নয়াদিল্লি: অর্থমন্ত্রী হিসাবে টানা ষষ্ঠ বাজেট পেশ করতে চলেছেন অরুণ জেটলি। লোকসভা নির্বাচনের আগে মধ্যবিত্ত ও কৃষকদের মন জয় করতে একগুচ্ছ
ঘোষণার কথা ভাবছে কেন্দ্রীয় সরকার। ২০১৮ সালের বাজেট বক্তৃতাতেও একাধিক এমন ঘোষণা করেছিলেন জেটলি যাতে, ব্যাঙ্কিং, আর্থিক পরিষেবা এবং বিমাক্ষেত্র প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে উপকৃত হয়েছিল। পাশাপাশি কৃষিক্ষেত্রে ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বেঁধে দেওয়া এবং কৃষিঋণ ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা ছিল গত বাজেটের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। গ্রামাঞ্চলে ঋণের সুযোগ নিশ্চিত করতে গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলিকে পুঁজির পরিমাণ বাড়ানোয় জোর দিতে বলা হয়েছিল। দেশের দরিদ্র ও
প্রান্তিক মানুষের কাছে সহযোগিতা পৌঁছে দেওয়াই যে গ্রামীণ ব্যাঙ্কগুলোর কাজ, সেটাও স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছিল। গত বছর কেন্দ্রীয় সরকার ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক
ফর এগ্রিকালচার অ্যান্ড রুরাল ডেভেলপমেন্ট (এনএবিএআরডি)-এর জন্য ২০৪,০০০ পয়েন্ট অফ সেল (পিওএস) নির্ধারিত করে দিয়েছিল।
২০১৮ সালের বাজেটে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ছোট শিল্পের জন্য পাবলিক সেক্টর ব্যাঙ্ক ও নন ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল সংস্থাগুলোর ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বাড়ানোর
প্রস্তাবও দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য আয়কর ছাড়ের সীমা বাড়ানো হয়েছিল। জন ধন অ্যাকাউন্ট থাকা নাগরিকদের জন্য স্বাস্থ্যবীমা
এবং অবসরকালীন সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার প্রস্তাবও দিয়েছিলেন জেটলি। জনসাধারণের মধ্যে ব্যাঙ্কে টাকা রাখার প্রবণতা বাড়ানোর জন্যই এমন প্রস্তাব
দেওয়া হয়েছিল বলে অর্থনীতির কারবারিদের ধারণা। আসন্ন বাজেটে আয়কর ছাড়ের উর্ধ্বসীমা আড়াই লক্ষ টাকা থেকে বাড়ানো হতে পারে বলে জল্পনা তুঙ্গে। সেক্ষেত্রে আয়কর আইনেরও সংশোধন করতে হবে। একই ভাবে চাষিদের জন্য প্রকল্প ঘোষণা করতে গিয়ে তিন মাসের বদলে সারা বছরের খরচের হিসেব জানিয়ে দেওয়া হতে পারে বলে ওয়াকিবহাল মহলের অনুমান। সে জন্য রাজকোষ ঘাটতির সীমাও প্রয়োজনে লঙ্ঘন করা হতে পারে। বছরের গোড়ায় জেটলি নিজেই সেই ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, মাঝে-মধ্যে এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, কিছু জায়গায় সমস্যা দূর করতে খরচ বাড়াতে হয়। সমস্যা বলতে যে তিনি ষিদের দুর্দশার কথা বোঝাতে চাইছেন, স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন জেটলি।
সবচেয়ে বড় খুচরো বিপনন বাজার থাকা উন্নতশীল দেশগুলির মধ্যে চতুর্থ স্থানে ভারত। ২০১৮ অর্থবর্ষে দেশের ডিজিটাল ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৫ বিলিয়ন ডলার।
বিগত বছরের তুলনায় মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যাঙ্কিংয়ের মতো প্রযুক্তির ব্যবহারও বৃদ্ধি পেয়েছিল। আগামী মার্চ মাসের মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে
প্রায় ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ঢোকানোর লক্ষ্য রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের। দেশের ডিজিপি বাড়তে থাকায় ভবিষ্যতে আরও নোট দরকার হতে পারে। এমনই মনে করছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক। তিনি এক আলোচনাসভায় আরও জানিয়েছেন, জাল নোটের পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছে। ব্যাঙ্কগুলি জাল নোট রোখার জন্য আরও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবে। এ বিষয়ে নোটিস দেওয়া হয়েছে।
২০১৬-র ৮ নভেম্বর ৫০০ ও ১,০০০ টাকার নোট বাতিলের পর দেশে নোটের আকাল দেখা দিয়েছিল। এরপর ২,০০০ টাকার নোট চালু করা হয়। পরবর্তীকালে ৫০০ টাকার নতুন নোট বাজারে ছাড়া হলেও, ১,০০০ টাকার নোট এখনও ফেরানো হয়নি। ইতিমধ্যে জিডিপি বৃদ্ধি হয়েছে। সেই কারণেই আরও নোট প্রয়োজন হতে পারে বলে মনে করছেন রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ওই কর্তা।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের অন্য এক আধিকারিক জানিয়েছেন, নন-ব্যাঙ্কিং আর্থিক সংস্থাগুলির বিষয়ে অম্বাডসম্যান নিয়োগ করা হবে। সারা দেশেই এই ধরনের সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে ব্য়বস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্ষুদ্র, ছোট ও মাঝারি শিল্পে যাতে সহজেই ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ পাওয়া যায়, সে বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল গঠন করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক।