কলকাতা: করোনা মোকাবিলায় দেশজুড়ে চলছে লকডাউন। স্তব্ধ জনজীবন। বেহালার বীরেন রায় রোডের বিখ্যাত লাল বাড়ির ছবিটাও বেশ বিরল! কারণ পরিবারের সদস্যরা সকলেই গৃহবন্দি। খাওয়াদাওয়া করে, সিনেমা দেখে, আড্ডা দিয়েই কাটছে সময়।


গঙ্গোপাধ্যায় বাড়িতে যে দৃশ্য শেষ কবে দেখা গিয়েছে, মনে করতে পারছেন না পরিবারের সদস্যরাই। কারণ, পরিবারের অন্যতম সদস্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে ক্রিকেট কেরিয়ারের শুরুর দিন থেকে এত সফর করতে হয়েছে যে, বাড়িতে টানা থাকা প্রায় হয়ই না। এমনকী অবসরের পরেও ক্রিকেট প্রশাসকের জীবনে তুমুল ব্যস্ততা। প্রথমে সিএবি, তারপর বোর্ডের মসনদ সামলানো। একের পর এক বৈঠক, বিদেশ সফর। স্ত্রী ডোনা গঙ্গোপাধ্যায়ও নাচের অ্যাকাডেমি দীক্ষামঞ্জরী নিয়ে সারাবছর ব্যস্ত। আর কন্য়া সানা মগ্ন থাকেন পড়াশোনায়।

করোনা লকডাউন অবশ্য গঙ্গোপাধ্যায় পরিবারে আচমকাই ছুটির আমেজ নিয়ে এসেছে। বাড়ির বাইরে বেরনো বন্ধ। গল্প-খাওয়াদাওয়াতেই কাটছে সময়।



লকডাউন রোজনামচায় কতটা বদল এনেছে? রবিবার সন্ধ্যায় এবিপি আনন্দকে মোবাইল ফোনে ডোনা বললেন, ‘আমাদের পরিচিত রুটিন পুরো বদলে গিয়েছে। প্রথম কয়েকদিন ভাল লাগছিল। ছুটির আমেজ ছিল। সারাক্ষণের ব্যস্ততা থেকে রেহাই পেয়েছিলাম। কিন্তু করোনা আতঙ্ক ক্রমশ চেপে বসছে।  ভারতে রোগের প্রকোপ যেভাবে বাড়ছে, আশঙ্কা হচ্ছে, চিনের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারব তো আমরা?’

করোনার জেরে নাচের ক্লাস বন্ধ। দীক্ষামঞ্জরীর একের পর এক অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছে। ডোনা বলছেন, ‘নাচের ক্লাস মিস করছি খুব। ১৪ মার্চ ভারতীয় জাদুঘরে দীক্ষামঞ্জরীর বসন্তোৎসব ছিল। ১১ তারিখ থেকে রিহার্সাল ছিল। প্রথম গ্রুপ হিসাবে আমরা অনুষ্ঠান বাতিল করেছিলাম। ১৪ এপ্রিল একটি ব্যাঙ্কের অনুষ্ঠান ছিল। সেটাও বাতিল হয়েছে। এছাড়াও দীক্ষামঞ্জরীর আরও কয়েকটি অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছে। তবে আক্ষেপ নেই। কারণ এই পরিস্থিতিতে প্রাণরক্ষা করাটা বেশি জরুরি। ৪৫ বছরে এরকম পরিস্থিতি কখনও দেখিনি।’



কীভাবে কাটছে সারাদিন? ‘সকালে ঘুম থেকে উঠে নিউজ চ্যানেল দেখছি কিছুক্ষণ। তারপর পোষ্য কুকুর সুগারের পরিচর্যা করছি। ওকে খাওয়ানো, বাড়ির লনেই একটু ঘোরাঘুরি করা ইত্যাদি। প্রচুর সিনেমা দেখছি। দুপুরে খেয়ে একটু বিশ্রাম নিচ্ছি। বিকেলে হয়তো একটু নাচ করছি, সাঁতার কাটছি বা বাড়ির জিমে সময় কাটাচ্ছি। বা কিছুই ভাল না লাগলে ফের সিনেমা দেখে সময় কাটাচ্ছি,’ বলছিলেন ডোনা।

সানার আইএসসি পরীক্ষা চলছিল। লকডাউনের ঠিক আগে মিটে গিয়েছে। ডোনা বলছেন, ‘১১ মার্চ সানার বিষয়ের পরীক্ষা শেষ হয়ে গিয়েছে, এটাই যা স্বস্তি।’ উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে পাড়ি দেবেন সৌরভ-ডোনার কন্যা। ইংল্যান্ডের চারটি কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। মেয়েকে বিদেশে থেকে পড়াশোনা করতে হবে বলে রান্নার তালিম দিতে শুরু করেছেন মা। ডোনার কথায়, ‘সানাকে বলেছি, এরপর পড়াশোনা করতে বিদেশে গেলে একা থাকতে হবে। তাই রান্না শিখে নে। ভাত, ডাল, পোস্ত, চিকেন বানাতে শেখ।’ যোগ করলেন, ‘বাড়িতে সাদামাটা রান্নাই হচ্ছে। ভাত, ডাল, আলু-পেঁয়াজ ভাজা, চচ্চড়ি। রাঁধুনি আসতে পারছেন না। বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা হেঁশেল সামলাচ্ছেন। সানা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে রন্ধনপ্রণালী জিজ্ঞেস করছে। জানতে চাইছিল, মুরগীর মাংস সবুজ হয় কীভাবে। বললাম, ধনেপাতা, কাঁচালঙ্কা বা পালং দিয়ে চিকেনের পদ বানালে সবুজ রং হয়। হলুদ দিলে রং হলদে হয়। তা নাহলে সাদা হবে। ওকে রান্না করে দেখাতে হবে। রাজদাও (স্নেহাশিস গঙ্গোপাধ্যায়) ওকে রান্না শিখতে সাহায্য করছে।’



সারাদিন ধরে প্রচুর সিনেমা দেখছেন। ডোনা বলছিলেন, ‘নেটফ্লিক্সে প্রায় সব সিনেমা দেখে ফেলেছি। আজই ‘আর্টিকল ১৫’ দেখলাম। আগে মোবাইল অ্যাপে সিনেমা সানা দেখত। আমরা অতটা দেখতাম না। এখন সবাই দেখছি। গতকাল দেখলাম ‘দ্য ব্রেক আপ’। যে যার নিজের পছন্দের সিনেমা দেখছি মোবাইলে। যার যে সিনেমা ভাল লাগছে, সেটা অন্যকে দেখতে বলছি। যেমন রাজদা ‘আর্টিকল ১৫’ দেখতে বলেছিল।’

ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকা ওয়ান ডে সিরিজ ও আইপিএল পিছিয়ে গিয়েছে। জাতীয় দলের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা বোর্ড প্রেসিডেন্ট সৌরভের হাতেও অফুরন্ত অবসর। ‘মহারাজকে শেষ কবে এভাবে টানা এতদিন বাড়িতে থাকতে দেখেছি মনে পড়ছে না। ওর সারা বছর ঠাসা সূচি। প্রচুর সফর করতে হয়। তবে এখন সকালে দেরি করে ঘুম থেকে উঠছে। কখনও জিমে যাচ্ছে। বাড়িতেই আছে। সিনেমা দেখছে। আড্ডা মারছে,’ বলছিলেন ডোনা।

করোনা প্রতিরোধে গঙ্গোপাধ্যায় বাড়িতেও নেওয়া হয়েছে সতর্কতা। ডোনা বলছেন, ‘বাড়িতে সকলে বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছি। স্যানিটাইজার ব্যবহার করছি। একে অপরের থেকে একটু দূরত্ব বজায় রাখছি। আমাদের বাড়ি অনেক বড় বলে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। তবে কেউ হাঁচলেই তার আর কোনও উপসর্গ রয়েছে কি না খোঁজ নিচ্ছি। বেশ আতঙ্ক রয়েছে।’ যোগ করছেন, ‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী - করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে প্রত্যেকে অনেক পদক্ষেপ করছেন। ইতিবাচক দিক হল, পুণের এক গবেষক দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করোনা পরীক্ষার কিট আবিষ্কার করেছেন। আমাদের রাজ্যে প্রথম করোনা আক্রান্ত সুস্থ হয়ে উঠেছে। এই সপ্তাহটা আমাদের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি সকলে মিলে দ্রুত এই পরিস্থিতি কাটিয়ে উঠতে পারব।’