- আচ্ছা, ওজন ঝরাতে আবার এত কষ্ট করতে হবে! চটজলদি কিছু হবে না?
- হাঁটতে হবে, ক্যালরি মেপে খেতে হবে, অনেক সময় লেগে যাবে তো রোগা হতে....
- আমার সামনেই বিয়ে বাড়ি...আমায় এখনই রোগা করে দিন
এমন হাজারো অনুরোধের ডালি তিনি রোজই সামলাতেন। এখন আবার নতুন এক সংযোজন , 'অত কষ্ট করতে পারব না, আমায় মুঞ্জারো বা ওজেমপিক দিয়ে দিন না...সবাই তো এভাবেই এখন রোগা হচ্ছে ।'
ডায়াবেটিসের রোগীদের খিদে নিয়ন্ত্রণ করে, ওজন কমিয়ে ব্লাড সুগার বাগে আনার 'অপেক্ষাকৃত মূল্যবান' ট্রিটমেন্ট এখন যেন ডাল-জল-ভাত ! শুধু ওজন কমাতে এসব ইঞ্জেকশন নেওয়ার বায়নাক্কা নিয়ে নিউট্রিশনিস্টের চেম্বারে আসছেন এখন বহু মানুষ। ভারতের বাজারে পা রাখার কয়েক মাসের মধ্যেই, অতিরিক্ত দাম হওয়া সত্ত্বেও, শর্টকাটে রোগা হওয়ার লক্ষে মুঞ্জারো বা ওজেমপিক নেওয়ার আবদার নিয়ে চলে আসছে বহু মানুষ। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না ভেবেই। কিন্তু এই দুই ওষুধে ওজন কমানো কি আদৌ
স্বাস্থ্যকর? ঝটপট ওজন কমিয়ে ফেলার আছে কি কোনও বিকল্প পথ? এবিপি লাইভের সঙ্গে আলোচনায় ড.অনন্যা ভৌমিক ( ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট, ফাউন্ডার, কোড ওয়েলনেস)।
ড.অনন্যা ভৌমিক মনে করছেন Ozempic (semaglutide)-র কিছু সাধারণ স্বল্পমেয়াদী (বা প্রাথমিক) পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া রয়েছে। যেমন বিপাকীয় কিছু সমস্যা হতে পারে। বমি বমি ভাব, বমি, ডায়রিয়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, পেটে ব্যথা, ফোলাভাব এবং পেট ফাঁপতে পারে ঘন ঘন। এরপর ডোজ বৃদ্ধি করলে এই বিপাক কাজে প্রতিকূল প্রভাবগুলি আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠে । তবে অনেক রোগীর শরীর আবার ধীরে ধীরে মানিয়েও নেয় এই ওষুধের সঙ্গে। এই ইঞ্জেকশন নিলে সবার আগে খিদে কমে যায়। তার ফলে খাওয়া কমে। এর ফলেই ওজনটা কমে। কিন্তু ক্যালরি ইনটেক কমে গেলে কারও কারও হালকা ক্লান্তি, মাথা ঘোরা, বা অস্থিরভাব লাগতে পারে। এছাড়া ইঞ্জেকশনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে লালভাব বা ফোলাভাব দেখা যায়। এছাড়া হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি থেকে যায়, যদি রেগী পাশাপাশি কোনও সুগার নিয়ন্ত্রণের ওষুধ খেয়ে নেন। যদিও পুষ্টিবিদ অনন্যার মতে, 'আমি কেবল ওজন কমানোর জন্য এই ওষুধ খাওয়া সমর্থন করি না, তবে আমি মনে করি, কারও যদি ডায়াবেটিস থাকে, সেই সঙ্গে স্থূলতা থাকে, তাহলে এটির পরামর্শ দেওয়া যেতে পারে। তবে এর ফলাফল সম্পর্কে আরও নিশ্চিত হতে অনেক ট্রায়াল করতে হবে। '
এবার আসা যাক ভারতে আরও এক নতুন ওষুধ Mounjaro-র বিষয়ে। যেহেতু মুঞ্জারো ভারতের বাজারে নতুন, তাই চিকিৎসক ও পুষ্টিবিদ-গবেষকদের হাতে প্রকৃত দীর্ঘমেয়াদী তথ্যের অভাব রয়এছে। পুষ্টিবিদ মনে করছেন, এমন ওষুধ থেকে ঝুঁকি বাড়ে। সবচেয়ে বড় সমস্যাটা শুরু হয়ে যায়, ডোজ বৃদ্ধির সময় । বিপাক ক্রিয়ায় পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। প্যানক্রিয়াটাইটিস, পিত্তথলির রোগ, কিডনির সমস্যা এবং থাইরয়েড-সম্পর্কিত সমস্যা আসতে পারে। তবে এসব ঝুঁকি খুবই বিরল। তবে সতর্কতা এবং নিয়মিত পর্যবেক্ষণ প্রয়োজন। অন্যান্য গ্লুকোজ-হ্রাসকারী এজেন্টের সঙ্গে ব্যবহার করলে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে; তাইসাবধানে সমন্বয় প্রয়োজন। দ্রুত ওজন হ্রাসের ফলে ষ্টির ঘাটতি, পেশী দুর্বল হয়ে পড়া, শরীরের গঠনে পরিবর্তন, ত্বকে পরিবর্তন আসতে পারে। থাইরয়েড ক্যান্সার, MEN2 সিন্ড্রোম, প্যানক্রিয়াটাইটিস, বা পিত্তথলির রোগ আছে যাঁদের, তাঁদের তো একেবারেই এড়িয়ে চলতে হবে এই ধরনের ওষুধ।