নয়াদিল্লি: টুলকিট সংক্রান্ত মামলার তদন্তের বিষয়ে কোনও তথ্য যাতে সংবাদমাধ্যমের কাছে না পৌঁছয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে দিল্লি পুলিশকে। আজ দিল্লি পুলিশকে এমনই নির্দেশ দিল হাইকোর্ট। ২০১০ সালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক পুলিশের সংবাদমাধ্যম নীতি বিষয়ক যে পরামর্শ দিয়েছিল, তার ভিত্তিতেই সাংবাদিক বৈঠক করতে হবে বলেও নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। একইসঙ্গে সংবাদমাধ্যমকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই মামলা বিষয়ক যে খবর প্রকাশ করা হচ্ছে, তা যেন নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে পাওয়া এবং খতিয়ে দেখা হয়। তবে কোন সূত্র থেকে খবর আসছে, সেটা জানানোর প্রয়োজন নেই। সংবাদমাধ্যমগুলির সম্পাদকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, এই মামলায় অভিযুক্তর অধিকার যাতে কোনওভাবে লঙ্ঘন না হয়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।


এই মামলায় হাইকোর্টে হলফনামা জমা দিয়ে দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, সংবাদমাধ্যমকে কোনও তথ্য দেওয়া হয়নি। সংবাদমাধ্যমে তদন্তের বিষয়ে তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছে বলে যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটি মিথ্যা বলেও দাবি করেছে দিল্লি পুলিশ। এর পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট আজ বলেছে, হলফনামায় যে কথা বলা হয়েছে, সেটা মেনে চলতে হবে দিল্লি পুলিশকে।


আদালতে দিশার আইনজীবী অখিল সিব্বল দাবি করেন, ‘দিল্লি পুলিশ দিশার ব্যক্তিগত হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাট সংবাদমাধ্যমে ফাঁস করে দিয়েছে। এছাড়া পুলিশের হেফাজতে থাকার সময়ে জেরার মুখে তিনি যে কথা জানিয়েছেন, সেটাও প্রকাশ করা হয়েছে। দিল্লি পুলিশের পক্ষ থেকে ট্যুইট করে বলা হয়, দিশা চক্রান্তের সঙ্গে জড়িত। একটি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত ভিডিওতে বলা হয়, তারা দিল্লি পুলিশের সাইবার সেল থেকে দিশাকে জেরা করার বিষয়ে তথ্য পেয়েছে। সংবাদমাধ্যমে দিশা ও গ্রেটা থুনবার্গের মধ্যে হওয়া হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটও ফাঁস হয়ে গিয়েছে। দিল্লি পুলিশই এই তথ্য ফাঁস করেছে। সাংবাদিকরাই বলছেন, তাঁরা দিল্লি পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেয়েছেন। জেরার সময় কী কী প্রশ্ন করা হয়েছে, সেটা একটি সংবাদমাধ্যম জানল কী করে? একটি সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত খবরে বলা হয়, দিশা আতঙ্কিত হয়ে পড়েন, তিনি ট্যুইট ডিলিট করার চেষ্টা করেন, এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ফাঁস হওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই এই খবর প্রচারিত হয়।’


দিল্লি পুলিশের হয়ে অতিরিক্ত সলিসিটর জেনারেল এস ভি রাজু বলেন, ‘আমরা ইচ্ছাকৃতভাবে কোনও তথ্য ফাঁস করিনি। তথ্য ফাঁস করা বেআইনি। তবে কোনওভাবে তথ্য ফাঁস হয়ে যেতে পারে। দিল্লি পুলিশকে কালিমালিপ্ত করার জন্য তথ্য ফাঁস করা হয়েছে। দিশা রবি নিজেই হয়তো তথ্য ফাঁস করেছেন। তিনি যাঁদের মেসেজ পাঠিয়েছিলেন, তাঁদের কাছ থেকেও তথ্য পেয়ে থাকতে পারে সংবাদমাধ্যম।’


দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পর বিচারক প্রতিভা সিংহ বলেন, ‘সংবাদমাধ্যমে এখনও পর্যন্ত যে খবর প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলি আর না দেখানো সংক্রান্ত নির্দেশ দেওয়া যাবে না। এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত শুনানি প্রয়োজন। সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত কয়েকটি ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, দিল্লি পুলিশের যা অবস্থান, তার বিপরীত খবর প্রকাশ করা হয়েছে। ফলে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে, সংবাদমাধ্যমে তথ্য ফাঁস হয়নি।’


এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১৭ মার্চ। সবপক্ষকে আগামী দু’সপ্তাহের মধ্যে বিস্তারিত জবাব দিতে বলেছে হাইকোর্ট।