থাইরয়েড একটি প্রজাপতি আকৃতির গ্রন্থি যা ঘাড়ের সামনের দিকে থাকে। এই গ্রন্থিটি T3 এবং T4 হরমোন নিঃসরণ করে। শরীরে এই হরমোনগুলো বিপাকক্রিয়াকে অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে। সাহায্য করে বৃদ্ধিতে। আবার কোষ মেরামতিতেও সহায়ক এই হরমোনগুলি। কোনও কারণে এই হরমোন ক্ষরণ মাত্রায় তারতম্য হলেই সমস্যা। থাইরয়েড দুই রকম। হাইপোথাইরয়েড (hypothyroidism ), হাইপারথাইরয়েড (hyperthyroidism) । দেখা গিয়েছে থাইরয়েডে আক্রান্ত বেশিরভাগই হাইপোথাইরয়েডিজমে আক্রান্ত।
থাইরয়েডে আক্রান্ত হলে সব সময় ক্লান্তি লাগা , কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বক শুষ্ক বোধ হওয়া, সামান্য ওজন বৃদ্ধি , চুল পড়ে যাওয়া, নখে ক্ষয় ধরা, মানসিক ভাবে ভেঙে পড়া , হৃদস্পন্দন ধীর হয়ে আসা , মেনস্ট্রুয়েশন সংক্রান্ত সমস্যা, মেজাজ ক্ষণে ক্ষণে পরিবর্তন হওয়ার মতো সমস্যা হয়।
থাইরয়েড ধরা পড়লে এই রোগের চিকিৎসা হল শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি মেটাতে কিছু ওষুধ খাওয়া। কিছু এমন ওষুধ রয়েছে। তবে ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিষ্ট ড. অনন্যা ভৌমিক জানাচ্ছেন, কিছু কিছু সবজি এক্ষেত্রে রোজকার খাবারে এড়িয়ে চলাই ভাল। হাইপোথায়রডিজমের ক্ষেত্রে যে খাবারগুলির দিকে হাত না বাড়ানোই ভাল, সেগুলি হল -
- ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য চেষ্টা করতে হবে ফ্যাটজাতীয় খাবার না খাওয়ার।
- ব্রোকলি (Broccoli)
- ফুলকপি ( Cauliflower )
- সয়াবিন ( Soy )
- বাঁধাকপি ( Cabbage )
- কেল ( Kale )
- রাঙা আলু ( Sweet potatoes )
- পিচ ( Peach )
- আয়োডাইজড নুন খেতে হবে।
- জিঙ্ক-রিচ ডায়েট খেতে হবে।
- গ্লুটেন ফ্রি ডায়েট করতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে ময়দা, আটা, পাঁউরুটি, নুডলস ইত্যাদি। বদলে খাওয়া যায়, কুইনোয়া কিংবা ব্রাউন রাইস। এছাড়া অনেকরকম ফল ও সবজি খেতে পারেন। যেমন, কর্ন, স্কোয়াশ, গাজর, বিনস, ফুলকপি, মিষ্টি আলু, ভুট্টা,মটরশুঁটি, সবুজ শাকসবজি ইত্যাদি। মাছ, চিকেন, টোফু , ডাল, বাদাম, এগুলোও চলতে পারে।
থাইরয়েড হলে কিছু কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় ভিটামিন ডির ঘাটতি, ম্যাগনেশিয়াম ও সিলিনিয়ামের ঘাটতি হতে পারে। ডায়েটে যাতে এই জিনিসগুলি থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
থাইরয়েড বিষয়ে বিশিষ্ট চিকিৎসক রুদ্রজিৎ পাল জানাচ্ছেন, থাইরয়েড হলেই মোটা হয়ে যায় মানুষ, শুধু তাই কিন্তু তা নয়। থাইরয়েডের জন্য মুখ বা হাত পায়ে ফোলাভাব আসতে পারে, কিন্তু কেউ অতিরিক্ত মোটা হয়ে গেলে জানতে হবে, সেই ওবেসিটির কারণ আলাদা। হাইপোথাইরয়েড থেকে সেরে ওঠা সম্ভব নয়। ওষুধের মাধ্যমে হরমোন রিপ্লেসমেন্টই এর একমাত্র সমাধান। অবশ্য হাইপার থাইরয়েডিজম সেরে যায়। হাইপার থাইরয়েডিজম চিকিৎসা না করে ফেলে রাখলে হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে মৃত্যুও ঘটতে পারে।