নয়াদিল্লি: উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় রামমন্দির উদ্বোধনের প্রস্তুতি চলছে জোরকদমে। বিশেষ করে 'রামলালা' অর্থাৎ রামচন্দ্রের শিশু বয়সের মূর্তিতে প্রাণপ্রতিষ্ঠা ঘিরে বাড়তি উৎসাহ রয়েছে। মন্দিরের গর্ভগৃহে  'রামলালা'র এই মূর্তি নিয়ে কড়া প্রতিযোগিতা চলছে (Ram Lala Idol)। 'রামলালা'র তিনটি পৃথক মূর্তি তৈরি হচ্ছে, যার মধ্যে সেরা মূর্তিটিই গর্ভগৃহে স্থান পাবে। কিন্তু তিনটির মধ্যে কোনটিকে বেছে নেওয়া হবে তার জন্য, সেই নিয়ে টানটান উত্তেজনা। (Ram Temple Inauguration)


গণেশ ভট্ট, অরুণ যোগীরাজ এবং সত্যনারায়ণ পান্ডে নামের তিন শিল্পী 'রামলালা'র তিনটি পৃথক মূর্তি তৈরি করছেন। আগামী মাসে অযোধ্যায় নবনির্মিত রামমন্দিরের গর্ভগৃহে তার মধ্য়ে থেকে সেরাটি জায়গা পাবে। রামমন্দির ট্রাস্টের তরফে জানানো হয়েছে, তিনটির মধ্যে সেরাটি গর্ভগৃহে রাখা হবে। বাকি দু'টি রাখা হবে মন্দিরের অন্য অংশে। মন্দির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, রামচন্দ্রের ছেলেবেলার কোমলতা মূর্তি যথাযথ তুলে ধরবে, সেটিকেই রাখা হবে গর্ভগৃহে। (Ram Mandir Inauguration)


তিনটির মধ্যে কোন মূর্তিটি জায়গা পাবে গর্ভগৃহে, শীঘ্রই সেই সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে বলে জানা গিয়েছে। নতুন বছরে, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সশরীরে উপস্থিত থাকবেন সেখানে। তবে বৈদিক আচার অনুযায়ী, প্রাণ প্রতিষ্ঠার অনুষ্ঠান শুরু হয়ে যাবে ১৬ জানুয়ারি থেকেই, মূল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের এক সপ্তাহ আগে। মূর্তিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠার দায়িত্বে থাকবেন গণেশ্বর শাস্ত্রী দ্রাবিড় এবং লক্ষ্মীকান্ত দীক্ষিত। 


আরও পড়ুন: Viral Video: গুরুদ্বারের প্রাচীরে হাত-পা ছড়িয়ে সুখনিদ্রা, আড়মোড়া ভেঙে সকাল হল ডোরাকাটার, রাত জাগল গোটা গ্রাম


এই অনুষ্ঠানের জন্য জোরকদমে প্রস্তুতি চলছে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার মানুষ মন্দির উদ্বোধনের সাক্ষী হতে আসবেন ববে খবর। তাই নিরাপত্তায় কোনও খামতি রাখা হচ্ছে না। অযোধ্যায় এসে যাতে কেউ কোনও অসুবিধায় না পড়েন, তার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হচ্ছে। অযোধ্যার হোটেলগুলিতে ইতিমধ্যেই বুকিং ফুল। এত সংখ্যক মানুষ আসছেন যে, প্রশাসনের তরফেই বিরত থাকতে অনুরোধ করা হচ্ছে। যাঁরা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন, তাঁদের খাওয়া-দাওয়ার জন্য লঙ্গর, কমিউনিটি কিচেন এবং খাদ্য সরবরাহ কেন্দ্রও গড়ে তোলা হচ্ছে রাজ্যের ইতিউতি। 


অযোধ্যায় রামমন্দিরের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিতের তালিকা সুদীর্ঘ। তিব্বতি ধর্মগুরু দলাই লামা, যোগগুরু বাবা রামদেব, শিল্পপতি গৌতম আদানি, মুকেশ আম্বানি, অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন, রজনীকান্ত, মাধুরী দীক্ষিত, হিট সিরিয়াল 'রামায়ণে'র অভিনেতা অরুণ গোভিলকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। পরিচালক মধুর ভাণ্ডারকর, গীতিকার প্রসূন জোশীও আমন্ত্রিত অযোধ্যায়। টাটা গোষ্ঠীর নটরাজন চন্দ্রশেখরন এবং L&T গোষ্ঠীর এসএন সুব্রহ্মণ্যমকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। এখনও আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর কাজ চলছে। বিরোধী শিবিরের রাজনীতিকদেরও আমনন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে। সেই তালিকায় সনিয়া গাঁধী, মল্লিকার্জুন খড়্গে রয়েছেন। আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে সিপিএম-এর সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, সিপিআই নেতা ডি রাজা, বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী এবং আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়ালও আমন্ত্রিত অযোধ্যায়। দেশের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রতিভা পাটিলকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। 


এর আগে, রাম জন্মভূমি আন্দোলনের দুই মুখ লালকৃষ্ণ আডবাণী এবং মুরলি মনোহর জোশীর অনুষ্ঠানে আগমন নিয়ে ধন্দ দেখা দেয়। প্রথমে উদ্বোধনী অনুষ্ঠান থেকে দু'জনকে ব্রাত্য রাখা হয়। এমনকি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়ার জন্যও অনুরোধ করা হয় বলে শোনা যায়। এর পর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে গিয়ে আডবাণী এবং জোশীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাঁরা আন্দোলনের হোতা, তাঁদের ছাড়া উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অসম্পূর্ণ বলে জানানো হয়। মন্দির নির্মাণে যে সমস্ত শ্রমিকরা কাজ করেছেন, তাঁরাও আমন্ত্রিত।