অমৃতসর: পঞ্জাবের অমৃতসরের জোড়া ফটকের কাছে ভয়ঙ্কর রেল দুর্ঘটনা। রাবণ দহন দেখতে রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে ছিলেন অসংখ্য মানুষ। সেইসময় আপ ও ডাউন দু’টি লাইনে ট্রেন চলে আসে। রেললাইনের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা দর্শকদের পিষে দিয়ে চলে যায় ট্রেন। এখনও পর্যন্ত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে পুলিশের বক্তব্য। ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে মৃতদের শরীর। মৃতের সংখ্যা শতাধিক ছাড়াতে পারে বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।



ছাড়পত্র ছাড়াই রাবণ দহনের আয়োজন করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। এই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পঞ্জাবের মন্ত্রী নভজ্যোত সিংহ সিধুর স্ত্রী নভজ্যোত কউর। অভিযোগ, দুর্ঘটনার পরপরই মঞ্চ থেকে নেমে পালিয়ে যান তিনি! যদিও হাসপাতালে আহতদের দেখতে গিয়ে সিধুর স্ত্রী দাবি করেন, অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পরই তিনি ওই এলাকা থেকে ছাড়েন। মাঝপথে ফোন পেয়ে ফের ঘটনাস্থলে ফিরে আসেন তিনি। দুর্ঘটনার জন্য ঘুরিয়ে রেলের ঘাড়েই দায় ঠেলেছেন তিনি।



দুর্ঘটনার পরই পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর সিংহ প্রশাসনকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন। মৃতদের পরিবারকে ৫ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্যের ঘোষণা করেছে পঞ্জাব সরকার। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মৃতদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক সাহায্যের নির্দেশ দিয়েছেন।



বিপর্যয়ের দায় নিয়ে শুরু হয়েছে চাপানউতোর। আজই ঘটনাস্থলে যাচ্ছেন রেল প্রতিমন্ত্রী এবং রেল বোর্ডের চেয়ারম্যান। কাল যাচ্ছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, অমৃতসরের জোড়াফটকের রেললাইন লাগোয়া ওই মাঠে অনুমতি ছাড়াই রাবন দহনের আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা ছিলেন কংগ্রেসের স্থানীয় জনপ্রতিনিধি। প্রশ্ন উঠছে, কী করে বিষয়টি নজর এড়িয়ে গেল স্থানীয় প্রশাসনের? রেললাইনে ওঠার আগেই কেন দর্শনার্থীদের আটকানো হল না? তাহলে কি ভিড় নিয়ন্ত্রণের জন্য পর্যাপ্ত ব্যবস্থাই ছিল না? শাসক দলের নেতা উদ্যোক্তা বলেই কি অনুমতি ছাড়া দশেরার আয়োজন করা হয়েছিল?



শুধু উদ্যোক্তা কিম্বা প্রশাসনই নয়, প্রশ্নের মুখে পড়েছে রেলের ভূমিকাও। অনেকেরই বক্তব্য, লাইনে কয়েকশো মানুষ দাঁড়িয়ে আছেন জেনেও, কেন কোনও সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিল না রেল? রেললাইনে কয়েকশো মানুষের ভিড় দেখেও কেন কোনও জরুরি বার্তা পাঠালেন না চালক? প্রত্যক্ষদর্শীদের মোবাইলে যে ছবি ধরা পড়েছে, তা দেখে মনে হচ্ছে, দুর্ঘটনার সময় ট্রেনের গতিবেগ অনেকটাই বেশি ছিল। সেক্ষেত্রে প্রশ্ন উঠছে, ভিড় দেখেও কেন ট্রেনের গতি কমালেন না চালক? কেন তিনি আপৎকালীন ব্রেক কষে ট্রেন থামালেন না? তিনি ওই ভিড় দেখতে পাননি? তাহলে কি লাইনের পাশে রাবন-দহনের অনুষ্ঠান চলায়, চালক কি কোনও কারণে অসতর্ক হয়ে পড়েছিলেন? রেল অবশ্য বলছে, রাবন দহনের বাজি পটকার আওয়াজে হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায়। সেই সময় দুর্ঘটনা ঘটে। রেলের তরফে এ কথা বলা হলেও, ছবি কিন্তু বলছে অন্য কথা। যেখানে দেখা যাচ্ছে, বহু মানুষ রেললাইনে বসে এবং দাঁড়িয়ে দশেরা দেখছিলেন। ওই অবস্থাতেই ট্রেন তাদের পিষে দেয়।



দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ট্যুইটারে লিখেছেন, ‘অমৃতসরের এই বিপর্যয় হৃদয় বিদারক। যে সব মানুষরা প্রিয়জনকে হারালেন তাঁদের প্রতি সমবেদনা রইল। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। আধিকারিকদের বলা হয়েছে প্রয়োজনীয় সবরকম সহায়তা দিতে।’

রাজ্য সরকার এবং দলীয় কর্মীদের ত্রাণ কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। ট্যুইটারে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘পঞ্জাবে ট্রেন দুর্ঘটনায় এতগুলো মানুষের মৃত্যু মর্মান্তিক। মৃতদের পরিজনদের সমবেদনা জানাই।আহতদের দ্রুত সুস্থতা কামনা করছি।’

অমৃতসরের ঘটনার প্রেক্ষিতে ট্যুইটারে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতিক্রিয়া, ‘এই বেদনাকে ব্যক্ত করার মতো আমার কোনও ভাষা নেই। মৃতদের পরিজনদের সমবেদনা ও আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’

অমৃতসরের এই ঘটনায় রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ-সহ একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শোকজ্ঞাপন করেছেন। রেলমন্ত্রী পীযূষ গয়াল এই মুহূর্তে আমেরিকায় রয়েছেন। অমৃতসরের দুর্ঘটনার প্রেক্ষিতে সফর কাটছাঁট করে দেশে ফিরে আসছেন তিনি। উদ্ধারকাজের জন্য দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছে ইন্ডিয়ান টিবেটান বর্ডার পুলিশ ফোর্সের একটি দল। অমৃতসরের বিভিন্ন হাসপাতালে শতাধিক আহতের চিকিৎসা চলছে। প্রয়োজনে রক্তও দেবেন আইটিবিপি-র জওয়ানরা।