কলকাতা: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী গোটা বিশ্বে প্রতিবছর অন্তত ৮ লক্ষ মানুষ আত্মহত্যা করেন। এদের মধ্যে ১৭ শতাংশ আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ভারতে। সংখ্যাটা প্রায় দেড় লক্ষের কাছাকাছি। হু–এর রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতি এক লক্ষে ভারতে প্রায় ১৬.৪ শতাংশ মহিলার আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। যা বিশ্বের নিরিখে ষষ্ঠ। পুরুষদের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ২৫.৮ শতাংশ, যা বিশ্বের নিরিখে বাইশ তম স্থানে রয়েছে।
এসএসকেএম হাসপাতালের সাইকিয়াট্রিক এপিডেমিওলজি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রিয়াল দাসের কথায়, “হু-এর পরিসংখ্যান অনুযায়ী বিশ্বে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজনের আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। ভারতের মতো দেশে আত্মহত্যার অন্যতম কারণ অবসাদ। অ্যাক্সেপটেন্স এবং রিজেকশনের কারণে ভারতে সবথেকে বেশি স্টুডেন্ট সুইসাইডের ঘটনা ঘটে। ১৩ থেকে ১৬, টিনেজদের মধ্যে আজকাল আত্মহত্যার প্রবণতা সর্বাধিক লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তাছাড়াও ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়স, যেখানে কেরিয়ারে সফল না হওয়ার ভয় থেকেও আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। আমেরিকায় যেমন ৬০ থেকে ৭০ বছরের মানুষদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা যায়, আমাদের দেশে সেটা তুলনায় কম। এর কারণ আমাদের সংস্কৃতি, পারিবারিক ও সামাজিক অভ্যাস। তবে দেশে একাকিত্বের কারণেও আত্মহত্যা করার অনেক উদাহরণ রয়েছে।”
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর প্রকাশিত তথ্যেও এই একই ধরণের প্রবণতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে পরিষ্কার বলা হয়েছে, ভারতে আত্মহত্যা বাড়ছে। এনসিআরবি-র রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৯ সালেই ভারতে আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে ৩.৪ শতাংশ। গত বছরে ভারতে ১ লক্ষ ৩৯ হাজার ১২৩ জন আত্মহত্যা করেছে। এদের মধ্যে ৫০ শতাংশ ঘটনা দেশের মাত্র ৫ রাজ্য - মহারাষ্ট্র, তামিলনাড়ু, পশ্চিমবঙ্গ, মধ্যপ্রদেশ ও কর্ণাটকে ঘটেছে। চলতি বছরে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা।
ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে এমন অনেক আত্মহত্যার ঘটনা সংবাদ শিরোনামে এসেছে, যার পরোক্ষ কারণ করোনাভাইরাস। লকডাউনের সময় মার্চ থেকে মে মাসের মধ্যেই আত্মহত্যা করেছেন তিন শতাধিক মানুষ।
এখন প্রশ্ন এই ‘মানসিক’ রোগ থেকে রেহাই পাওয়ার উপায় কী? মনোরোগ বিশেষজ্ঞ রিয়াল দাসের মত, পারিবারিক সহযোগিতা এবং বন্ধুতার মধ্যে দিয়েই এই রোগের প্রতিকার সম্ভব। প্রথমত, ‘আত্মহত্যার উপসর্গ’ সম্পর্কে পরিবারকে সচেতন হতে হবে এবং সেই অনুযায়ী রোগীর চিকিৎসা করতে হবে।
চিকিৎসকের পরামর্শ:
এক: আত্মহত্যা প্রবণ, বিষাদগ্রস্ত মানুষের সমস্যা নিয়ে কথা বলতে হবে। আত্মহত্যা নিয়ে কথা না বলার ট্যাবু থেকে বেরিয়ে এসে আরও বেশি সতর্ক হতে হবে। সমস্যা জানার চেষ্টা করতে হবে।
দুই: রোগীকে বোঝাতে হব, তিনি যা ভাবছেন তা সঠিক ভাবনা নয়। সবসময় পাশে থাকতে হবে। চিকিৎসা চলাকালীন অল্প সময়ের জন্যও রোগীকে একলা ছাড়া যাবে না।
তিন: ‘সেল্ফ ডেসট্রাকটিভ বিহেভিয়ার’ লক্ষ্য করলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া।
চার: ধারাল অস্ত্র, ছুরি, কাঁচি, দড়ি- এই সমস্ত জিনিস রোগীর চৌহদ্দির মধ্যে রাখা যাবে না।
পাঁচ: সবসময় আশার আলো দেখানো।
চিকিৎসক রিয়াল দাসের আরও পরামর্শ, আত্মহত্যার প্রতিরোধক হিসেবে দারুণ কাজ করে শরীরচর্চা। ব্যয়াম করার ফলে শরীরে এক বিশেষ ধরনের হরমোন নির্গত হয়, যা ‘অ্যান্টি ডিপ্রেশন’-এর ওষুধ এবং স্বাভাবিকভাবেই অবসাদ দূর করে। একই সঙ্গে অবসাদ এলেও মানুষ যেন আত্মহত্যার দিকে না ঝোঁকে সেই দিকেই সদা সচেতন থাকার পরামর্শ তাঁর।