নয়াদিল্লি: শেষ কবে আপনি কাজে যাওয়ার সময় বাসে বা মেট্রোয় ভিড় ঠেলে উঠেছেন, মনে পড়ে? অথবা, শেষ কবে অফিস মিটিংয়ের কথা চিন্তা না করে বারান্দায় সকালের মিঠে রোদে গা ভাসিয়েছেন?
প্রথমে মনে হবে, অতিমারীকালে লকডাউনের ফলে স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় আর যা যা বড় পরিবর্তন এসেছে, সেই তুলনায় এগুলি তুচ্ছ, নগণ্য়। কিন্তু, এই ছোট ছোট বিষয়গুলি শরীরে ও মনে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলে। যার অন্যতম ফল হল ভিটামিন ডি ঘাটতি।
বাড়িতে দির্ঘদিন থাকার ফলে, মানুষ অলস হয়ে পড়েছে, ফলত শরীরের ওজন বেড়ে যাওয়া বা একাধিক ভিটামিনের স্বল্পতা দেখা দেওয়াটা স্বাভাবিক। রোদে বের হওয়া বন্ধ হওয়ার ফলে, একইসঙ্গে হাড়ের স্বাস্থ্য় ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
পুষ্টিবিদ তথা 'ফ্যাট টু স্লিম'-এর প্রতিষ্ঠাতা শিখা শর্মার মতে, ভিটামিন ডি হাড়কে মজবুত রাখতে সাহায্য় করে। শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। একইসঙ্গে, ক্যান্সার রোধেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ভিটামিন ডি।
ভিটামিন ডি-র গুরুত্ব
হার্টের সমস্যা থেকে শুরু করে উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, ব্যাকটেরিয়াজাত সংক্রমণ, ইমিউনিটি ডিসর্ডার, বয়সের তুলনায় বুড়িয়ে যাওয়া, কয়েকটি ধরনের ক্যান্সার ও মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস জাতীয় সমস্যা রোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ভিটামিন ডি।
ভিটামিন ডি স্বল্পতার উপসর্গ
প্রাথমিকভাবে, শরীরে ভিটামিন ডি-র অভাবে কোনও বিশেষ উপসর্গ দেখা দেয় না। কিন্তু, ঘাটতি বেড়ে গেলে পেশিতে ক্র্যাম্প, পিঠে ব্যথা, ক্লান্তিভাব, বিষণ্ণতা ও ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।
বাড়িতে থেকে কী করে ভিটামিন ডি-র ঘাটতি মেটাবেন?
সূর্যের রশ্মি হল ভিটামিন ডি-র সবচেয়ে বড় উৎস। প্রত্যেকের উচিত প্রতিদিন ভোরে অন্ততপক্ষে ১৫-২০ মিনিট রোগ পোহানো।
ভিটামিন ডি-তে ভরপুর, এমন অনেক খাবার আছে। যেমন -- কড লিভার অয়েল, ধনে, কমলালেবু, টক দই, চিজ, রসুন, ডার্ক চকোলেট, কালো সর্ষে, মাশরুম, হলুদ ও কাশ্মীরি রসুন (এক-কোয়ার রসুন)। এগুলি স্বাভাবিকভাবে শরীরের রোগ-প্রতিরোধ শক্তি গড়ে তোলে।
এছাড়া, ভিটামিন ডি ক্যাপসুল বা সাপ্লিমেন্টও পাওয়া যায় ওষুধের দোকানে। তবে, এসব গ্রহণ করার আগে অবশ্যই একবার চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াটা জরুরি।
ভিটামিন ডি-তে ভরপুর খাবার কীভাবে গ্রহণ করা উচিত
প্রতিদিন সকালে খালি পেটে বা রাতের আহারের পর সাধারণ রসুনের দু'কোয়া অথবা ৪-৫টি এক-কোয়া রসুন খাওয়া উপকারী।
প্রতিদিন অল্প পরিমাণ ডার্ক চকোলেট খেলে শরীরে ভিটামিন ডি-র পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে।
সপ্তাহে একদিন মাশরুম খেলে শরীরে ভিটামিন ডি-র ভারসাম্য বজায় থাকবে। এছাড়া বাজরা বা রাগি দিয়ে তৈরি রুটি খেলেও শরীরে ভিটামিন ডি-র পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
কালো সর্ষে ও অর্ধেক চামচ হলুদ গুঁড়ো খেলে শরীরে ভিটামিন ডি-র মাত্রা বাড়ে।
বেশি ভিটামিন ডি কি ক্ষতিকারক?
এমনিতে, ভিটামিন ডি-র ক্ষতিকারক দিক খুব একটা বেশি নেই। কিন্তু, অতিরিক্ত ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট সেবনে শরীরের ক্ষতি হতে পারে। অনেকক্ষেত্রে হাইপারক্যালসেমিয়া দেখা দিতে পারে। উপসর্গ- বমি ভাব, তৃষ্ণা বৃদ্ধি এসইসঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি এবং ক্ষুধা হ্রাস।
তবে, প্রতিদিন মরশুমি সবজি-ফল ও বাড়িতে তৈরি খাবার খেলে কোনও ক্ষতি নেই।