক্ষা করার সময় টিথ্রি, টিথ্রিফোরইউ, টিফোর, টিএসএইচ হরমোনের লেভেল পরীক্ষা করা হয়। এই পরীক্ষগুলি করিয়ে নিলে থাইরয়েড গ্রন্থির সামগ্রিক স্বাস্থ্য কেমন রয়েছে তা জানা যায়। এর পর কোনও সমস্যা ধরা পড়লে সেই মতো চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।


তথ্যসূত্র - আইএএনএস


আরও পড়ুন : নাক দিয়ে জল পড়া মানেই সর্দি নয় ! হতে পারে টিউমর বা মস্তিষ্কের বিশেষ অংশে ফাটলও