নয়াদিল্লি: করোনার (Coronavirus) আবহে গৃহবন্দি বিশ্ববাসী যখন রোগের সঙ্গে প্রাণপনে লড়াই চালিয়েছে, সেই সঙ্গে বদল ঘটেছে তাঁদের জীবনযাত্রাতেও। এই দুই বছরে হাজার হাজার সন্তান হারিয়েছে তাঁদের স্বাভাবিক শৈশব। স্কুলে যাওয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সামনে বসে পড়া শোনা, বন্ধুবান্ধবদের সঙ্গে আলাপ-খুনসুটি, ভাগ করে টিফিন খাওয়া, মাঠে নেমে খেলাধুলো, নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করা, সবই যেন সুদূর অতীতের গল্প হয়ে উঠেছিল। সবকিছুই এসে সীমাবদ্ধ হয়েছিল কম্পিউটার বা মোবাইল স্ক্রিনে। ফলে টেকনোলজির ওপর তাঁদের নির্ভরতা বেড়েছে। কিন্তু 'কমিউনিকেশন স্কিল' (communication skill) বলতে যা বোঝায়, অর্থাৎ সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলা, নতুন মানুষ চেনা, সেই সমস্তেই ঘাটতি হয়েছে। বিভিন্ন সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন যে অতিমারীর জন্য ভার্চুয়াল শিক্ষা তাঁদের সন্তানদের অন্তর্মুখী (introverts) করে তুলেছে।


এক সমীক্ষায় দাবি, একাধিক অভিভাবকের অভিযোগ, এই অতিমারী তাঁদের সন্তানদের অনেক বেশি টেকনোলজি নির্ভর করে তুলেছে, এবং একইসঙ্গে আসল মানুষ, পরিবেশ, বা আশেপাশের থেকে দূরে নিয়ে গেছে। 


এটা ঠিক কথাই, যে নতুন মানুষের সঙ্গে সাক্ষাৎ করা বা যে কারও সঙ্গে হঠাৎ কথোপকথন শুরু করতে সকলে পারেন না। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্করা এমন কোনও পরিস্থিতি বুদ্ধির সঙ্গে সামাল দিতে পারলেও, শিশুদের ক্ষেত্রে তা সত্যিই কঠিন। এবং স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যেক পিতা-মাতার এটা সবচেয়ে বড় দুঃস্বপ্ন, যে তাঁদের সন্তানদের বন্ধু তৈরি করতে বা নির্দিষ্ট সামাজিক পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিতে লড়াই করতে দেখা। আত্মসম্মান বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বন্ধুত্ব ও সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার গুরুত্ব অনেক। বন্ধুত্ব তৈরির অভ্যাস প্রয়োজন। এই সমস্ত কিছুর ক্ষেত্রে যদিও একেবারে অব্যর্থ কোনও উপায় থাকে না, কিন্তু নিম্নলিখিত কিছু উপায় আপনার সন্তানদের নতুন বন্ধু তৈরি করতে ও তাঁদের সঙ্গে রাখতে-থাকতে উৎসাহ জোগাবে।


প্রশ্ন করার অভ্যাস গড়ে তুলতে তাদের উৎসাহ দিন


বাচ্চাদের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতে উৎসাহ দিন। সংযোগ স্থাপনের সর্বশ্রেষ্ঠ উপায় হল এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করা যা বিশেষভাবে সেই ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত যার সঙ্গে শিশু যোগাযোগ স্থাপন করছে। আপনার সন্তানকে এমন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে উত্সাহিত করুন যার উত্তর হ্যাঁ বা না-এর চেয়ে বেশি হতে হবে।


ওঁদের পছন্দের কাজে নিজেও অংশ নিন


সামাজিক সাচ্ছন্দ্য বাড়ানোর ক্ষেত্রে এটা সর্বাগ্রে প্রয়োজন। শিশুর প্রিয় স্পোর্টস হোক, বা তার পছন্দের বাদ্যযন্ত্র বা তাঁর পছন্দের যে কোনও কাজে নিজেও অংশ নিন। পছন্দের কাজে পরিচিত কারও সঙ্গ পেলে তারা অনেক সহজভাবে মিশতে পারবে বাকিদের সঙ্গেও। 


সন্তানের সঙ্গে কথাবার্তা বেশি প্রয়োজন


শিশুরা যা দেখে প্রায়ই তাইই শেখে। ফলে তাঁরা যখন সবকিছু নজর করছে, শিখছে, সেই সময়ে আপনি ওদের সঙ্গে কীভাবে মিশছেন সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অন্যদের কথা মন দিয়ে শোনেন কি? সেটা শুনে বা প্রশ্ন শুনে কি তাতে অংশ নেন? পরিবার ও বন্ধুদের জন্য সত্যিকারের চিন্তা করেন কি? এই সবকিছুই বাড়ির খুদে সদস্যের নজরে পড়ে এবং তাদের ব্যবহারে প্রকাশ পায়। আপনি সন্তানের সঙ্গে বা আশেপাশের মানুষের সঙ্গে কীভাবে ব্যবহার করছেন বা মিশছেন তার বড় প্রভাব পড়ে শিশুদের ওপর। ফলে ভাল 'রোল মডেল' হয়ে ওঠা প্রয়োজন।


আরও পড়ুন: Healthy Food: সুস্থ শরীরে আয়ু বৃদ্ধি করতে চান? পাতে রাখুন এই খাবার


শিশুর সীমাবদ্ধতা বুঝুন এবং ওদের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হন


সকল শিশু সমান হয় না। কোনও কোনও বাচ্চা এমনও হয় যারা বেশি কথা বলে, সকলের সঙ্গে অনায়াসেই মিশে যায়। তাদের তুলনায় চুপচাপ কোনও শিশুর মিশতে পারার ক্ষমতা অনেকটাই কম হবে। এটা খুব স্বাভাবিক। ফলে আপনার শিশু কোন ধরনের পরিস্থিতিতে স্বস্তিতে থাকবে সেটা একেবারেই তার চরিত্রের ওপর নির্ভর করছে। আপনার সন্তান যদি অন্তর্মুখী হয়, তাহলে বাইরের জগতের সঙ্গে সহজে মিশতে তার সময়, সেটা মাথায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাকে জোর করবেন না, ছোট হলেও সাধারণ সম্মানটুকু তাদেরও প্রাপ্য। আপনার ব্যবহারে সামান্য অসম্মানও শিশুমনে চিরস্থায়ী ক্ষত সৃষ্টি করতে পারে। 


 


(ডিসক্লেইমার : কপিতে উল্লেখিত দাবি, পদ্ধতি পরামর্শস্বরূপ। প্রয়োজনীয় চিকিৎসাপদ্ধতি ফলো করার জন্য অবশ্যই বিশেষজ্ঞ / চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন ও সেইমতো নিয়ম মেনে চলুন।)