উত্তর দিনাজপুর: করোনা সংকটের মধ্যেই মর্মান্তিক ঘটনা। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু একই পরিবারের পাঁচ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছে দুই শিশুও। উত্তর দিনাজপুরের হেমতাবাদের ভরতপুর গ্রামে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। দুই শিশু-সহ একই পরিবারের ৫ জনের অগ্নিদগ্ধ দেহ উদ্ধার করা হল।
জানা গেছে, গৃহকর্তা বছর চল্লিশের রাম ভৌমিক পেশায় ভ্যান চালক। গতকাল রাতে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ওই ব্যক্তি, তাঁর স্ত্রী-সহ ৩ মেয়ের। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, গায়ে কেরোসিন ঢেলে সপরিবারে আত্মঘাতী হয়েছেন ওই ভ্যান চালক। কিন্তু কেন এমন পদক্ষেপ? আর্থিক অনটন না কি অন্য কোনও কারণে মৃত্যু, খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
করোনা সংকট এমনিতেই মানুষকে উদ্বেগে রেখেছে। এরইমধ্যে এই ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া।
স্থানীয়দের অভিযোগ, চরম আর্থিক অনটনে ভুগছিল পরিবারটি!মৃত্যুর আগে নিজের জবানবন্দিতে ঘটনার কথা জানায় ওই পরিবারের এক শিশু। রানী ভৌমিক নামে শিশুটি বলে, বাবা কিছু ঢেলে দেয়, আগুন জ্বলে যায়।
রাম ভৌমিক ও (৪০), তাঁর স্ত্রী শঙ্করী ভৌমিক (৩২), তাঁদের তিন কন্যাসন্তান, রানী ভৌমিক (১২), পর্ণা ভৌমিক (৭) ও সরস্বতী ভৌমিকের (৪)।
স্থানীয়দের দাবি, শুক্রবার রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ তাঁরা দেখেন দাউদাউ করে জ্বলছে টিনের বাড়ি! তড়িঘড়ি আগুন নেভানোর চেষ্টা করলেও...ততক্ষনে মৃত্যু হয়েছে পরিবারের চারজন সদস্যের!
জীবীত অবস্থায় বছর ১২-র রানী ভৌমিককে উদ্ধার করে রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
এই ঘটনায় হতচকিত, শোকবিহ্বল স্থানীয়রা। এক প্রতিবেশী বলেছেন, ভালো মানুষ ছিল, অনটন ছিল, সেই কারণেই আত্মহত্যা। রাতে দেখি আগুন জ্বলছে। অন্য একজন বলেছেন, মেয়েগুলির মুখ থেকে সংসারে অভাবের কথা শোনা যেত।
স্থানীয়দের দাবি, রাজ্যজুড়ে আংশিক লকডাউন চালু হতেই কাজ হারান গৃহকর্তা রাম ভৌমিক। ইদানিং একটি ভ্য়ান চালানোর পাশাপাশি ঝাড়ুর ব্যবসা করছিলেন। যদিও তাতে বিশেষ লাভ হচ্ছিল না। এদিকে আর্থিক অনটনে মৃত্যুর অভিযোগ মানতে নারাজ হেমতাবাদের তৃণমূল বিধায়ক। তিনি বলেছেন, অভাব অনটন ছিলই, কিন্তু সরকারি সুযোগ সুবিধা পেতেন, কেন আত্মহত্যা বোঝা যাচ্ছে না। শনিবার ঘটনাস্থলে যান উত্তর দিনাজপুরের জেলাশাসক। তিনি বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। শনিবার রায়গঞ্জ গভর্মেন্ট মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃতদেহগুলির ময়নাতদন্ত করা হয়।
ঘটনায় এলাকায় নেমেছে গভীর শোকের ছায়া।