নয়াদিল্লি: সুজলা-সুফলা স্বদেশ ঘিরে আবেগ এখন অতীত। বরং যত দিন যাচ্ছে, ততই শুকিয়ে খটখটে হয়ে উঠছে পৃথিবী। সৃষ্টি এবং বিনাশের মাঝে এখন শুধু সময়ের রূপোলি বিদ্যুৎরেখা। তা-ও খুব বেশিদিনের নয়, মাত্র ১৮ বছরের। কারণ বর্তমান জীবন-যাত্রা যে ভাবে চলছে, তাতে ২০৪০ সালের মধ্যেই ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার ফুরিয়ে যেতে পারে। মঙ্গলবার বিশ্ব জল দিবসে (World Water Day 2022) তাই ভূগর্ভস্থ জল বাঁচানোর অঙ্গীকার সকলের।
মাটির নীচে থাকায় ভূগর্ভস্থ জল নিয়ে কৌতূহলের শেষ নেই। কিন্তু ভূগর্ভস্থ জল স্রোতস্বিনী নয়। বরং মাটির খাঁজে, গর্তে, জমে থাকা জল। যন্ত্রের মাধ্যমে সেই জলকে (Groundwater) টেনে উপরে তুলি আমরা। কিন্তু মাটির উপর থেকই যদি বোঝা যেত কোথায়, কত জল জমে রয়েছে, তার জন্য উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন। ভূগর্ভস্থ জল আদৌ পানের যোগ্য কি না, তাতে আর্সেনিক রয়েছে কি না, তা শুধু ছবি দেখে বোঝা সম্ভব নয়। তাই তার জন্যও প্রয়োজন উপযুক্ত প্রযুক্তির। যার মাধ্যমে বিশুদ্ধ এবং দূষিত জলকে চিহ্নিত করা যায়।
এক বার জল তুলে নেওয়ার পর শূন্যস্থান পূরণে কত সময় লাগছে, তা বোঝা দরকার। এতে ভূগর্ভস্থ জলচক্র সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা মিলবে এবং ব্যবহারও করা যাবে সেই অনুযায়ী। কোন দেশ, কোন কাজে, কত পরিমাণ ভূগর্ভস্থ জল ব্যবহার করছে, সেই সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকলে ভূগর্ভস্থ জলের রূপরেখা নির্ধারণ করা সম্ভব হবে বলেও মনে করছেন বিজ্ঞানীরা।
কয়েক বছর আগে পর্যন্ত গুরুত্ব না পেলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের (Climate Change) প্রকোপ এখন সর্বত্র অনুভূত। খামখেয়ালি আবহাওয়াও এরই ফলশ্রুতি। কিন্তু যখন তখন অতিবৃষ্টি হলেও সেই জল মাটি চুঁইয়ে ভূগর্ভে পৌঁছতে পারে না। আবার অত্যধিক তাপমাত্রায় ভূগর্ভস্থ জল বাস্পীভূত হতে শুরু করলে, শূন্যস্থান পূরণে সময় লাগে অনেক।
আরও পড়ুন: Russia Ukraine: ইউক্রেন সেনাকে আত্মসমর্পণ করার নির্দেশ, রাশিয়ার দাবি ওড়াল জেলেনস্কির দেশ
ভূগর্ভস্থ জল বাঁচিয়ে রেখে, তার বিকল্প হিসেবে বৃষ্টির জল ধরে রাখায় জোর দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। এতে ভূগর্ভস্থ জলকে বিপদের সময় কাজে লাগানো যেতে পারে বলে মত তাঁদের।
ভূগর্ভস্থ জল শুধুমাত্র মানুষের ব্যবহারের কাজে লাগে না, বরং জলের প্রবাহ এবং জলাভূমির সহযোগী বাস্তুতন্ত্রের অভিন্ন অংশ। পাম্পের সাহায্যে অত্যধিক পরিমাণ জল তুলে নেওয়ায়, তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সব দেশ একজোটে যদি তা প্রতিরোধে এগিয়ে আসে, তাহলে ভূগর্ভস্থ জলের ভাণ্ডার অক্ষত থাকে বলে মন বিজ্ঞানীদের।
প্রতি বছর ২২ মার্চ দিনটি বিশ্ব জলদিবস হিসেবে পালিত হয় সর্বত্র। জনজীবনে জলের গুরুত্ব এবং তা সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এমন উদ্যোগ। তার আওতায় এ বছর ভূগর্ভস্থ জল বাঁচানোর অঙ্গীকার করেছে গোটা বিশ্ব। দীর্ঘমেয়াদি এই পরিকল্পনার তার আওতায় ২০৩০-এর মধ্যে সর্বত্র বিশুদ্ধ পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জ জানিয়েছে, গোটা বিশ্বে পানীয় জলের প্রায় অর্ধেকই আসে ভূগর্ভ থেকে। সেচকার্য়ে ব্যবহৃত জলের ৪০ শতাংশ এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত জলের এক তৃতীংশও সেখান থেকেই আসে। এই ভূগর্ভস্থ জল শুধু বাস্তুতন্ত্রের ভারসাম্যই বজায় রাখে না, জলবায়ু পরিবর্তনের গতি মন্থর করতে এবং তার সঙ্গে পরিবেশের সামঞ্জস্য গড়ে তুলতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বর্তমানে যে ভাবে জলের অপচয় হচ্ছে, তাতে ভূগর্ভস্থ জলেও টান পড়ছে। আগামী দিনে তার ফল হবে মারাত্মক।
ডেনমার্কের আরহুস ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক বেঞ্জামিন সোভাকুলের সাফ বক্তব্য “বর্তমানে আমরা যা করছি, তা যদি চলতে থাকে, তাহলে ২০৪০-এর মধ্যে জলই থাকবে না আর।” ওয়র্ল্ড রিসোর্সেস ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যে শুধুমাত্র ভারতেই প্রাপ্ত জলের তুলনায় চাহিদা বেড়ে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তাই ভূগর্ভস্থ জল এখন থেকে সংরক্ষণ না করলে, নির্জলা পৃথিবীই পড়ে থাকবে।