কলকাতা: শিবের ছবি এঁকে বিতর্কে শিল্পী। হাতে গঞ্জিকা। গলায় সাপ। মাথায় জটা, সঙ্গে অর্ধচন্দ্র। পরণে ব্যাঘ্রচর্ম। তিনি বসে আছেন। শিবের এই অবয়বই এঁকেছেন শিল্পী তৌসিফ হক। ফেসবুক পোস্টে ছবিটি পোস্ট করে শিল্পী লিখেছেন, “বাঙালির শিব ঠাকুর কখনো মাসলওয়ালা মাস্তান নন বরং তিনি শান্ত, মাথায় জটা, চেহারা একদম নাদুসনুদুস। ভুঁড়ি আছে এবং তিনি চাষী, কৃষিকাজের মাঝে লাল শালু মুড়ে গঞ্জিকা সেবনে ব্যস্ত থাকেন। তিনি একাধারে প্রেমিক এবং সৎ অন্যদিকে দয়ালু পত্নীনিষ্ঠ ভদ্রলোক।”
বিভিন্ন পুরাণ এবং অন্নদামঙ্গলের বর্ণনাকে আধার করেই নিজের কল্পনায় শিবকে এভাবে দেখিয়েছেন তৌসিফ। শিল্পীর চেতনায় শিব কখনই ‘সিক্সপ্যাকওয়ালা’ নন। শিবের এই অবয়ব এবং তাঁর বর্ণনায় ‘মাস্তানি’ শব্দ ব্যবহার করেই বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। সমালোচকদের অনেকে তাঁর ধর্মকে সামনে এনে প্রশ্ন তুলেছেন, “একজন আরবি নামধারী ঠিক করে দেবেন বাঙালি হিন্দুর শিব কোনটা আর কোনটা নয়?” ‘মাস্তান’ শব্দেও আপত্তি করা হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, সমালোচকরা তৌসিফের এই ছবি নিয়ে ফেসবুকের কাছে রিপোর্ট করায় তাঁর অ্যাকাউন্ট ব্লক করে দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে তৌসিফের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আমি মাইথোলজির চরিত্র নিয়ে কাজ করতে ভালবাসি। আগেও করেছি। লোকায়ত জায়গাটাকে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাতে যা ঘটল, তা সবারই জানা। আমি আলাদা করে বলতে চাই না। মানসিকভাবে ধাক্কা খেয়েছি। এরপর এমন ছবি আঁকব কিনা, ভেবে দেখব।”
‘মাস্তান’ শব্দ ব্যবহার প্রসঙ্গে শিল্পী এবিপি আনন্দের প্রতিবেদককে বলেন, “মাস্তান শব্দকে অপভ্রংশ হিসেবে ব্যবহার করিনি। সৌরভ গাঙ্গুলি ইংল্যান্ডে গিয়ে মাস্তানি করে এলেন। এইভাবেই ব্যবহার করতে চেয়েছি। শিবকে প্রেমিক বলেছি। সৎ বলেছি, সেদিকে একটু লক্ষ্য করতে হবে।”
ফেসবুকে এই বিতর্কে যাঁরা শিল্পীর জাতি, ধর্ম, নাম নিয়ে কটূক্তি করেছেন, তাঁদের প্রতি কোনও অভিযোগই তাঁর নেই। বরং তাঁর বক্তব্য, “শব্দটায় (মাস্তানি) আপত্তি থাকলে আমি তা ফিরিয়ে নিচ্ছি।”
যদিও ছবি নিয়ে এমন বিতর্ক প্রথমবার নয়। ‘ভারতমাতা’, ‘ন্যুড সরস্বতী’, ‘দ্রৌপদী’র মতো ছবি তো বটেই, এমনকি বিশ্বখ্যাত মকবুল ফিদা হোসেনের আঁকা মাদার টেরেসার ছবি নিয়েও বিতর্ক হয়। এমনকি সেকারণে দেশও ছাড়তে হয়েছিল তাঁকে।
তবে একদিকে যখন তৌসিফের আঁকা ছবি নিয়ে তথাকথিত কট্টরপন্থীরা নিন্দার ঝড় তুলেছেন, তখন তাঁর পক্ষে দাঁড়িয়ে লগ্নজিতা রায়ের মতো কেউ কেউ যামিনী রায়ের আঁকা শিবের ছবি, বাংলার পটচিত্রে পরিচিত শিবের ছবির সঙ্গে তৌসিফের আঁকা ছবিকে এক সারিতে বসিয়ে লিখেছেন, “শিল্প ফিরে আসবে, শিল্পীও।”
প্রসঙ্গত শিবপুরাণ অনুযায়ী শিব শুধুই মহাযোগী নন। শিবপুরাণের একাধিক সর্গে শিবের বর্ণনায় বলা হয়েছে, ‘তিনি চন্দ্রশেখর, সুপুরুষ। গলায়, কোমরে, হাতে নরকপাল, ব্যাঘ্রচর্মধারী’। তাঁর পঞ্চমুখের কথাও সেখানে উল্লেখ রয়েছে, তাই শিবকে পঞ্চাননও বলা হয়।