২০২৩ এ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের স্লোগান ছিল Health For All. কিন্তু চিকিৎসকদের একাংশ মনে করছেন, এত সচেতনতা মূলক প্রচারের পরও ভারতীয় মহিলারা নিজেদের স্বাস্থ্য নিয়ে বড্ড উদাসীন। এর পিছনে কারণ কি সচেতনতার অভাব, নাকি একান্ত আর্থিক কারণেই নিজেদের অবহেলিত মহিলাদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা ? এই নিয়ে সমীক্ষা হয়েছে, হবেও। কিন্তু জেনে রাখা প্রয়োজন একেবারে বয়ঃসন্ধি থেকে প্রৌঢ়ত্ব পর্যন্ত, কতগুলি বিষয়ে খেয়াল না রাখলে তা অনিবার্য ভাবে বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে। এই নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করলেন, বিশিষ্ট চিকিৎসক রুদ্রজিৎ পাল।
- টিন-এজ থেকেই কতগুলি সমস্যা সম্পর্কে সচেতন হতে হবে। যেমন পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিনড্রোম বা এন্ড্রোমেট্রিওসিস জাতীয় সমস্যা দেখা দেয়। তার কিছু কিছু লক্ষণ থাকে। সেগুলির দিকে নজর রাখতে হবে। যেমন অনিয়মিত ঋতু, পিরিয়ড চলাকালীন অসহ্য যন্ত্রণা অথবা অত্যধিক ঋতুস্রাব - অস্বাভাবিক কিছু দেখলেই স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞের নজরে আনতে হবে। অনেকেই এমন বলে থাকেন, ' এই বয়সে তো এমনটা হয়'। এই সব উপদেশে কান না দিলেই ভাল। কারণ এই সমস্যাগুলি পরবর্তীতে গর্ভধারণ সংক্রান্ত সমস্যা ডেকে আনে। যেমন পলিসিস্টিক ওভারি থেকে পরবর্তীতে জটিল সমস্যা দেখা যায়।
- সেই সঙ্গে সার্ভাইক্যাল ক্যান্সার রোখার বিষয়টিও খেয়াল রাখতে হবে। চিকিৎসকের কাছে জেনে নিতে হবে এর প্রতিরোধক টিকার বিষয়ে। যা টিন এজে নিয়ে ফেলাই শ্রেয়।
- সেই সঙ্গে খেয়াল রাখতে হবে শরীরের ওজনের বিষয়টিও। কারণ ওবেসিটি থাকলে পলিসিস্টিক ওভারির মতো সমস্যা হয়ে থাকে। আবার পলিসিস্টিক ওভারি থাকলে ওজন বাড়ার প্রবণতা তৈরি হয়। এর থেকে ডায়াবেটিসের মতো সমস্যাও হতে পারে।
- আরও একটু বয়স বাড়লে জীবনে নতুন কিছু সমস্যা আসে। যেমন শারীরিত পরিশ্রম করে যায়। ফাস্ট ফুড খাওয়া বেড়ে যায়। জীবনে আসে স্ট্রেস। এর প্রভাব কিন্তু সরাসরি পড়ে শরীরে। এর থেকেও বেশ কিছু স্ত্রীরোগ হতে পারে।
- ২০ থেকে ৩০ এর মধ্যে অনেকেই পরিকল্পনার সময় সমস্যায় পড়েন আজকাল। তার শিকড় অনেক সময়ই নিহিত থাকে বয়ঃসন্ধিকালে অবহেলায়।
- ৪০ এর কোঠায় গিয়ে সমস্যা অন্যদিকে মোড় নেয়। মেনোপজের আগে বেশ কিছু সমস্যায় পড়েন মেয়েরা, যে সময়ে perimenopausal সমস্যাগুলি তৈরি হয়। এই সময়ে মহিলারা নিজেরাও নিজেদের সমস্যাগুলিকে অনেক সময় বিশেষ গুরুত্ব দেন না। চিকিৎসকের কাছে যান না। কিন্তু এই সময়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ প্রয়োজন। হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ছাড়াও আরও অনেক ট্রিটমেন্ট আছে।
- মেনোপজের পরে অনেকরকম সমস্যা হয়। তবে ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে লক্ষণীয় হারে বাড়ে অস্টিওপোরেসিস। ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে অ্যানিমিয়া, প্রোটিনের ঘাটতি, ভিটামিন ডি এর ঘাটতি তো থাকেই, তাই অস্টিওপোরেসিসের সমস্যা বাড়ে।
- মেনোপজের পরে হৃদরোগের সমস্যাও বাড়ে। তাই হার্টের কোনও সমস্য়াকেই অবহেলা করা যাবে না।
- এছাড়া প্রতিবছর ভয়ঙ্কর হারে বাড়ছে ব্রেস্ট ক্যান্সারের কেস। ৪০ বছরের পর থেকে প্রতিদিন নিজের ব্রেস্ট নিজে পরীক্ষা করার পাশাপাশি প্রতিবছর একটা করে ম্যামোগ্রাফি করা প্রয়োজন। মনে রাখতে হবে, যত তাড়াতাড়ি রোগ নির্ণয় হবে, তত তাড়াতাড়ি নিরাময় হবে।
- এছাড়াও ভারতীয় মহিলাদের ক্ষেত্রে থাইরয়েডের সমস্যা, ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি, প্রোটিনের ঘাটতি, ইত্যাদি দিকেও নজর রাখতে হবে।