কলকাতা: দক্ষিণ কলকাতার ১,৫৯এ পাম অ্যাভিনিউ। চার রাস্তার মোড়ের এই সাদা নীল সরকারি আবাসনে আজ ব্যস্ততা অন্যদিনের তুলনায় কিঞ্চিত বেশি। সকাল থেকেই একের পর এক ফুলের তোড়া ব্লক এ-র ফ্ল্যাট নম্বর ওয়ানে পৌঁছে যাচ্ছে। নবান্ন থেকে শুভেচ্ছা বার্তা এসেছে সকালেই। জন্মদিনের অভিনন্দন জানিয়ে ‘কমরেড’ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে উপহার পাঠিয়েছেন রবীন দেব। বিকেলে হয়তো সাক্ষাৎ করবেন বুদ্ধবাবুর প্রতিবেশী প্রদীপ ভট্টাচার্য। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ওপরের ফ্ল্যাটেই থাকেন এই  কংগ্রেস সাংসদ।


আজ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ৭৬তম জন্মদিন। কেমন আছেন তিনি? তাঁর আপ্ত সহায়ক তপন দাস খুব স্বল্প কথা ব্যয় করে জানালেন, “আগের থেকে একটু সুস্থ। তবে সেভাবে চোখে দেখতে পারছেন না।” তার আগে অবশ্য দায়িত্বে থাকা প্রহরীর সঙ্গে আলাপে বোঝা গেল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিশেষ ভাল নেই।


গত সেপ্টেম্বরে শ্বাসকষ্টের কারণে দক্ষিণ কলকাতারই একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাঁকে। যদিও সেখানে বেশি দিন থাকেননি তিনি। তাঁর বাড়ি ফেরার নাছোড়বান্দা আবেদনের সামনে কার্যত ‘হার’ মেনেছেন চিকিৎসকরা। হাসপাতালে থেকে চিকিৎসায় তাঁকে রাজি করানো যায়নি। বুদ্ধবাবু বাড়ি ফিরেছেন। তারপর থেকে অন্তরালেই। নিয়মিত চিকিৎসা চলছে, তবে সবটাই দক্ষিণ কলকাতার ১,৫৯এ পাম অ্যাভিনিউ-তে।



১,৫৯এ পাম অ্যাভিনিউ, এখানেই থাকেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

ঘটা করে জন্মদিন উদযাপনে কোনও দিনই তাঁর সায় ছিল না। আজও তার পরিবর্তন হয়নি। ১ মার্চ ২০২০, জন্মদিনে সরকারি আবাসনে তাঁর অনুরাগীদের শুভেচ্ছার ঢল নামলেও তিনি বরাবরের মতো নির্বিকারই। পোষ্য গজা (পাগ, চিনের বিশেষ প্রজাতির কুকুর), স্ত্রী মীরা ভট্টাচার্য, আপ্ত সহায়ক তপন দাস আর বাড়ির কয়েকজন পরিচারিকা, এই কয়েকজন মানুষের মধ্যেই তিনি সীমাবদ্ধ। এসবের বাইরে যে বিষয়টায় আলোকপাত না করলেই নয়, বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আবারও বই লিখবেন। হ্যাঁ, নতুন কিছু নিয়ে ফের ভাবতে বসেছেন এই বর্ষীয়ান কমিউনিস্ট নেতা। মাথায় ঘোরাফেরা করছে চিন্তা ভাবনা।

‘নাৎসি জার্মানির জন্ম ও মৃত্যু’, ‘স্বর্গের নিচে মহাবিশৃঙ্খলা’-র পর এবারের বিষয় তাহলে কী? সাম্প্রতিক সময়ের রাজনীতি? নাকি সিএএ কিংবা এনআরসি-র মতো জ্বলন্ত ইস্যু? কোনও সুস্পষ্ট জবাব না এলেও মীরা ভট্টাচার্য স্রেফ বললেন, “হাসপাতাল থেকে ফেরার পর এখনও সেভাবে হাঁটাচলা করতে পারেন না। কী লিখবেন তা এখনও ঠিক হয়নি, তবে একটা বিষয় মাথায় ঘোরাফেরা করছে।”


বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি। তবে একটা লেটার বক্স আর তাঁর জন্য বরাদ্দ বুলেট প্রুফ গাড়ির ঝলক পাওয়া গিয়েছে। ওই লেটার বক্সে সাদা কালিতে মুখ্যমন্ত্রী লেখার ওপরে একটা সাদা কাগজ সেটে দেওয়া আছে। সেখান কোনও ‘প্রাক্তন’ বা ‘এক্স’ শব্দের বালাই নেই। শুধু লেখা শ্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর তার ঠিক নীচে লেখা চিঠি প্রাপকের ঠিকানা।



বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের নামাঙ্কিত লেটার বক্স।

বাইরে আবাসনের ঠিক বাঁ দিকেই ঠায় দাঁড়িয়ে সেই বুলেট প্রুফ অ্যাম্বাসেডর। যা শেষবার বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে নিয়ে সওয়ার হয়েছিল ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯। বামেদের ব্রিগেডে। এরপর তিনি একবারই চৌকাঠ পেরিয়েছিলেন, সেটাও হাসপাতাল আর হাসপাতাল থেকে বাড়ি।



বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের জন্য বরাদ্দ বুলেট প্রুফ অ্যাম্বাসেডর।