কলকাতা: কীভাবে হয় করোনা-ভ্যাকসিনের ট্রায়াল? তারই সাক্ষী থাকল এবিপি আনন্দ। প্রথম টিভি চ্যানেলের সাংবাদিক হিসেবে শুক্রবার এই ট্রায়ালে অংশ নেন এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি সন্দীপ সরকার। ভ্যাকসিন নেওয়ার সময় এবং তার পরের অভিজ্ঞতা কেমন? শুনুন তাঁর মুখেই।

কলকাতায় নাইসেডে শুরু হয়েছে কোভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল। আর প্রথমবার কোনও টেলিভিশন চ্যানেলের সাংবাদিক হিসেবে, করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে অংশ নিলেন এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি সন্দীপ সরকার।

করোনা-যুদ্ধের শুরু থেকেই, প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় থেকেছেন এবিপি আনন্দর প্রতিনিধিরা। আপনাদের জন্য তুলে এনেছে সব খবর। রাস্তা থেকে...হাসপাতালের বাইরে থেকে...। করোনা যখন ভয়ঙ্কর চেহারা নিয়েছে, তখন তার চিকিৎ‍সা কীভাবে হচ্ছে, তা প্রথমবার এবিপি আনন্দই এক্কেবারে হাসপাতালের ICU থেকে তুলে ধরেছিল দর্শকদের সামনে। সব ধরণের সতর্কবিধি মেনে...। আজ যখন আমাদের শহরে করোনা-ভ্যাকসিনের ট্রায়াল শুরু হয়েছে, তখন সেই ঐতিহাসিক উদ্যোগে অংশ নিতে, এগিয়ে গেলেন এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি সন্দীপ সরকার।

ভয়ঙ্কর করোনা-পরিস্থিতির মধ্যে, প্রতিদিন গ্রাউন্ড জিরোতে থেকে, নিয়মিত আপনাদের জন্য খবর সংগ্রহ করে এনেছেন সন্দীপ। ল্যাবে করোনা-পরীক্ষা কীভাবে হয়, সেই ছবি এবিপি আনন্দর দর্শকদের প্রথমবার দেখিয়েছিলেন সন্দীপ। করোনা যোদ্ধারা যখন হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে ফিরেছেন, সেখানে পৌঁছে, তাঁদের প্রথম প্রতিক্রিয়া তুলে ধরেছেন সন্দীপই। আর আজ যখন করোনা ভ্যাকসিনের ট্রায়ালে স্বেচ্ছাসেবক প্রয়োজন, তখনও এগিয়ে যান সন্দীপই।

সন্দীপ বলছেন, 'আমার নিজের শহরে ট্রায়াল হচ্ছে। বিশ্বব্যাপী করোনা নিয়ে সবাই ভাবছে। তার অংশীদার হতে চেয়েছিলাম। আমার শহরে হচ্ছে কীভাবে হচ্ছে, চাক্ষুষ করা ও তুলে ধরা। ২৫ তারিখ হেল্পলাইন খোলে। সেদিনই নাম নথিভুক্ত করি।'

ভ্যাকসিনের ট্রায়াল কীভাবে হচ্ছে, তা নিয়ে মানুষ অসীম আগ্রহ। এতো শুধু একটা ইঞ্জেকশন ফুটিয়ে দেওয়া নয়! তার আগে পরে রয়েছে এক দীর্ঘ প্রক্রিয়া। এই ভ্যাকসিনের ভালমন্দ সবটা এখনও জানা যায়নি। সেটা জানতেই ট্রায়াল। তাই ভ্যাকসিন দেওয়ার থেকে, স্বেচ্ছাসেবককে আগে সেসব বোঝানোর প্রক্রিয়াটা অনেক লম্বা। নাইসেডে ঢোকার পর সন্দীপকে নিয়ে যাওয়া হয় নির্দিষ্ট একটি ঘরে। তারপর গবেষকরা দীর্ঘ সময় ধরে সন্দীপকে বোঝান, ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কী সতর্কতা, ট্রায়ালে অংশগ্রহণের উপকারিতা ও ঝুঁকি কী কী। ভ্যাকসিন নেওয়ার আগে, বোঝানোর পর্বই চলল প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে। তারপর সম্মতিপত্রে চিকিৎসক এবং সন্দীপের সই করিয়ে, তার একটি কপি দেওয়া হল সন্দীপকে। এবার শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পালা।

রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হল। ৫ এমএ  রক্ত নিলেন অ্যান্টিবডি পরীক্ষার জন্য। সোয়াব নেওয়া হল আরটিপিসিআর পরীক্ষার জন্য। সব শুনে চিকিৎসক ছাড়পত্র দিলেন।

বোঝানোর পর্ব এবং যাবতীয় লেখা-পড়ার পর এবার সন্দীপ ভ্যাকসিনের ডোজ নিতে তৈরি। ট্রায়ালে সফল হলে, এই ভ্যাকসিনই হয়ে উঠবে করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ব্রহ্মাস্ত্র। যাঁদের শরীরে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে বোঝা যাবে, তা করোনাকে আটকাতে সক্ষম কিনা, তাঁদের মধ্যে একজন এবিপি আনন্দর প্রতিনিধি সন্দীপ। এ এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত! দুরুদুরু বুকে কিছুক্ষণের অপেক্ষা। তারপর শীতাতপ বাক্সে আনা হল কোভ্যাকসিনের ডোজ। সিরিঞ্জে ভরে তা সন্দীপের শরীরে প্রয়োগ করলেন চিকিৎসক। অল্প কিছুক্ষণের প্রক্রিয়া। কিন্তু, এর তাৎপর্য বিরাট। আগামীদিনে এই ভ্যাকসিন পরীক্ষায় পাস করলে, এই মুহূর্তই হয়ে থাকবে যুগান্তকারী।

ভ্যাকসিন দেওয়ার পর সন্দীপকে একটি ডায়েরি দেওয়া হয়েছে। আগামী আটদিন কোনও শারীরিক সমস্যা হচ্ছে কিনা, কোনও উপসর্গ দেখা দিচ্ছে কিনা, তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে লিখে রাখতে হবে ডায়েরিতে। ভালভাবে বোঝানো হল। ডায়েরিতে বিভিন্ন নিজেকে কীভাবে পর্যবেক্ষণ করব। কখন কী হচ্ছে, লিখে রাখতে হবে। কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। যন্ত্রণা। লালচে ভাব। ফুলে যাচ্ছে কিনা।শক্ত ভাব হচ্ছে কিনা। জ্বর আসছে কিনা। শীত করছে কিনা। মাথা যন্ত্রণা। বমি বমি ভাব হচ্ছে কিনা। ক্লান্তি আসছে কিনা। পেশিতে যন্ত্রণা। গাঁটে গাঁটে ব্যথা। পয়েন্ট উল্লেখ করা আছে। কখন হচ্ছে। কতক্ষণ থাকছে। আরও কিছু কলাম রয়েছে। এর বাইরের উপসর্গের জন্য। আটদিন পর্যন্ত মেনটেইন করতে হবে।

শুক্রবারের পর সন্দীপকে ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় একটি ডোজ দেওয়া হবে পয়লা জানুয়ারি।