নয়াদিল্লি: বিশ্বের প্রথম করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরির জন্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে আইসিএমআর। অনেকে এই সময়ের মধ্যে ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে সংশয়ে। তবে তার মধ্যেই ভ্যাকসিন তৈরির বিষয়ে আশাবাদী ভারত বায়োটেক লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ম্যানেজিং ডিরেক্টর কৃষ্ণ এলা। তামিলনাড়ুর মধ্যবিত্ত কৃষক পরিবারের এই সন্তানের ভ্যাকসিন নিয়ে গবেষণায় সাফল্যের জন্য সুনাম রয়েছে। এবার করোনার ক্ষেত্রেও তিনি সুনাম বজায় রাখতে মরিয়া। এক মাসের সামান্য বেশি সময় তাঁর হাতে। এই সময়ের মধ্যে কি করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব? চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন কৃষ্ণ।


একটি সাক্ষাৎকারে কৃষ্ণ জানিয়েছেন, ‘শুরুতে আমার লক্ষ্য ছিল, কৃষিবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করার পর চাষের কাজই করব। কিন্তু আর্থিক সমস্যার জন্য রাসায়নিক ও ওষুধ সংস্থা বেয়ারের কৃষি বিভাগে যোগ দিতে বাধ্য হই। এরপরেই ফেলোশিপ পেয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করতে চলে যাই। আমার ভারতে ফিরে আসার ইচ্ছা ছিল না। কিন্তু মা দেশে ফেরার জন্য চাপ দিতে থাকেন। সেই কারণেই দেশে ফিরে আসি। স্বল্পমূল্যে হেপাটাইটিসের ভ্যাকসিন তৈরি করাই আমার লক্ষ্য ছিল।’

হাওয়াই বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স ও উইসকনসিন-ম্যাডিসন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি সম্পূর্ণ করার পর ১৯৯৫ সালে দেশে ফিরে পরের বছর এই সংস্থা গড়ে তোলেন কৃষ্ণ। তিনি ভ্যাকসিন ও জৈব আরোগ্য বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। ইতিমধ্য়েই জাপানি এনসেফেলাইটিস ও হেপাটাইটিস বি-র ভ্যাকসিন তৈরি করেছে ভারত বায়োটেক। এখন করোনার ভ্যাকসিন ছাড়াও চিকুনগুনিয়া ও জিকা ভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ চলছে। তবে কৃষ্ণর সামনে সবচেয়ে বড় পরীক্ষা ‘কোভ্যাক্সিন’। এই ভ্যাকসিন মানবদেহে পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগের জন্য আগেই ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার অনুমোদন পেয়েছে। গত সপ্তাহে আইসিএমআর-এর ডিরেক্টর জেনারেল ও স্বাস্থ্য গবেষণা বিভাগের সচিব বলরাম ভার্গব এক চিঠি লিখে বলেন, ১৫ অগাস্টের মধ্যেই করোনার ভ্যাকসিন তৈরি করতে হবে। সাধারণভাবে যে কোনও ভ্যাকসিন নিয়ে পরীক্ষার জন্য যতটা সময় লাগে, ভারত বায়োটেকের হাতে সেই তুলনায় অনেক কম সময় রয়েছে। ফলে কীভাবে এত তাড়াতাড়ি দক্ষ ও নিরাপদ ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হবে, সে বিষয়ে চিকিৎসকদের একাংশ সংশয়ে। তবে ভারত বায়োটেকের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আধিকারিক জানিয়েছেন, তাঁরা যত দ্রুত সম্ভব ভ্যাকসিন তৈরির চেষ্টা করছেন। পরীক্ষা সংক্রান্ত পদ্ধতিতে কোনওরকম ফাঁক রাখা হচ্ছে না। প্রোটোকল অনুযায়ী পরীক্ষা চলছে। তবে প্রক্রিয়াগত জটিলতার জন্য যে সময় লাগে, সেটা কমানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

এর আগে ২০১৫ সালে রটাভাইরাসের ভ্যাকসিন তৈরি করে ভারত বায়োটেক। সেই ভ্যাকসিনের সূচনা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ‘রটাভ্যাক’ নামে এই ভ্যাকসিনের এক ডোজের দাম এক মার্কিন ডলার। বিশ্বের অন্যতম স্বল্পমূল্যের ভ্যাকসিন এটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও এই ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে। এবার করোনার ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে ভারত বায়োটেকের হাতে সময় একেবারেই অল্প। তবে অসাধ্য সাধন করার লক্ষ্যেই কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন কৃষ্ণ ও তাঁর সহযোগীরা। ভ্যাকসিন তৈরির ক্ষেত্রে ভারত বায়োটেকের সুনাম আছে। এই সংস্থা বিশ্বের প্রথম টাইফয়েড কনজ্যুগেট ভ্যাকসিন তৈরি করেছে। এই ভ্যাকসিনটিও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। ফলে এবার করোনার ভ্যাকসিন নিয়েও আশা দেখাচ্ছে ভারত বায়োটেক।