নয়াদিল্লি: লকডাউনের জেরে দু’মাস ধরে দিল্লিতে আটকে থাকার পর অবশেষে বিহারে নিজেদের বাড়িতে ফিরছেন ১০ জন পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁরা যে কৃষকের কাছে কাজ করেন, সেই কৃষকই উড়ানের টিকিট কেটে তাঁদের বাড়ি ফেরাচ্ছেন। আগামীকাল সকাল ৬টায় পটনার উড়ান ধরবেন এই পরিযায়ী শ্রমিকরা। তাঁরা এপ্রিলে বাড়ি ফেরার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু তখন কোনওভাবেই বাড়ি যেতে পারেননি। এখন তাঁরা উড়ান ধরে বাড়ি যাবেন, সেটা স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে।


লখিন্দর রাম নামে এক পরিযায়ী শ্রমিক জানিয়েছেন, ‘আমি কোনওদিন ভাবতে পারিনি বিমানে চড়ব। আমার যে কতটা আনন্দ হচ্ছে, সেটা প্রকাশ করার ভাষা নেই। আমি যখন স্ত্রীকে ফোন করে বলি, বিমানে চড়ে বাড়ি ফিরব, তখন ও বিশ্বাস করেনি। পরে মালিক বলায় ওর বিশ্বাস হয়। কাল বিমানবন্দরে পৌঁছে কী করতে হবে, সেটা ভেবে আমি কিছুটা স্নায়ুর চাপে ভুগছি।’

লখিন্দর ও তাঁর ছেলে নবীন রাম কাজ করেন দিল্লির তিগিপুর গ্রামের মাশরুম চাষী পাপ্পান সিংহের কাছে। ২৭ বছর ধরে এখানে কাজ করছেন লখিন্দর। দেশের বিভিন্ন শহরে যখন পরিযায়ী শ্রমিকরা খাবার পাচ্ছেন না, বেতন পাচ্ছেন না, হেঁটে বা অন্য কোনও উপায়ে অনেক কষ্ট করে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করছেন, পথেই অনেকে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন, তখন কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন এই কৃষক। তিনি লকডাউনের শুরু থেকেই কর্মীদের থাকা-খাওয়ার দায়িত্ব নিয়েছেন। এবার তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা করেছেন।

পাপ্পান জানিয়েছেন, ‘আমার ১০ কর্মী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহেই ট্রেন ধরে বাড়ি যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারেননি। আমি তাঁদের বাড়ি ফেরানোর জন্য অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের টিকিট পাইনি। তাঁদের হাজার মাইল হেঁটে বাড়ি ফিরতে দেওয়ার ঝুঁকি নিতে পারিনি। কারণ, এতে তাঁদের জীবনের ঝুঁকি ছিল। পথ দুর্ঘটনায় অনেক পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তাই ৬৮,০০০ টাকা দিয়ে উড়ানের টিকিট কেটেছি। বাড়ি ফিরতে যাতে কোনওরকম সমস্যা না হয়, তার জন্য প্রত্যেককে তিন হাজার টাকা করে দিয়েছি। আমি ১০ জনেরই মেডিক্যাল ফিটনেস সার্টিফিকেট জোগাড় করেছি। তাঁরা বিমানে চড়ার মতো সুস্থ। আমিই কাল সকালে ওঁদের গাড়ি করে বিমানবন্দরে পৌঁছে দেব।’