কলকাতা: মানব ইতিহাসকে যদি কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। তাহলে তার মধ্যে অন্যতম একটি অংশ হবে রোগের অধ্যায়। মানবসভ্যতায় বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাবে নাজেহাল হতে হয়েছে মনুষ্য প্রজাতিকে। সেগুলির যদি তালিকা করা হয়, তাহলে অন্যতম উদ্বেগ এইচআইভি সংক্রমণ নিয়ে। এই ভাইরাসের সংক্রমণের কারণেই এইডস আক্রান্ত হতে পারেন কোনও ব্যক্তি।
এখনও বিশ্বের বিপুল অংশের মানুষ এই সংক্রমণে ভুগছেন। এই রোগের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে সামাজিক নানা বাধাবিপত্তি (Taboo)। যা এই রোগের চিকিৎসা আরও কঠিন করে দেয়। ফলে অধিকাংশ সময় স্বাভাবিক জীবনে ফিরতেই পারেন না আক্রান্ত ব্যক্তি। প্রতিবছর ১ ডিসেম্বর দিনটিতে বিশ্ব এইডস দিসব হিসেবে পালন করা হয়। এইচআইভি সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার বার্তা দিতে, সচেতনতা প্রচার করতে এবং যাঁরা এই সংক্রমণে মারা গিয়েছেন তাঁরাদের স্মৃতির উদ্দেশে প্রণাম জানাতে বেছে নেওয়া হয়েছে এই দিনটিকে।
এইডস আসলে কী?
AIDS -আদতে একটি ক্রনিক ইমিউন ডিজিজ। অর্থাৎ, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস হয়ে যায়। HIV-ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে এই রোগ হয়ে থাকে। যা বিভিন্ন রোগের সঙ্গে লড়ার জন্য শরীরের প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ শক্তিকে একেবারে ধ্বংস করে দেয়। মূলচ অসুরক্ষিত যৌন সম্পর্ক, এক সিরিঞ্জের বহু ব্যবহার, ছুরি বা ব্লেডের অসুরক্ষিত ব্যবহারের মাধ্যমে একজনের থেকে আর একজনের দেহে ছড়িয়ে পড়ে এইডস।
নানা সমস্যা:
শনাক্তরণ তো বরাবরই একটি সমস্যা। পাশাপাশি সচেতন করার সমস্যাও রয়েছে। অর্থাৎ আক্রান্ত হলে বিশেষ চিকিৎসা মেনে চললে এবং বিশেষ কিছু পদক্ষেপ মেনে চললে সহজেই তা কাটানো যাবে বাকি জীবন। এই ভাবনার প্রসার এখনও আশানুরূপ নয়। ফলে বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, অসাম্য-অসচেতনতার জন্য বিশ্বব্যাপী উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁডাচ্ছে এইচআইভি সংক্রমণ।
এই বছর কী থিম:
চলতি বছরে বিশ্ব এইডস দিবসের থিম ইকুয়েলাইজ (Equalize)। বিশ্বের সব নাগরিককে সচতেন করে বিশ্ব থেকে এইডস নির্মূল করার ডাক দেওয়া হয়েছে। বিশ্বে এইডস বা এইচআইভি আক্রান্তেপ চিকিৎসার যাবতীয় পরিকাঠামো যাবে সমানভাবে বণ্টিত হয় সেই দাবিও তোলা হয়েছে।
বহু আক্রান্ত, মৃত্যুও অনেক:
১৯৮৮ সালের ১ ডিসেম্বর প্রথম বিশ্ব এইডস দিবসের সূচনা হয়। সেই সময়ের হিসেব অনুযায়ী তখন বিশ্বে ৯০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ লোক এইচআইভি আক্রান্ত, যা থেকে এইডস হয়। তার দুই দশকের মধ্যে বিশ্বে অন্তত ৩৩ মিলিয়ন বাসিন্দা এইচআইভির সংস্পর্শে এসেছেন। ১৯৮১ সালে যখন প্রথম এইডস -এর কথা জানা গেল, তখন থেকে ২৫ মিলিয়ন লোক এর কারণে মারা গিয়েছেন। ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) এই দিনটি পালন করত। পরে UNAIDS-নামে একটি সংস্থা তৈরি হয় যারা বিশ্বব্যপী এই কাজ করে। ১৯৯৭ সালে সচেতনতা প্রসারের জন্য UNAIDS তৈরি করে World AIDS Campaign (WAC)।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, দূরে সরিয়ে রাখলে আদতে রোগ বৃদ্ধিকেই সাহায্য করা হয়। সচেতনতা প্রসার করলে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ প্রয়োজন। লুকিয়ে না রেখে ঠিক চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে চললে সহজেই সাধারণ জীবনযাপনে ফেরা যায়। পাশাপাশি কীভাবে সংক্রমণ ছড়ায়, তা খেয়াল রাখলেই দূরে রাখা যায় এইচআইভি সংক্রমণ।
আরও পড়ুন: পক্ষাঘাতগ্রস্ত গোটা শরীর, ডেঙ্গি থেকে সেরে উঠে বিরল রোগের শিকার হলেন এক ব্যক্তি