নয়াদিল্লি: পুরো বিশ্বজুড়েই আতঙ্ক তৈরি করেছে করোনাভাইরাস। ইতিমধ্যেই বিশ্বে প্রায় সাত হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে এই ভাইরাস সংক্রমণের কারণে। করোনাভাইরাস আক্রান্তদের এখনও কোনও নির্দিষ্ট চিকিত্সা নেই। চিকিত্সকরা বলছেন, এক্ষেত্রে সতর্কতাই সুরক্ষা। এরইমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছেন, আমেরিকা করোনার ভ্যাকসিন পরীক্ষামূলকভাবে প্রয়োগ করেছে। এই প্রয়োগ সফল হলে রোগের চিকিত্সার সংকেত মিলতে পারে।
সারা বিশ্বে এখন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১.৮২ লক্ষ। মৃতের সংখ্যা ৭১৫৮। এখন দেখে নেওয়া যাক, কীভাবে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস এবং এর থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করার উপায় কী?


COVID-19 কী?

করোনাভাইরাসের আনুষ্ঠানিক নাম COVID-19। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠন (হু) এই নাম রেখেছে। হু করোনাভাইরাসকে অতিমারি ঘোষণা করেছে।
কীভাবে ছড়ায় করোনাভাইরাস?
প্রথমে জেনে নেওয়া প্রয়োজন যে, কীভাবে এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে এই ভাইরাস? এর জবাব হল যে, নিশ্বাসের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। কেউ সংক্রমণের শিকার হলে তার হাঁচি-কাশি থেকে রোগ ছড়াতে পারে। আক্রান্ত হাঁচলে বা কাশলে তার সামনে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। এছাড়াও কোনও জায়গাতে এই ভাইরাস পড়লে, সেই জায়গা স্পর্শ করলে সংক্রমণের আশঙ্কা থাকে। যদিও কীটানুনাশক দিয়ে এই ভাইরাস মেরে ফেলা সম্ভব।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের লক্ষ্মণ কী?
এই লক্ষ্মণগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশি, শরীরে ব্যাথা। এছাড়াও কিছু ক্ষেত্রে সংক্রমণের কারে নিউমোনিয়া বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দেখা দিতে পারে। খুব কম ক্ষেত্রেই এই রোগ প্রাণঘাতী হয়। এর লক্ষ্মণের বিষয়ে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে, তা সাধারণ ফ্লু ও সর্দিকাশির মতোই। এমনটা যে কোনও কারুরই হয়ে থাকে। এজন্য এসব লক্ষ্মণ দেখা দিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়ার চেয়ে পরীক্ষা করে নেওয়াটাই সবচেয়ে ভালো। পরীক্ষার ফলে বোঝা যাবে, করোনাভাইরাস সংক্রমণ রয়েছে কিনা। এ জন্য পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে বারবার সঠিকভাবে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিতে হবে। সর্দি-কাশির সময় কনুই দিয়ে নাক মুখ ঢাকতে হবে বা টিস্যু পেপার ব্যবহার করতে হবে এবং ব্যবহারের পর তা ময়লা ফেলার বন্ধ ডাস্টবিনে ফেলে দিতে হবে।আক্রান্ত বা যাঁরা আক্রান্ত হয়েছেন বলে সন্দেহ তাঁদের  থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।
কখন মাস্ক পরতে হবে?
স্বাস্থ্য মন্ত্রক এ ব্যাপারে নির্দেশিকা জারি করেছে। এই নির্দেশিকা অনুসারে, সবারই মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই। মাস্ক ব্যবহার করুন যদি--
• আপনার উপসর্গ (কাশি, জ্বর বা শ্বাসকষ্ট) থাকলে।
• কোনও করোনা-আক্রান্তের সেবা করছেন।
• আপনি একজন স্বাস্থ্যকর্মী এবং শ্বাসজনিত সমস্যা নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করছেন।
মাস্ক পরার সময় খেয়াল রাখবেন--
• মাস্কের প্লিটগুলি এমনভাবে খুলতে হবে, যাতে তার মুখ নীচের দিকে থাকে।
• প্রতি ৬-ঘণ্টা অন্তর বা ভিজে গেলে মাস্ক পরিবর্তন করুন।
• নিজের মুখ, নাক ও চোয়ালের ওপর মাস্কটি ধরুন। নিশ্চিত করুন যাতে মাস্কের দু-ধারে কোনও ফাঁক-ফোঁকর যেন না থাকে।
• মাস্ক যাতে মুখের সঙ্গে সেঁটে থাকে তার জন্য প্রয়োজনে তা ছোট বা বড় করে নিন।
• ডিজপোজেবল মাস্ক কখনই পুর্নব্যবহার করবেন না। ব্যবহারের পর যথাযথ জায়গায় জীবাণুমুক্ত করে মাস্কগুলি ফেলে দিন।
• ব্যবহারের সময় মাস্কে হাত দেবেন না।
• মাস্ক খোলার সময় তার বাইরের স্তরে হাত লাগাবেন না।
• মাস্ক গলা থেকে ঝুলিয়ে রাখবেন না।
• মাস্ক খোলার পর ভাল করে সাবান বা অ্যালকোহল-জাতীয় হ্যান্ড-রাব দিয়ে হাত ধুতে হবে।

শিশুর মধ্যে করোনার লক্ষ্মণ দেখা গেলে কী করবেন?

শিশুর মধ্যে কোনও লক্ষ্মণ দেখা দিলে চিকিত্সা সংক্রান্ত সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। কিন্তু এ কথাও মাথায় রাখতে হবে যে, এখন সময়টা ঋতু বদলের এবং করোনার লক্ষ্মণ ও সাধারণ ফ্লু ও ঠাণ্ডাকাশির লক্ষ্মণ প্রায় একই ধরনের। এ জন্য সতর্ক থাকতে হবে। বারেবারেই হাত ধুতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে এবং হাঁচি-কাশির সময় জরুরি বিষয়গুলি মাথায় রাখতে হবে। সেইসঙ্গে সময় মতো শিশুদের টিকাকরণ করতে হবে। এরফলে শিশুরা ভাইরাস ও ব্যাক্টেরিয়াজনিত রোগ থেকে সুরক্ষিত থাকবে। তবে করোনার লক্ষ্মণ দেখলে প্রকাশ্য না যাওয়াই উচিত, যাতে অন্যদের প্রতি সংক্রমণ ছড়িয়ে না পড়ে।

অন্তঃসত্ত্বা মহিলার থেকে ভ্রুণে করোনাভাইরাস সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা কি রয়েছে?
এ ব্যাপারে কোনও সঠিক কোনও জবাব নেই। এ ব্যাপারে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে। অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের কোনওরকম লক্ষ্মণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে।

করোনা সংক্রমন থেকে সুরক্ষিত থাকতে সাবান কি  উপযোগী?

ইউনিভার্সিটি অফ সাউথ ওলেসের প্রফেসর পল থোরডারসনের দাবি, করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার ক্ষেত্রে সাবান ভালো বিকল্প। তাঁর দাবি, সাবান ভাইরাসের লিপিডকে সহজেই খতম করে দেয়। সাবানে ফ্যাটি অ্যাসিড ও লবনের মতো উপাদান থাকে। ভাইরাসকে একসঙ্গে জুড়ে রাখা থকথকে বস্তু ২০ সেকেন্ড পর্যন্ত হাত ধুলে নষ্ট হয়ে যায়। সাবান ত্বকের গভীরে গিয়ে জীবানু মারে।
বোস্টন মেডিক্যাল সেন্টারের চিকিত্সক নাদিদ মডেলা সতর্ক করে বলেছেন, সাবানই হোক বা স্যানিটাইজার, সঠিকভাবে ব্যবহার না করলে কোনও লাভ নেই।