বেজিং: চলতি জুন মাসে ভারতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের সংখ্যা প্রত্যেকদিনই বাড়বে এবং মাসের মাঝামাঝির মধ্যে আক্রান্তের সংখ্যা দিনে বাড়বে প্রায় ১৫ হাজার। চিনের গবেষকদের তৈরি করোনা অতিমারি সংক্রান্ত আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস মডেল অনুসারে এই পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।
উত্তর-পশ্চিম চিনের গানসু প্রদেশের ল্যানঝাউ বিশ্ববিদ্যালয়ের তৈরি এই মডেল গ্লোবাল কোভিড-১৯ প্রেডিক্ট সিস্টেম ১৮০ দেশের দৈনিক পূর্বাভাস দিয়ে থাকে।


এই গবেষণাকারী গোষ্ঠীর ভারতের ক্ষেত্রে ফোরকাস্ট মডেলে গত ২ জুন ৯,২৯১ জনের আক্রান্ত হওযার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিল। ভারতের সরকারি তথ্য অনুসারে ওই দিন একদিনে সবচেয়ে বেশি- গত ২৪ ঘন্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৮,৯০৯।
বুধবার থেকে এই মডেলে আগামী চারদিনে প্রতিদিন ভারতের নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যার যে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, তা হল যথাক্রমে ৯,৬৭৬, ১০,০৭৮, ১০,৪৯৮ এবং ১০,৯৩৬।
আর একটি উদাহরণ: গত শুক্রবারের তথ্যে ২৮ মে (বৃহস্পতিবার) ভারতে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭,৪৬৭।

এই সংখ্যা তাঁদের পূর্বানুমানের সঙ্গে অনেকটাই মিলে গিয়েছে বলে জানিয়েছেন হুয়াং জিয়ানপিং। তিনি ল্যানঝাউ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলাবোরেটিভ ইনোভেশন সেন্টার অফ ওয়েস্টার্ন ইকোলজিক্যাল সেফটি বিভাগের ডিরেক্টর। এই প্রকল্পের নেতৃত্বে রয়েছেন তিনি।

হুয়াং বলেছেন, ২৮ মে আমরা ভারতে নতুন করে ৭,৬০৭ কোভিড আক্রান্ত হওয়ার পূর্বাভাস দিয়েছিলাম, যা সরকারি পরিসংখ্যানের কাছাকাছি। এক্ষেত্রে যে ত্রুটি রয়েছে, তা খুব শীঘ্রই আমাদের ওয়েবসাইটে আপডেট করা হবে।
১৫ জুনের মধ্যে ভারতে নতুন করে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিন ১৫ হাজারের বেশি করে বাড়তে পারে।
পরপর তিনদিনে ভারতে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮ হাজারের বেশি। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লক্ষ ছাড়িয়েছে।
ওই একই মডেলে আমেরিকায় জুনে প্রতিদিন ৩০ হাজার জনের টেস্ট পজিটিভ হওয়ার পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, ইউরোপের দেশগুলিতে দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা কমবে।
এই চলমান পূর্বাভাস মডেল গত সপ্তাবে অনলাইনে প্রকাশ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে জলবায়ুর প্রভাব, পরিবেশ সংক্রান্ত অবস্থা, জনসংখ্যার ঘনত্ব ও সরকারি সংক্রমণ মোকাবিলা সংক্রান্ত ব্যবস্থাদির কথা বিবেচনার মধ্যে রাখা হয়েছে।
হুয়াং বলেছেন, ভাইরাসের সংক্রমণ জনঘনত্ব, কোয়ারেন্টিন সংক্রান্ত ব্যবস্থা ও পরিবেশ সংক্রান্ত দিকের মতো একাধিক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন বিষয় এক্ষেত্রে ভিন্নভাবে প্রভাব ফেলে।
তিনি বলেছেন, আবহাওয়া সংক্রান্ত বিষয় ভাইরাস ছড়ানোর ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলতে পারে। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার মতো বিষয়গুলির প্রভাব বিবেচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে আমরা মনে করি। তবে অঞ্চলভেদে তার প্রভাব ভিন্ন হতে পারে।

হুয়াং বলেছেন, ভারতে জনসংখ্যা আধিক্য সামাজিক দূরত্ব কমায় এবং তা অতিমারির ছড়িয়ে পড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক। অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় এক্ষেত্রে তাপমাত্রার প্রভাব সীমিত।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সরকার ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করায় ভারতে নতুন করে আক্রান্ত সংখ্যা বাড়বে।
হুয়াং জানিয়েছেন, তাঁদের সিস্টেম প্রকাশের আগে বারেবারে তথ্য যাচাই ও ত্রুটি সংশোধনের কাজ করা হয়েছে। কোভিড-১৯ সংক্রমণ ছড়ানোর ক্ষেত্রে অনেক বিষয় কাজ করে এবং প্রকৃত পরিস্থিতি বিবেচনা করে এক্ষেত্রে সংশোধন ও উন্নতিসাধনের কাজ চালিয়ে যাওয়া হবে।