নয়াদিল্লি:  আর কিছুক্ষণ পরেই উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব-সহ ৫ রাজ্যে ভোট গণনা। সুষ্ঠভাবে ভোট গণনা সম্পন্ন হয় যাতে, তার জন্য সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনা নির্বাচন কমিশনের। গোয়া, মণিপুর, পঞ্জাব, উত্তরাখণ্ড, উত্তর প্রদেশ ও অসমে  ভোট গণনা হতে চলেছে। মোট ৬৯০ টি বিধানসভা কেন্দ্রে হতে চলেছে ভোট গণনা। 


নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে, ''মোট ৬৭১ জন গণনা পর্যবেক্ষক, ১৩০ জন পুলিশ পর্যবেক্ষক ও ১০ জন বিশেষ পর্যবেক্ষকের দল এই পুরো গণনা প্রক্রিয়া সুষ্ঠভাবে সম্পন্ন হয় যাতে, তা দেখার জন্য মাঠে উপস্থিত থাকবেন। এছাড়াও কমিশন দুজন বিশেষ কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে, যাঁরা পুরো গণনা ব্যবস্থা তত্বাবধান করবেন। এঁনারা হলেন, দিল্লি থেকে মীরাট পর্যন্ত একজন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক ও বিহার থেকে বারাণসী পর্যন্ত আরও একজন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক।''


এছাড়াও কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে পুরো গণনা প্রক্রিয়ায় যাতে সবরকম প্রামাণ্য নথি থাকে তার জন্য ২৪ ঘণ্টা সিসিটিভ ক্যামেরার বন্দোবস্ত করা হবে। এছাড়াও স্ট্রং রুমের ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় পুলিশ বাহিনীর পরিচালনায় ত্রিস্তরীয় নিরাপত্তা থাকবে। এছাড়াও অভ্যন্তরীন কর্ডনের ব্যবস্থাও করা থাকবে। 


ইভিএম মেশিন সংক্রান্ত কোনও সমস্যা যাতে না হয়, এছাড়া কোনও রাজনৈতিক দলের তরফে যাতে কোনও রকমভাবে গণনা প্রক্রিয়াকে বিঘ্নিত করার চেষ্টা না করা হয়, তার জন্য জেলা প্রশাসন গণনা হলের চারপাশে নিষেধাজ্ঞামূলক আদেশ জারি করেছে।


রাজ্য রাজনীতির পাশাপাশি এখন নজর রয়েছে উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের দিকেও। রাত পেরোলেই উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব, গোয়া, উত্তরাখণ্ড ও মণিপুরে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণা। এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশের ফল নিয়ে আগ্রহ সবথেকে বেশি। 


গোবলয়ের এই রাজ্যে এবার ক্ষমতায় আসবে কে? সাড়ে তিন দশকের রেকর্ড ভেঙে যোগী আদিত্যনাথ কি দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় ফিরবেন? নাকি অখিলেশের সাইকেলের সামনে থমকে যাবে আদিত্যনাথের বুলডোজার?


প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর ঝোড়ো প্রচারের পর কংগ্রেস কি উত্তরপ্রদেশে দাগ কাটতে পারবে? এমন নানা প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছে উত্তরপ্রদেশের ফল নিয়ে। দেশের মধ্যে সবথেকে বেশি বিধানসভা আসন রয়েছে উত্তরপ্রদেশে। 



তবে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের ফলের গুরুত্ব, শুধু এই রাজ্যে সীমাবদ্ধ নয়। পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, উত্তরপ্রদেশের ভোটের ফলের প্রভাব পড়বে গোটা দেশে। বিশেষ করে, দু’বছর পরই যখন দেশে লোকসভা ভোট। 


গতবছর বাংলার বিধানসভা ভোটের পর থেকেই, লোকসভা ভোটের দামামা বেজে গেছে। বিরোধী-শিবিরে শুরু হয়ে গেছে বিজেপি-বিরোধী মঞ্চ গঠনের তৎপরতা। যেখানে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কখনও দিল্লি গিয়ে, কখনও মুম্বই গিয়ে বিরোধী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।


পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা ভোটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হয়ে প্রচারে এসেছিলেন সমাজবাদী পার্টির সাংসদ জয়া বচ্চন। উত্তরপ্রদেশে অখিলেশ যাদবের দলের প্রচার করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 


 


তবে পর্যবেক্ষকদের মতে, বিরোধীরা তৎপরতা শুরু করে দিলেও, বিজেপির বিরুদ্ধে তাদের কতটা গ্রহণযোগ্যতা তৈরি হয়েছে, তা পরিষ্কার হয়ে যেতে পারে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোটের ফলেই। এই রাজ্যে এবার বিজেপি সমাজবাদী পার্টি-RLD জোট কংগ্রেস এবং বহুজন সমাজ পার্টির চতুর্মুখী লড়াই।


বিজেপি অবশ্য বিরোধীদের কোনও গুরুত্ব দিচ্ছে না। পাল্টা জবাব দিয়েছে তৃণমূলও। সোমবার সি ভোটারের বুথ ফেরত সমীক্ষায় ইঙ্গিত মিলেছে, উত্তরপ্রদেশের ৪০৩টি আসনের মধ্যে ২২৮ থেকে ২৪৪টি আসনে জিতে ক্ষমতা ধরে রাখতে পারে বিজেপি ও তার সহযোগীরা। অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টি ও জয়ন্ত চৌধুরীর RLD জোট জিততে পারে ১৩২ থেকে ১৪৮টি আসনে।


১৩ থেকে ২১টি আসনে জিততে পারে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টি। প্রিয়ঙ্কা গান্ধীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের ঝুলিতে যেতে পারে ৪ থেকে ৮টি আসন। ২ থেকে ৬টি আসন যেতে পারে অন্যদের ঝুলিতে। 


সি ভোটারের Exit poll-এ ইঙ্গিত মিলেছে, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি ও তার সহযোগীরা পেতে পারে ৪১ শতাংশ ভোট। ৩৪ শতাংশ ভোট যেতে পারে সমাজবাদী পার্টি- RLD জোটের পক্ষে। মায়াবতীর বিএসপি পেতে পারে ১৭ শতাংশ ভোট। ৫ শতাংশ ভোট যেতে পারে কংগ্রেসের ঝুলিতে। এবং অন্যরা প্রায় ৩ শতাংশ ভোট পেতে পারে উত্তরপ্রদেশে।


গত কয়েকদিন ধরে এরাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর মুখেও বারবার উত্তরপ্রদেশের কথা শোনা গেছে। গতবছর এরাজ্যের বিধানসভা ভোটে এরাজ্যে কার্যত মুখ থুবড়ে পড়ে বিজেপি। ২০০ আসনের টার্গেট নিয়ে লড়াইয়ে নেমে, সাতাত্তরেই থামে মোদি-অমিত শাহর রথ। 


তারপর একের পর এক বিধানসভা উপনির্বাচন এবং পুরসভার ভোটে ধাক্কা খেয়েছে বিজেপি। অন্যদিকে, দলের অন্দরের কোন্দল প্রকাশ্যে চলে এসেছে। মঙ্গলবারই বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন জয়প্রকাশ মজুমদার।


 


পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ভোটের জন্য বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সেভাবে বাংলার দিকে নজর দিতে পারেননি। ভোট মিটলে তাঁরা আবার বাংলার সংগঠনের দিকে নজর দিতে পারেন। অন্যদিকে, উত্তরপ্রদেশে ভাল ফল হলে, বাংলার হারের ধাক্কা ভুলে, বিজেপি কর্মীরা আবার মানসিকভাবে চাঙ্গা হবেন বলেও মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।