নয়াদিল্লি: ‘কোভিডের প্রতিষেধক তৈরি নিয়ে যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী আমাদের বিজ্ঞানীরা। সস্তা এবং নিরাপদ প্রতিষেধক হাতে পাওয়াই এই মুহূর্তে প্রধান লক্ষ্য গোটা বিশ্বের। তার জন্য ভারতের দিকে তাকিয়ে রয়েছে সকলে।’

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে এমনই আশার কথা শোনালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এখন প্রশ্ন একটাই, কবে আসবে সেই দিন? কত হবে দাম? বাজারে এলে ভ্যাকসিনের মধ্যবিত্ত ও গরীবের ধরা ছোঁয়ার মধ্যে থাকবে তো? ভ্যাকসিন নিয়েও কালোবাজারি শুরু হবে না তো? ভারতে সবাইকে কি বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেবে সরকার?

অক্টোবর মাসের শেষে একটি ইংরেজি সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দাবি করেছিলেন, বাজারে করোনার প্রতিষেধক চলে এলে সবাইকে দেওয়া হবে।কেউ বাদ পড়বেন না। কিন্তু মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ জানান, ‘দেশের সব মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে, এমন কথা বলেনি সরকার।’

এই প্রেক্ষাপটে শুক্রবার করোনা নিয়ে সর্বদল বৈঠক শুরু হওয়ার আগে ট্যুইট করে রাহুল গাঁধী বলেন, ‘কতদিনের মধ্যে প্রত্যেক ভারতীয় বিনামূল্যে করোনা ভ্যাকসিন পাবেন, তা আজকের সর্বদল বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট করে দেবেন বলে আমার আশা।’ যদিও এদিনের সর্বদল বৈঠকে সেই প্রশ্নের কোনও উত্তর মেলেনি।

ভ্যাকসিন নিয়ে অবশ্য রাজনীতিটা শুরু হয়েছিল বিহার বিধানসভা ভোটের আগেই! বিহারে ভোটে জিতলে সকলকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়ার কথা ঘোষণা করে বিজেপি। নির্মলা সীতারমন বলেন, ‘করোনাভাইরাসের টিকার গণহারে উৎপাদন শুরু হলেই বিহারের প্রত্যেককে বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে। এটাই আমাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে প্রথম প্রতিশ্রুতি।’

যা নিয়ে শুরু হয় চাপানউতোর। ভ্যাকসিনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়টিকে রাজনৈতিক হাতিয়ার করা হচ্ছে কেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিরোধীরা। সেবারও রাহুল সমালোচনার সুরে ট্যুইট করে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন সকলে করোনা ভ্যাকসিন পাবেন। বিহার ভোটের আগে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, প্রত্যেক বিহারবাসী করোনা ভ্যাকসিন পাবেন। এখন কেন্দ্রীয় সরকার বলছে, কখনওই বলা হয়নি প্রতেককে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে।’ রাহুলের প্রশ্ন, ‘প্রধানমন্ত্রীর অবস্থানটা তাহলে কী?’

সীতারাম ইয়েচুরি ট্যুইট করে বলেছেন, ‘স্বাধীনতার পর থেকে যে সরকারই এসেছে তারা সর্বজনীন টিকাকরণ নীতি মেনেই চলেছে। এ ক্ষেত্রেও সেই নীতি কড়া ভাবে মেনে চলা উচিত। মোদি সরকার তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত তহবিলে যে হাজার হাজার কোটি টাকা হিসাব ছাড়া পড়ে রয়েছে, টিকাকরণে সেই টাকা খরচ করা হোক।’

সূত্রের খবর, এদিনের বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে জানানো হয়, সারা  দেশের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী ও স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত লোকজন মিলিয়ে মোট সংখ্যা প্রায় ১ কোটি। এদের প্রথমে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তারপর পুলিশ, সেনা ও অন্যান্য বাহিনীর জওয়ান মিলিয়ে রয়েছেন আরও ২ কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। অর্থাৎ এই ৩ কোটি করোনা যোদ্ধাকে ভ্যাকসিন দেওয়ার পরই সাধারণ মানুষ তা পাবেন। যদিও প্রধানমন্ত্রী সর্বদল বৈঠকে জানিয়েছেন, কো-মর্বিডিটি থাকলে তাঁদেরও প্রাধান্য দেওয়া হবে ভ্যাকসিন দেওয়ার ক্ষেত্রে।