সিসারুয়া: প্রত্যেকদিনের মতো নিয়ম মেনে অনুশীলন করছেন। অনুশীলনের জন্য ভারী  ব্যাগ পিঠে বয়ে নিয়ে চলেছেন আফগানিস্তানের ক্যারাটে চ্যাম্পিয়ন মীনা আসাদি। কিন্তু এখন তো দেশ তালিবানদের কব্জায়। তাই দেশের মহিলা ক্রীড়াবিদদের প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার সমস্ত সম্ভাবনাই খতম হয়ে গেল বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আসাদি।


যখন ১২ বছর বয়স তখন আফগানিস্তান ছেড়ে পাকিস্তানে চলে এসেছিলেন মীনা। সেখানে ক্যারাটের প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেছিলেন তিনি। পরে ২০১০-এ সাউথ এশিয়ান গেমসে আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেছিলেন। পরের বছর কাবুলে ফিরে গিয়ে একটা ফাইট ক্লাবও খুলেছিলেন। কিন্তু সেখানে থাকা হয়নি তাঁর। হিংসার কারণে ফের দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন। পৌঁছেছিলেন ইন্দোনেশিয়ায়। তখন তাঁর সঙ্গে ছিলেন স্বামী। আর এক বছরের কন্যা সন্তান। এখন জাকার্তার দক্ষিণের সিসারুয়া শহরে উদ্বাস্তুদের ক্যারাটের প্রশিক্ষণ দেন মীনা। ওই উদ্বাস্তুদের মতো তিনিও এখন তৃতীয় কোনো দেশে পাকাপাকিভাবে থাকতে চান। সংবাদসংস্থাকে মীনা বলেছেন, খুবই কষ্ট হচ্ছে। আমার সমস্ত আশা শেষ হয়ে গিয়েছে। আমার দেশের মানুষও সমস্ত আশা হারিয়ে ফেলেছেন।


আসলে তালিবান শাসনের সেই নিষ্ঠুরতা ও গোঁড়ামির স্মৃতি এখনও দগদগে হয়ে রয়েছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত  আফগানিস্তানে চলেছিল তালিবান শাসনের দাপট। সেই আমলে শরিয়তি আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে গিয়ে নিষ্ঠুরতার পথ অবলম্বন করে তালিবান। তাদের হুকুম ছিল, মেয়েরা কাজে যেতে পারবেন না, স্কুলে যেতে পারবে না। মেয়েদের পুরো শরীর ঢাকা পোশাক পরতে হবে। একমাত্র আত্মীয় পুরুষসঙ্গীর সঙ্গেই বাড়ির বাইরে বেরোতে পারবেন মেয়েরা।


সেই তালিবানের ফের প্রত্যাবর্তন ঘটেছে আফগানিস্তানে। এখন দেশে মহিলাদের যেটুকু অগ্রগতি ঘটেছিল, তার কী হবে, তা নিয়ে আশঙ্কিত মীনা।  ২৮ বছরের হাজারা সম্প্রদায়ের মীনা  বলেছেন, সমস্ত কৃতিত্ব ও মূল্যবোধ শেষ হয়ে গেল। মানুষের কাছে, বিশেষ করে মহিলা ও কিশোরী-তরুণীদের কাছে এটা অন্ধকার নেমে আসার সামিল।


চলতি সপ্তাহেই তাইকোন্ড অ্যাথলিট জাকিয়া খুদাদাদি বলেছিলেন, প্রথম মহিলা প্রতিযোগী হিসেবে তাঁর প্যারা অলিম্পিক্সে আফগানিস্তানকে প্রতিনিধিত্ব করার স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছে কাবুলের অস্থিরতার কারণে।


মীনাও বলেছেন, আফগানিস্তানের মহিলা অ্যাথলিটদের কাছে এখন সবকিছু শেষ।  ২০১২-র সাউথ এশিয়ান ক্যারাটে চ্যাম্পিয়নশিপে প্রথম মহিলা অ্যাথলিট হিসেবে আফগানিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করে রূপোর পদক জিতে নিয়েছিলেন তিনি।


তালিবান নেতাদের মুখে শোনা গিয়েছে আশ্বাস। তাদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, মেয়ে ও মহিলাদের পড়াশোনা ও কাজের সুযোগ থাকবে। কিন্তু তাদের এই আশ্বাস সম্পর্কে সন্দিহান মীনা ও অন্যান্যরা। মীনা বলেছেন, ওরা তো উগ্রপন্থী। ওরা মানবাধিকার বা মহিলাদের অধিকারে বিশ্বাস করে না।


এরইমধ্যে জানা গিয়েছে যে, তালিবানরা বেশ কয়েকজন মহিলাকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দিয়েছে। এ প্রসঙ্গে মীনা বলেছেন, ওরা কখনও বদলাবে না..ওরা সেই একই তালিবান।