কলকাতা: শীত পড়তেই হার্টের নানা রোগ বাড়তে শুরু করেছে। এই সময় হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুর হারও বেড়ে যায়। যাদের হার্টে ব্লকেজ রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে এই আশঙ্কা বেশি। আর এই হার্ট ব্লকেজের পিছনে অন্যতম দায়ী উপাদানটি হল কোলেস্টেরল। হার্টের চিকিৎসকরা প্রায়ই লিপিড প্রোফাইল পরীক্ষা করতে দেন। কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রাখার পরামর্শ দেন। কিন্তু এই কোলেস্টেরল কি আদৌ শরীরের জন্য খারাপ? ঠিক কোন ধরনের কোলেস্টেরল শরীরের ক্ষতি করে? এই ব্যাপারেই এবিপি লাইভের সঙ্গে বিশদে কথা বললেন বিএম বিড়লা হার্ট রিসার্চ সেন্টারের চিকিৎসক ধীমান কাহালি।
কোন ধরনের কোলেস্টেরল হার্টের জন্য বিপজ্জনক (Cholesterol bad for heart) ?
কোলেস্টেরল আসলে দুই ধরনের হয়। একটি হল এলডিএল কোলেস্টেরল যার পুরো নাম লো ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন অর্থাৎ কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল এটি। অন্যটি এইচডিএল বা হাই ডেনসিটি লিপোপ্রোটিন অর্থাৎ বেশি ঘনত্বের কোলেস্টেরল। চিকিৎসকের কথায়, এর মধ্যে কম ঘনত্বের কোলেস্টেরল অর্থাৎ এলডিএল কোলেস্টেরল হার্টের জন্য বিপদ ডেকে আনে। হার্টের রোগে সারা বিশ্বে যত মৃত্যু হয়, তার অধিকাংশই এই এলডিএল কোলেস্টেরলের কারণে হয়ে থাকে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, প্রতি ডেসিলিটার রক্তে ৪০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল কমানো গেলে হার্টের রোগে মৃত্যুর আশঙ্কা ২১ শতাংশ পর্যন্ত কমতে পারে। অন্যদিকে আরেক ধরনের কোলেস্টেরল এইচডিএল কোলেস্টেরলকে হার্টের জন্য় নিরাপদ বলে মনে করা হয়। তাই এই কোলেস্টেরল সমৃদ্ধ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন অনেকে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, এই বিষয়েও খুব সীমিত সংখ্যক গবেষণা হয়েছে।
এলডিএল কোলেস্টেরল (LDL Cholesterol) কেনই বা বিপজ্জনক ?
চিকিৎসক ধীমানের কথায়, বেশ কিছু গবেষণায় দেখা গিয়েছে, এই নির্দিষ্ট কোলেস্টেরলের কারণে ম্যাসিভ হার্ট অ্যাটাক (heart attack) হয়। যার ফলে প্রায়ই হার্ট ফেলিওর হয়ে রোগী মারা যান। অন্যদিকে, হার্টের নানা রোগসহ কার্ডিয়োভাসকুলার ডিজিজও এই কোলেস্টেরলের কারণে বেশি হয়।
কোন ধরনের খাবারে কোলেস্টেরল বেশি?
- ডিপ ফ্রায়েড ফাস্ট ফুড: ডিপ ফ্রায়েড খাবারের প্রতি কমবেশি অনেকেরই টান রয়েছে। এই ধরনের খাবারে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বেশি যা হার্টের সমস্যা ডেকে আনতে পারে।
- প্রসেসড ও রেড মিট: কোলেস্টেরলের অন্য়তম উৎস হল রেড মিট। স্তন্যপায়ী প্রাণীর মাংসকে রেড মিট বলা হয়। এতে ব্যাড বা খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেকটাই বেশি।
কীভাবে এড়াবেন ব্যাড কোলেস্টেরল
- ফ্যাটজাতীয় খাবার কম খান: খাবারের মধ্যে দুই ধরনের ফ্যাট আমাদের শরীরের ক্ষতি করে। এর একটি স্যাচুরেটেড ফ্যাট। অন্যটি ট্রান্স ফ্যাট। এই দুই ধরনের ফ্যাটি খাবারে কোলেস্টেরল বেশি থাকে। তাই এই ধরনের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে।
- অ্যাডেড সুগার কম খেতে হবে: অ্যাডেড সুগার রয়েছে এমন খাবারও এড়িয়ে চলতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে কেক, কোল্ড ড্রিঙ্কস জাতীয় খাবার।
- ডেয়ারি জাতীয় খাবার কম খান: ফ্যাটযুক্ত ডেয়ারি খাবার শরীরের জন্য বিপজ্জনক। কারণ এই ধরনের দুগ্ধজাত খাবারে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অনেকটাই বেশি থাকে। যা হার্টের বিপদ ঘটায়।
- নিয়মিত কোলেস্টেরল পরীক্ষা: রক্তের লিপিড প্রোফাইল নিয়ম করে পরীক্ষা করাতে হবে। হার্টের কোনও সমস্যা থাকলে এই পরীক্ষা বেশি জরুরি।
- খারাপ কোলেস্টেরল সীমিত রাখা: রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল ১০০ mg/dl-এর কম থাকলে তা শরীরের জন্য নিরাপদ। অন্যদিকে কোলেস্টেরলের পরিমাণ ১৩০ mg/dl-এর বেশি হলে তা বিপজ্জনক। কোলেস্টেরল যাতে নিরাপদ সীমার মধ্যে থাকে, সেদিকে নজর রাখতে হবে।
আরও পড়ুন - Standing while Eating: দাঁড়িয়ে খাবার খাওয়ার অভ্যাস রয়েছে ? অজান্তেই বড় রোগ ডেকে আনছেন না তো