নয়াদিল্লি: সব পরিকল্পনা সেরেও শেষ মুহূর্তে পিছিয়ে যেতে হয়েছে একাধিক বার। তবে সব কিছু ঠিক থাকলে, আগামী অর্থবর্ষেই চালু হতে পারে নয়া শ্রম বিধি (Labour Codes)। দিল্লি সূত্রে খবর, ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন। তার আগে, ২০২২-’২৩ অর্থবর্ষেই (Financial Year 2022-2023) চারটি নয়া শ্রম বিধি চালু করা হতে পারে। তার আওতায়, নাগরিকদের সামাজিক ও পেশাগত নিরাপত্তা, শিল্প সম্পর্ক, স্বাস্থ্য, কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ এবং মজুরি সংক্রান্ত নীতিতে বেশ কিছু রদবদল ঘটাতে পারে কেন্দ্র।
শীর্ষস্তরের এক সরকারি আমলাকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানিয়েছে, ২০২১ সালেই নয়া শ্রম বিধি চালুর পরিকল্পনা ছিল কেন্দ্রের। কিন্তু অতিমারিতে পরিযায়ী শ্রম বিধি এমন একটি বিষয়, যার আওতায় কেন্দ্র এবং রাজ্যের সহাবস্থান জরুরি। দু’তরফেই নীতি, নিয়মের খসড়া জমা দিতে হয়। সেই অনুযায়ী সবদিক যাচাই করে তৈরি হয় আইন। বেশ কিছু রাজ্য এখনও খসড়া তৈরি করে উঠতে পারেনি। তাতেই নয়া শ্রম বিধি চালুর প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়।
তবে এই চারটি শ্রম বিধি চালু হলে, শিল্প-সংস্থায় কাজের ধারা সম্পূর্ণ পাল্টে যাবে বলে পিটিআই-কে জানিয়েছেন ওই আমলা। তাঁর দাবি, দিনপিছু কাজের সময়ের উপরই প্রভাব পড়বে না, কর্মীদের টেক হোম বেতন, ন্যূনতম মজুরি, প্রভিডেন্ট ফান্ডের উপরও গুরুতর প্রভাব পড়বে।
পিটিাই জানিয়েছে, নয়া শ্রম বিধির আওতায় কর্মীদের জন্য পাঁচ দিনের পরিবর্তে সপ্তাহে কাজের দিন বেঁধে দেওয়া হতে পারে চার দিন। সে ক্ষেত্রে তিন দিন ছুটি পাবেন সকলে। কিন্তু যে চার দিন কাজ করবেন, তাতে ১২ ঘণ্টা করে সময় দিতে হতে পারে। কারণ যেনতেন প্রকারে সপ্তাহে ৪৮ ঘণ্টা কাজের সময় বরাদ্দ করাই লক্ষ্য শ্রমমন্ত্রকের।
তবে নয়া শ্রম বিধি চালু হলে প্রভিডেন্ট ফান্ড নীতির উপরই সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। কারণ সরকার অবসরকালীন সঞ্চয়ের উপর জোর দেওয়ার পক্ষপাতী। তাই গ্রস পে বা মোট বেতনের ভিত্তিতেই যাতে কর্মীদের সমান টাকা সংস্থাগুলিও প্রভিডেন্ট ফান্ডে জমা দেয়, তা নিশ্চিত করা হতে পারে। এর বিরুদ্ধে যদিও শুরু থেকেই প্রতিবাদ জানিয়ে আসছে সংস্থাগুলি।
এত দিন প্রভিডেন্ট ফান্ডের বরাদ্দ সীমিত রাখতে এবং করফঁকি দিতে ইচ্ছা করে কর্মীর বেতনকে আলাদা আলাদা অ্যালাওন্স হিসেবে দেখাত সংস্থাগুলি, যাতে বেসিক পে কম থাকে এবং সেই অনুযায়ী প্রভিডেন্ট ফান্ডে কম টাকা দিতে হয় তাদের। কিন্তু গ্রস পে-র উপর প্রভিডেন্ট ফান্ডে টাকা দিতে হলে, সংস্থাগুলি বেতনে যেমন কাটছাঁট করবে, তেমনই ভার লাঘব করতে কর্মীছাঁটাইও হবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
একই সঙ্গে শিল্পবান্ধব ভাবমূর্তি বজায় রাখতে শিল্প এবং সংস্থাগুলিকে বিশেষ সুয়োগ সুবিধা দিচ্ছে কেন্দ্র, যার আওতায় কম সময়ের জন্য ঠিকে শ্রমিক দিয়ে কাজ করিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে সংস্থাগুলিকে। আবার শ্রমিক ইউনিয়ন এবং তাদের ধর্মঘটের উপরও লাগাম কষা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: Jaya Bachchan Update: ‘খুব খারাপ দিন আসছে আপনাদের’, সংসদে মেজাজ হারালেন জয়া
বর্তমানে যে সমস্ত সংস্থার কর্মী সংখ্যা ১০০-র কম, কর্মী ছাঁটাই বা সংস্থার ঝাঁপ ফেলে দেওয়ার আগে তাদের সরকারের অনুমতি নেওয়া হয় না। কিন্তু নয়া শ্রম বিধি চালু হলে, তাতে ৩০০-র কম কর্মী রয়েছে এমন কোনও সংস্থাকেই ছাঁটাই বা ঝাঁপ ফেলার জন্য সরকারের অনুমতির অপেক্ষা করতে হবে না।
শিল্প সম্পর্কের আওতায় ৩০০-র কম কর্মী রয়েছে যে সমস্ত সংস্থায়, সরকারের অনুমতি ছাড়াই তাদের ছাঁটাই এবং সংস্থার ঝাঁপ ফেলে দেওয়ার অধিকার দেওয়া হচ্ছে। তার ফলে আরও বেশি সংখ্যক মানুষের কর্মহীন হয়ে পড়ার আশঙ্কা বাড়ছে।