মুম্বই: বলিউডে ফের একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে যার কেন্দ্রে ভারত ও পাকিস্তানের সম্পর্ক। কিন্তু এখানে সিনেমার নায়ক পাকিস্তানের (Pakistan) জামাই হয়ে যায়, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর (Prime Minister) প্রাণ বাঁচায়, শুধু তাই নয়, সেই সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রাণও বাঁচায়, একটি হাইজ্যাক আটকায়, ১৭০জন যাত্রীও একেবারে অক্ষত থাকেন। অর্থাৎ ২ প্রধানমন্ত্রী, একটি হাইজ্যাক, ১৭০জন যাত্রী... এই প্রবল পরিমাণ হিরোগিরি থাকা সত্ত্বেও সিনেমা দেখে তেমন মজা লাগবে না। ('Yodha' Review)
ছবির গল্প
এই ছবি বলে 'যোদ্ধা' (Yodha) নামক টাস্ক ফোর্সের গল্প। এবার ফিল্মি টাস্ক ফোর্স ফলে তারা সবই পারে। প্লেনও চালাতে পারে, আর সুযোগ পেলে চাঁদে গিয়ে চা-ও বিক্রি করতে পারে। সিদ্ধার্থ মলহোত্রের বাবা এই ফোর্সের প্রধান ছিলেন যিনি শহিদ হন। এরপর সিদ্ধার্থ সেই ফোর্সে যোগ দেন, এরপর প্লেন হাইজ্যাক আটকাতে না পেরে টাস্ক ফোর্স বন্ধ করার অর্ডার আসে। কিন্তু সিনেমার নাম 'যোদ্ধা', আর নায়কও যোদ্ধা ফলে ফোর্স বন্ধ হওয়ার তো কোনও সম্ভাবনাই নেই। ফলে আবারও একটি প্লেন হাইজ্যাক হয় এবং এবার মামলা পৌঁছয় পাকিস্তান পর্যন্ত, যা দেশভক্তি প্রদর্শনের জন্য বলিউডের একমাত্র প্রিয় বিষয়। এরপর কী হয়, যদি গোটা রিভিউ পড়ার পরও দেখার ইচ্ছা থাকে তাহলে প্রেক্ষাগৃহেই জানতে পারবেন।
সিনেমাটি কেমন?
সিনেমা শুরু হয় সেই চিরাচরিত দৃশ্য দিয়ে যার মাধ্যমে হাজার হাজার যোদ্ধা বলিউডে এন্ট্রি করে ফেলেছে, নায়ক বহু মানুষকে বাঁচাচ্ছে, এবং প্রথমেই খুব বোরিং হয়ে যায় ব্যাপারটা। এরপর সিনেমা খানিক আকর্ষণীয় হতে শুরু করে কিন্তু খানিক পর যেই কে সেই। সেই একই ধরনের দৃশ্য যা দেখে দেখে আমরা বিরক্ত হয়ে গিয়েছি। নায়ক পাকিস্তান পৌঁছে যায়, সেখানে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীকে বাঁচিয়ে ফেলে। যেন সকলেই সলমন খান হওয়ার দৌড়ে নাম লিখিয়েছেন। এই ছবির নায়ক প্লেনও ওড়ায়, ফ্লাইটে সঙ্গে থাকা এক ক্রু ইন্টার্নকে দিয়েও প্লেন চালিয়ে নেয়, আর সেই প্লেন ক্র্যাশ হওয়ার ঠিক আগের মুহূর্তে থামিয়েও দেওয়া হয়। কিছু কিছু দৃশ্যই খুবই হাস্যকর লাগে। মনে হতে পারে পাকিস্তানকে পরাস্ত করা ছাড়া দেশভক্তি প্রদর্শনের কি অন্য কোনও উপায় নেই বলিউডের কাছে? এই ফিল্ম কোনও রকমের আবেগই জাগিয়ে তোলে না। যে অল্প খানিক আকর্ষণ তৈরি হয় তাও অচিরেই শেষ হবে এবং তারপরই সব কেমন বালখিল্য মনে হবে।
অভিনয়
সিদ্ধার্থ মলহোত্রর অভিনয় ভাল, তাঁকে শারীরিকভাবে ফিট দেখিয়েছে ছবিতে। কিন্তু গল্পতেই এত দম নেই যে সেখানে অভিনেতা আলাদা করে কিছু করবেন। রাশি খান্নাকেও ভাল লাগে। তাঁর চরিত্রও বেশ বলিষ্ঠ কিন্তু চিত্রনাট্যই এত হাস্যকর যে ওঁরও কিছু করার নেই। দিশা পাটনির অভিনয় ক্ষমতাকে রিভিউ করার মতো প্রতিভা বোধ হয় এখনও তৈরি হয়নি, তাই মন্তব্য না করাই শ্রেয়। সন্ত্রাসবাদীর চরিত্রে সানি হিন্দুজা বেশ দক্ষ। নরম সরম সন্দীপ ভইয়া যে এতটা ভয়ের জন্ম দিতে পারেন তা কেউ কল্পনা করেননি।
পরিচালনা
এই ছবি লিখেছেন সাগর অ্যামব্রে। পুষ্কর ওঝার সঙ্গে সাগরও এই ছবির পরিচালনা করেছেন। বলা চলে এই দু'জনই এই ছবির আসল ভিলেন। আমাদের কাছে কি পাকিস্তান ছাড়া আর কিছুই নেই? দেশভক্তি কি কেবল পাকিস্তানকে মারলেই প্রদর্শন করা সম্ভব? নাকি পাকিস্তান সকলের কাছে একটা নিরাপদ টার্গেট? ফিল্মের একাধিক দৃশ্য হজম করতে কষ্ট হবে। যুক্তিকে ফাঁসিকাঠে ঝোলানো হয়েছে রীতিমতো। শৈল্পিক স্বাধীনতা নেওয়া এক জিনিস, কিন্তু তারও তো একটা সীমা থাকে।
সব মিলিয়ে সিদ্ধার্থ মলহোত্রের অনুরাগী হলে এই ছবি দেখতে পারেন। নয়তো এই সিনেমায় সাংঘাতিক কিছুই নেই।
আপনার পছন্দের খবর আর আপডেট এখন পাবেন আপনার পছন্দের চ্যাটিং প্ল্যাটফর্ম হোয়াটস অ্যাপেও। যুক্ত হোন ABP Ananda হোয়াটস অ্যাপ চ্যানেলে।