কলকাতা : অসহ্য এক যন্ত্রণা। চোখের পিছন থেকে যেন হাতুড়ি পেটা করার মতো আঘাত ( head ache )। ছটফট করা কয়েকটা ঘণ্টা বা কয়েক দিন। মাইগ্রেন ( Migraine ) । এই যন্ত্রণা মারাত্মক হলেও মনে রাখতে হবে মাইগ্রেন প্রাণঘাতী নয়। শরীরের মধ্যে কোনও লাম্প বা টিউমর বা অন্য কোনও সমস্যা তৈরি হয় না এসব ক্ষেত্রে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, মাইগ্রেনে আক্রান্তদের মেয়েদের সংখ্যাই বেশি। কারণ মাইগ্রেনের সঙ্গে জুড়ে আছে মেনস্ট্রুয়াল সাইকল। মেনস্ট্র্ুয়াল সাইকলের আগে বা পরে অনেকেরই মাইগ্রেন দেখা যায়। মেনস্ট্রুয়াল সাইকলের সঙ্গে হরমোনের গভীর সম্পর্ক আর তেমনই হরমোনের সঙ্গে মাইগ্রেনের যোগ। এই নিয়ে বিস্তারিত জানাচ্ছেন, স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আশিস দাস ( DM Neurology. Senior consultant Neurologist,  National Neurosciences Centre & Peerless Hospital )


মাইগ্রেন কাদের হয় : 



  • মাইগ্রেন প্রায়শই বয়ঃসন্ধিকালে শুরু হয় এবং ৩৫  থেকে ৪৫ বছর বয়সীদের মধ্যে বেশি দেখা যায়।  এটি মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। মহিলা ও পুরুষদের মধ্যে মাইগ্রেনের অনুপাত ২ : ১ । হরমোনের প্রভাবেই এমন যন্ত্রণা হয়। 

  • যাঁরা দীর্ঘদিন ধরে ঘুম থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন

  • যাঁরা অতিরিক্ত টেনশন করেন। 

  • ছোট বাচ্চাদের মধ্যে মাইগ্রেন বেশি হয় স্কুল ফোবিয়া থেকে বা টিনএজে অন্যরকম চিন্তা থেকে। 

  • যাঁদের মা-বাবা বা পরিবারের কারও মাইগ্রেন থাকলে সন্তানের এই অসুখ হতেই পারে। ৬০ শতাংশ ক্ষেত্রে মাইগ্রেন জেনেটিক।


মাইগ্রেন ( Migraine - Symptoms and causes ) হল এমন একটি মাথাব্যথা যা সাধারণত মাথার একপাশে প্রচণ্ড যন্ত্রণা দেয়।  মাথা যন্ত্রণার সঙ্গে দেখা দিতে পারে এই উপসর্গগুলি । ডা. আশিস দাস জানাচ্ছেন , এক্ষেত্রে



  •  ব্যথা এত তীব্র হতে পারে যে এটি আপনার দৈনন্দিন কাজকর্মে ব্যাঘাত আনতে পারে।

  • বমি বমি ভাব, গা গোলানো ভাব, আলো-শব্দ  অসহ্য লাগা

    ৮৫ শতাংশ ক্ষত্রে  এমনটাই মাইগ্রেনের লক্ষণ। এটাই জেনারেল মাইগ্রেন, যা সাধারণ প্যারাসিটামল খেয়ে, ভাল করে ঘুমিয়ে অনেকটা কেটে যায়। 

    কোনও কোনও খাবার মাইগ্রেনের কষ্ট বাড়িয়ে দেয়। যেমন - 


  • আজিনামোতো

  • চিজ

  • বাটার

  • চকোলেট

  • কফি

  • অ্যালকোহল খেলে অনেক সময় মাইগ্রেনের দাপট বেড়ে যায়। 

     ক্লাসিক মাইগ্রেন
    মাইগ্রেনের আগে থেকেই কিছু উপসর্গ দেখা যায় । যেমন - কিছু লোকের আবার মাথাব্যথার আগে চোখের সামনে সোনালি আলোর আভা দেখে। উপসর্গ সাধারণত ধীরে ধীরে শুরু হয়, কয়েক মিনিটের মধ্যে তৈরি হয় এবং ৬০ মিনিট পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। তারপর শুরু হয় তীব্র যন্ত্রণা। যাকে বলে ক্লাসিক মাইগ্রেন।  এক্ষেত্রে উপসর্গ দেখা দেওয়ার সাথে সাথে ওষুধ খেলে তবেই মাইগ্রেন আটকাতে পারে। নইলে নয়। 
    মাইগ্রেনের সঙ্গে আরও কিছু উপসর্গ থাকলে অনেক সময় সিটি স্ক্যান করাতে বলেন ডাক্তাররা। 




  •  মাইগ্রেনের আগে থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য, মেজাজ পরিবর্তন, অবসাদ ভাব, অতিরিক্ত ক্ষুধা, ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, প্রস্রাব বেড়ে যাওয়া, বার বার আড়মোড়া ভাঙা, চাক্ষুষ ঘটনা, যেমন বিভিন্ন আকার দেখা, উজ্জ্বল দাগ বা আলোর ঝলকানি, একটি বাহু বা পায়ে পিন এবং সূঁচ ফোটার মতো ভাব , মুখ বা শরীরের একপাশে দুর্বলতা বা অসাড়তা, কথা বলতে অসুবিধা হয় অনেকেরই। 




একটি মাইগ্রেন সাধারণত ৪ থেকে ৭২  ঘন্টা স্থায়ী হয় যদি চিকিত্সা না করা হয়। কত ঘন ঘন মাইগ্রেন হবে তা ব্যক্তি ভেদে পরিবর্তিত হয়। মাইগ্রেন খুব কমই ঘটতে পারে বা মাসে কয়েকবার হতে পারে। 


কখন ডাক্তার দেখাবেন
আপনার যদি নিয়মিত মাইগ্রেনের লক্ষণ এবং উপসর্গ থাকে, তাহলে তা মাইগ্রেনই কি না তা বলতে পারবেন একজন ডাক্তারই ।  মাইগ্রেন খুবই সাধারণ অসুখ। তবে খুব কষ্টকর। প্রতি পাঁচজনে একজন নারী, ১৬ জনের একজন পুরুষ এবং এমনকি ১১ জনের একজন শিশুকে প্রভাবিত করে। মাইগ্রেনের আক্রমণ মহিলাদের মধ্যে তিনগুণ বেশি হয়, সম্ভবত হরমোনের পার্থক্যের ফলে। অবশ্যই জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণগুলি মাইগ্রেন রোগের বিকাশে ভূমিকা পালন করে।


 



স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. আশিস দাস