কলকাতা: করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে ফের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এই চিঠিতে সরকারি কর্মীদের ভ্যাকসিন দেওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি লিখেছেন, ‘কেন্দ্র-রাজ্য সরকারি কর্মীদের জন্য চাই ২০ লক্ষ ডোজ। অবিলম্বে সরকারি কর্মীদের টিকাকরণ করতে হবে।’


এর আগে আজ করোনা পরিস্থিতি নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রী। সেই বৈঠকে তিনি বলেন, ‘যখন সংক্রমণের হার কম থাকে তখনও কঠিন চ্যালেঞ্জ করোনা। সাধারণ মানুষকে করোনা-বিধি সম্পর্কে সচেতন রাখা প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ। টিকা সরবরাহের টাইমলাইন তৈরি করা হয়েছে। এর ফলে টিকাকরণের অনিশ্চয়তা দূর হবে। টিকাকরণের ক্যালেন্ডার নিয়ে প্রচার করা হবে। মহামারী মোকাবিলায় সবসময় সচেতন থাকতে হবে। টিকার অপচয় বন্ধ করাও ভীষণ জরুরি। গ্রামীণ এলাকায় সঠিকভাবে উদ্যোগ নিলে করোনা রোখা সম্ভব। টিম তৈরি করে গ্রামে কাজ করতে হবে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে মা ও শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে চিন্তা রয়েছে। করোনা আক্রান্তের শারীরিক অবস্থা নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে।’


তবে মুখ্যমন্ত্রী এই বৈঠক নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ভার্চুয়াল বৈঠকে ১০ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের ডাকা হয়। সচিবদের নিয়ে আমি উপস্থিত ছিলাম। মুখ্যমন্ত্রীদের ডেকে একটি কথাও বলতে দেওয়া হয়নি। কোভিড নিয়ে বৈঠক কেন এত ক্যাজুয়াল হবে? আমরা মুখ্যমন্ত্রীরা অপমানিত।  মুখ্যমন্ত্রীদের পুতুলের মতো বসিয়ে রাখা হয়েছিল। কেউ ওষুধ-অক্সিজেনের অবস্থা নিয়ে কিছু জিজ্ঞাসা করেননি। আমাদের সরকারের ১০ বছর পূর্ণ হয়েছে আজ। ভাষণে উনি বললেন, করোনা নাকি কমে গিয়েছে। এই অবহেলার জন্যই করোনা বেড়ে গিয়েছিল। প্রধানমন্ত্রী কেন এত ইনসিকিওরড, মুখ্যমন্ত্রীদের কথা কেন শোনেন না? তিন কোটি ভ্যাকসিন দিতে বলেছিলাম, কমিয়ে দিচ্ছে। কেন্দ্র অক্সিজেন দিচ্ছে না, রেমডেসিভির কেন বাজারে নেই? সব কেন্দ্রের হাতে, কোনও রাজ্যকে পয়সা দিচ্ছে না। ৩০ হাজার কোটি টাকা দিলেই, সবাই নিখরচায় ভ্যাকসিন পেত। ১৮ বছরের ছেলেমেয়েরা মরছে, উনি বিল্ডিং বানাচ্ছেন! আবার না বলেন, ঘণ্টা বাজালেই করোনা কমবে! বিহার ভোটের আগে বলেছিলেন, বিনা পয়সায় ভ্যাকসিন দেব। বাংলার ভোটের আগেও একই প্রতিশ্রুতি দেন। এখন মুখ লুকিয়ে পালাচ্ছেন। শুম্ভ-নিশুম্ভের মতো ঔদ্ধত্য দেখাচ্ছেন। ভোটের পর হিংসা দেখতে দল পাঠাচ্ছে, ভ্যাকসিন আনতে পাঠিয়েছে? দেশ এখন অভূতপূর্ব সঙ্কটের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দেশের প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত ক্যাজুয়াল। ওরা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো ধ্বংস করছে। প্রধানমন্ত্রীর ফর্মুলা মানলে, দেশে ভ্যাকসিন দিতে ১০ বছর লাগবে। এখন ৮ কোটি ৬০ লক্ষ ভ্যাকসিন চাইছি’
‘বলেছি কারখানা করতে চাইলে, জমি দেব। আমাকে ভ্যাকসিন দিলে, তিন মাসের মধ্যে সবাইকে দেব। বারবার দুই ভ্যাকসিনের মধ্যে সময়সীমা পাল্টানো হচ্ছে। ভ্যাকসিন নেই বলে বারবার সময়সীমা পাল্টাচ্ছে। চাইলে ওষুধ পর্যন্ত দিচ্ছে না, সবই তো কেন্দ্রের কাছে। আগে বলত সব কা সাথ, এখন বলছে সব ঠিক হ্যায়। দিল্লিতে রাজা বসে এসব বলছে। আমাদের অক্সিজেন কেড়ে অন্য রাজ্যে দেওয়া হচ্ছে। এক-একরকম দামে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে। অক্সিজেনে জিএসটি নেওয়া হচ্ছে। ভেবেছিলাম আমাদের বলতে দেওয়া হবে। আমরা ক্রীতদাস নই। আগের বছর আমফানে কিছু দেয়নি। আকাশ থেকে দেখে টা-টা বাই বাই করেছেন। আবার একটা দুর্যোগ আসছে। বৈঠকে ওয়ান ওয়ে ইনসাল্টেশন, হিউমিলিয়েশন হয়েছে। কয়েকজন ডিএম-কে বলতে দেওয়া হয়েছে, মুখ্যমন্ত্রীদের দেওয়া হয়নি। গঙ্গায় কেন মৃতদেহ ফেলে দেওয়া হয়েছে? বলছে উত্তরপ্রদেশে কিছুই হয়নি। এসব জায়গায় কেন কেন্দ্রীয় দল যায় না? নারদ মামলা নিয়ে প্রতিহিংসামূলক আচরণ। যে ছেলেটা কোভিশিল্ড-ট্রায়াল দিয়েছে, তাকে, সুব্রতদাকে আটকে রেখেছে। সারা ভারতবর্ষে বিজেপির ডিক্টেটরশিপের বিরুদ্ধে লড়াই চাই।’