মুজফফরপুর: পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী পদে ইমরান খানের শপথগ্রহণ অনু্ষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে সে দেশের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার বাজওয়াকে আলিঙ্গন করে নভজ্যোত সিংহ সিধু তাঁর ও অন্য ভারতীয়দের আবেগে আঘাত করেছেন বলে দাবি করে এখানকার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট হরি প্রসাদের আদালতে অভিযোগ দায়ের করলেন সুধীর কুমার ওঝা নামে এক আইনজীবী। পাক সেনাধ্যক্ষকে জড়িয়ে ধরার জন্য সিধুর বিরুদ্ধে দেশদ্রোহিতা ও অন্য অভিযোগে মামলা দায়ের করতে চেয়ে আবেদন করেন তিনি। ২৪ আগস্ট এ ব্যাপারে শুনানি স্থির করেছে আদালত।
ওই আইনজীবী বলেন, যে পাক জেনারেল বাজওয়ার নির্দেশে সীমান্তের ওপার থেকে পাচার করা সন্ত্রাসে ভারতীয় সেনা জওয়ানরা মারা যাচ্ছেন, তাঁকেই গত ১৮ আগস্ট ইমরান খানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পাকিস্তানে গিয়ে আলিঙ্গন করেছেন সিধু। আমাদের জওয়ানদের মু্ন্ডচ্ছেদের জন্যও দায়ী জেনারেল বাজওয়া। সিধুর এই আচরণে দেশের জন্য শহিদ হওয়া জওয়ানদের নিকটাত্মীয়দের বিদ্রূপ করা হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
পাশাপাশি ওই আইনজীবীর অনুযোগ, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ীর প্রয়াণে যখন দেশে রাষ্ট্রীয় শোক চলছে, তখনই পাকিস্তানে ইমরান খানের শপথে উচ্ছ্বাস জানাতে দেখা গিয়েছে সিধুকে। এটা রাষ্ট্রদ্রোহিতা, পাশাপাশি মানুষে মানুষে ঘৃণা ছড়ানোরও সমান। তাই এই গুরুতর বিষয়টি বিবেচনা করে সিধুকে গ্রেফতারির নির্দেশ দেওয়া হোক।
সিধুর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১২৪ এ (রাষ্ট্রদ্রোহিতা), ১৫৩ বি (জাতীয় সংহতির পরিপন্থী আচরণ), ৫০৪ (শান্তিভঙ্গে প্ররোচনা দিতে উদ্দেশ্যমূলক ভাবে অপমান) ধারায় মামলা শুরুর আবেদন করেন তিনি। এইসব ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলে কম করে ২ থেকে ৩ বছরের কারাবাস বা জরিমানা বা একসঙ্গে দুটোই হতে পারে।


এদিকে পঞ্জাবের কংগ্রেস সরকারের মন্ত্রী সিধুর পাক সফর ও পাক সেনাপ্রধানকে আলিঙ্গনে তীব্র আক্রমণ করে শিবসেনা বলল, কাশ্মীরে সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করা পাক সেনাপ্রধানকে জড়িয়ে ধরে ‘চরম নির্লজ্জতা’র পরিচয় দিয়েছেন উনি। পাশাপাশি বিজেপিকেও খোঁচা দিয়ে উদ্ধব ঠাকরের দল বলেছে, আপত্তি উঠলেও, জম্মু কাশ্মীরের বর্তমান পরিস্থিতি সত্ত্বেও পাকিস্তান সফরে যাওয়ায় কেউ সিধুকে দেশদ্রোহী বলেনি, অথচ নোটবন্দির বিরোধিতা বা মোদীর নিন্দা করায় কিছু লোককে দেশবিরোধী তকমা দেওয়া হয়েছে! এর আগে মোদী প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফকে আলিঙ্গন করার পর বলা হয়েছিল, এটা মাস্টারস্ট্রোক। তাহলে এখন শুধু সিধুর নিন্দা করে কী লাভ? উদ্ধবের দলের মুখপত্র সামনা-র সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছে, সিধু এখন কংগ্রেসে আছেন বটে, কিন্তু দীর্ঘদিন ছিলেন বিজেপিতে, সুতরাং বিজেপির ভেবে দেখা উচিত, তাদের ‘সংস্কার’, শিক্ষায় কোথায় ঘাটতি ছিল। প্রধানমন্ত্রী কঠোর ব্যবস্থা নেন বলে দাবি করা হয়। তিনি তো যারা পাকিস্তান যেতে চায়, তাদের এককথায় নিষিদ্ধ করতে পারতেন। সিধুকে খোঁচা দিয়ে শিবসেনা এও বলেছে, ওনার পাকিস্তানের জন্য এত ভালবাসা থাকলে সেখান থেকে ভোটে লড়ুন না। এর মধ্যেই তো ইমরানের দলের থেকে পার্লামেন্ট সদস্যের কাছ থেকে ওদেশে ভোটে লড়ার অফারও পেয়েছেন।
রাহুল গাঁধী এখন সিধুর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন কিনা, জানতে চেয়েছে শিবসেনা। তাদের অভিযোগ, দেখে মনে হচ্ছিল, ইমরানের শপথ অনুষ্ঠানের অতিথি নন, সিধু নিজেই তার আয়োজক। সিধু না গেলেও ইমরানের শপথ গ্রহণ হত। ওঁর আচরণ রাহুল গাঁধীর অবস্থা দুর্বল করে দেবে।